কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে চাকরির কথা বলে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকার ১৩টি দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে ৫২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র।
সন্তানের চাকরির আশায় ভিটেমাটিসহ সহায় সম্বল বিক্রি করে প্রতিটি পরিবার ৪ লাখ টাকা করে দালালদের হাতে তুলে দেয়ার ৩ মাস অতিবাহিত হলেও চাকরি না পেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলো এখন নির্বাক হয়ে পড়েছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না প্রতারক চক্রের কোনো দালালকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের রাজাহাট উপজেলার হরিশ্বর তালুক গ্রামের ক্ষুদ্র কাঠ ব্যাবসায়ী ময়নাল হকের পরিচয় হয় রংপুর সেনানিবাসের সাবেক গাড়ি চালক আব্দুল মোত্তালেবের সঙ্গে। মোত্তালেব টাকার বিনিময়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার প্রস্তাব দিলে সহজ সরল ময়নাল হক সে ফাঁদে পা দেয়। তিনি এলাকায় সেনাবাহিনীতে চাকরি প্রার্থীদের খুঁজতে থাকে। এর মাধ্যমে সংঘবদ্ধ চক্রের হোতা সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় হয় গোবিন্দগঞ্জের জাহাঙ্গীরের (ছদ্দ নাম সজিব), গজবেদুল (ছদ্ম নাম মেজর কিবরিয়া), রাসেল (ছদ্ম নাম মেজর জাকির) ও পলাশবাড়ির শামীম কবিরের (ছদ্ম নাম আল-আমিন) সঙ্গে।
এরা চার জনেই রংপুর সেনানিবাস এলাকায় ময়নালের সঙ্গে কয়েক দফা যোগযোগের পর সেনাবাহিনীর প্রতিজন সিপাহী পদের জন্য ৪ লাখ টাকা করে দাবি করেন। প্রতি প্রার্থী সংগ্রহের জন্য ময়নালকে ১০ হাজার টাকা দেয়ার চুক্তি হয়।
প্রতারক চক্রটির কথামতো মোত্তালেব তার গ্রামের মো. জেহার আলীর মেয়ে শাপলা আক্তার, পার্শ্ববর্তী নয়াহাট গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম, কিসামত নগরবন্দ গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে সোহেল রানা, সাতভিটা গ্রামের দুলাল হোসেনর ছেলে সাইফুল ইসলাম, হরিশ্বর তালুক গ্রামের আমিনুল হাসানের ছেলে সামিউল আলম, নয়াহাট গ্রামের আব্দুল হামিকের ছেলে আইনুল হক, কিষামত নগর বন্দ গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে রুবেল রানা ও তার আত্মীয় রাজিবপুর উপজেলার খারুভাজ গ্রামের কিশমত আলীর ছেলে বেলাল হোসেনসহ ১৩ জনকে চাকরি দেয়ার কথা বলে দুই /তিন দফায় ৪ লাখ টাকা করে নেয়।
পরবর্তীতে ময়নাল হক ও চাকরি প্রার্থীরা করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিস কুড়িগ্রামের মাধ্যমে কয়েক দফায় হেলাল, সজিব, আল-আমিন, মোছলেউদ্দিনের নামে ২২ লাখ টাকা পাঠায়। এছাড়াও জাহাঙ্গীর (ছদ্ম নাম সজিব) রংপুর সেনানিবাসের সামনের বাজারে চায়ের দোকানে ময়নাল হক ও চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে কয়েক দফায় ৩০ লাখ টাকা নেয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১৩ জনকে নিয়োগপত্র প্রদান করে প্রতারক চক্রটি।
নিয়োগপত্র অনুয়ায়ী গত ২২ জুন প্রার্থীদের ঢাকা কচুক্ষেতের সেনানিবাসে ব্লাড ও শারীরিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। ওই দিন চাকরি প্রার্থীরা ময়নাল হকের সঙ্গে সেনানীবাসে উপস্থিত হলে নিয়োগপত্রগুলো ভুয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয় তারা। তারপর থেকেই প্রতারক চক্রটির সবগুলো মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর কোনো উপায়ান্ত না পেয়ে বাড়ি ফেরেন প্রতারিত হওয়া ১৩ চাকরি প্রার্থী।
সেদিন থেকেই উক্ত প্রতারক চক্রের মোবাইল নাম্বারগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। এ পরিস্থিতিতে চাকরি প্রার্থী দরিদ্র ১৩টি পরিবার এখন সহায় সম্বল হারিয়ে ময়নালসহ ওই চক্রটিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মইনুল হক জানান, এ বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি ময়নাল হক বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। যেহেতু টাকাগুলো কুড়িগ্রাম থেকে পাঠানো হয়েছে, সেহেতু তাকে কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা দায়েরর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।