অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : রাষ্ট্রায়ত্ত প্রায় সব ব্যাংকের মুনাফা কমেছে। বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক। ২০১৩ সালে ১৭৮ কোটি টাকা মুনাফা করলেও ২০১৪ সালে শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকটি শতভাগ নেতিবাচকে নেমেছে। এ সময় ব্যাংকের মুনাফার চিত্র গিয়ে দাঁড়ায় (-৯৮.৩৯) কোটি টাকা। অর্থাৎ লাভ নয়, ওই পরিমাণ অর্থের টান রয়েছে ব্যাংকটির।
মুনাফায় টান পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, রূপালী ও বিডিবিএলেরও। জনতা ১১০০ কোটি, আগে ছিল ১৪৮৫। রূপালী ৩০০ কোটি, আগে ছিল ৩১০ এবং বিডিবিএল ১৭৫ কোটি, আগে ছিল ২৪৮। জানা গেছে, প্রায় অভিন্ন চিত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকেরও কিন্তু ব্যাংটির প্রকৃত চিত্র পেতে একাধিকবার চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে অগ্রণী ব্যাংক ভাল করেছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ জানান, ২০১৪ সালে অগ্রণী ব্যাংক মুনাফা করেছে ১১৪৯ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ১০৬৩ কোটি। এছাড়া বেসরকারি খাতের ৩৯ ব্যাংকের মধ্যে ২৬ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্য মতে, আগের বছরের তুলনায় মুনাফা কমেছে ৩টি ব্যাংকের। তবে এবার সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। গত ২০১৩ সালের তাদের মুনাফা হয় ১ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় ২৬৯ কোটি টাকা বেশি। ২০১৪ সালে এবি ব্যাংক মুনাফ করেছে ৮৯০ কোটি টাকা; যা আগের বছরের তুলনায় ৩৬২ কোটি টাকা বেশি। আগের ২০১৩ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয় ৫২৮ কোটি টাকা। ইউসিবিএল ব্যাংক আগের বছরের ৭১২ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ কোটি টাকা মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। সাউথইস্ট ব্যাংক আগের বছরের তুলনায় মুনাফা ১১৮ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৮৩০ কোটি টাকা। আগের বছরে মুনাফা হয় ৭১২ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংকের মুনাফা ৭৯৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৩২ কোটি টাকা। ন্যালনাল ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৪৫৮ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৮১১ কোটি টাকা। ২০১৩ সাল শেষে ব্যাংকটি ৩৫৩ কোটি টাকা মুনাফা করে। যমুনা ব্যাংকের মুনাফাও আগের বছরের তুলনায় ৩২২ কোটি টাকা বেড়েছে। ২০১৪ সালে ৫২৮ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে ব্যাংকটির; যা আগের বছর ছিল ২৯৬ কোটি টাকা। বছর শেষে প্রাইম ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৫৩ কোটি টাকা কমে হয়েছে ৭১০ কোটি টাকা; আগের বছরে ছিল ৭৬৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৪ সাল শেষে এক্সিম ব্যাংক ৬২৫ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৫৩০ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক ৩৮৬ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংক ৩৮৮ কোটি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২৮০ কোটি মুনাফা করেছে। ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা ৪১৯ কোটি থেকে বেড়ে ৬২৫ কোটি, স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকের ২৯২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪৬৫ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ২০২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২২১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা হয়েছে। তবে কমেছে শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা। আগের বছরের ২৬৯ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। ব্যবসা সমপ্রাসারণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হলেও নতুন কার্যক্রম আসা একটি ছাড়া বাকিগুলো ব্যাংকেরই মুনাফা বেড়েছে। যদিও তা খুবই কম। নতুন ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে মধুমতি ব্যাংক। আগের বছরে ব্যাংকটি ১১ কোটি টাকা মুনাফা করে। এছাড়া ফারমার্স ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের সাড়ে ৫ কোটি থেকে বেড়ে ১৪ কোটি, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৩ কোটি থেকে বেড়ে ১৭ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ২৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪২ কোটি, মেঘনা ব্যাংকের ৯ কোটি থেকে বেড়ে ১৬ কোটি, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৯ কোটি থেকে বেড়ে ৩১ কোটি ও সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের ১৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩১ কোটি টাকা। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের আগের বছরের ৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তবে শুধুমাত্র এনআরবি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ১ কোটি টাকা কমে হয়েছে ২ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংকের এমডি মিজানুর রহমান বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছি। যদিও এটি প্রকৃত মুনাফা নয়। প্রভিশন ও কর পরিশোধের পর প্রকৃত মুনাফা জানা যাবে। তবে চেষ্টা করেছি ভালভাবে অর্থনীতির অগ্রগতিকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যাংকিং করতে। একাধিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা জানান, গতবছরের দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির তুলনায় এবছর পরিস্থিতি ভাল। আশা ছিল আরও ভাল হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার রেশ এখনও কাটেনি। কিছুটা আশা জাগলেও বর্তমানে আশার সঙ্গে আশঙ্কা মাথা উঁচু দাঁড়াচ্ছে বলে জানান তারা।