ঢাকাশুক্রবার , ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রয়াণে গুরুত্ববহ মার্কেজ: জাহেদ সরওয়ার

দৈনিক পাঞ্জেরী
সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৪ ১২:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রয়াণে গুরুত্ববহ মার্কেজ {focus_keyword} প্রয়াণে গুরুত্ববহ মার্কেজ: জাহেদ সরওয়ার                                                                         1গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি নানীর কাছে গল্প শুনে গল্পরাজ্যে বা কাহিনীরাজ্যে প্রবেশ করেছেন। নিজের লেখা সম্পর্কেও বলেছেন, তার লেখা বা কাহিনী বুননে তিনি নানীর গল্পবলার কৌশল ব্যবহার করেছেন যথেচ্ছ। বলতে গেলে মার্কেজের ছদ্মবেশে মার্কেজের মহান নানী আমাদের গত অর্ধশতক ধরে গল্প বলে গেছেন। আমরা যারা শৈশবে নানী বা দাদির কাছে কিচ্ছা কাহিনী শুনেছি তারা জানি এটার আকর্ষণ কি দুর্দান্ত। এই কাহিনী ফাঁদার কারণেই দাদি-নানীর সঙ্গে আলাদা একটা অন্তর্নিহিত সম্পর্ক তৈরি হয়। যা কখনোই বিচ্ছিন্ন হয় না, তদুপরি সারাজীবন সঙ্গ দিয়ে যায়। ফলে সেই দাদি-নানীকে হারানোর যেই ব্যথা, মার্কেজকে হারিয়ে সেই বেদনায় পর্যবসিত জগতের মার্কেজ পাঠক। মার্কেজ কথাসাহিত্যের দাদির মতোই খানিকটা। মার্কেজের গল্প বলার পদ্ধতি আসলে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ান দাদি-নানীদের গল্পের মতোই অলৌকিক তথা ম্যাজিকাল। হতে পারে তা এসেছে বিভিন্ন সংস্কৃতির সংমিশ্রণ থেকে। যেমন রামায়ণ মহাভারত কোরআন হাদিস আরব্যরজনীর গল্পগুলো বা তাদের অপভ্রংশই মূলত আমাদের এশীয় দাদি-নানীদের কাহিনীর ভেতর লুকিয়ে থাকে। ফলে লাতিন আমেরিকার যে শতবছরের রাজনৈতিক অবদমন থেকে সৃষ্ট বাস্তবমিশ্রিত কল্পনা অথবা বাস্তবের কল্পনা হয়ে উঠার যেই নারকীয় সময় তাকে শতভাগ ব্যবহার করতে পেরেছেন গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। বলা যায় লাতিন আমেরিকার স্বাভাবিক পরিস্থিতি। কারণ, গত দুই-তিন শতক ধরে সেখানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ চাষাবাদ করে চলেছে। পুঁজি বানানোর খেলায় নেটিভদের তারা পরিণত করেছে অবদমনের খনিতে। রাজনীতিকে তারা করে তুলেছে তাদের তল্পিবাহকদের এজেন্সি। লাতিন আমেরিকার প্রতিটি দেশেই তারা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে নিজেদের পেটোয়া বাহিনীর মতোই। পরিণত করেছে নিজেদের ভৃত্যে।

ফলে নিজেদের সেনাবাহিনী ও রাজনীতি নিয়ত ব্যবহৃত হয়েছে লাতিন আমেরিকার সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে। নিজেদের দেশের খনিজ সম্পদ তাদের চোখের সামনে তুলে নিয়ে গেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। সাধারণ মানুষ ব্যবহৃত হয়েছে লাঞ্ছিত শ্রমিক হিসেবে। তাদের নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে তারা ছিল চরম বঞ্চিত কিউবা বিপ্লব পর্যন্ত। যদিও এর মাঝখানে খণ্ড খণ্ড প্রচেষ্টা হয়েছে। সাধারণের সেই সব প্রচেষ্টার ওপর নেমে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষিত ভাড়াটে সেনাবাহিনীর গুলি বৃষ্টি। ফলে সব প্রতিবাদ অবদমিত বিদ্রোহ আর রক্তাক্ত বিপ্লবীদের গল্পগাথা এমনভাবে সাধারণীকরণ হয়ে গেছে যে, যাকে আমরা বলছি ম্যাজিক রিয়ালিজম। যা খানিকটা দক্ষিণ এশিয়ার মতোই রক্তাক্ত। ফলে মার্কেজ খুব দ্রুতই বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। শুধু বাংলাদেশেই বা কেন, শোষিত তৃতীয় বিশ্বের লেখকদের প্রতিনিধি হয়ে উঠেন তিনি। কিন্তু সাহিত্যের নীতির প্রশ্নে মার্কেজ কি আদৌ গুরুত্বপূর্ণ লেখক ছিলেন, হলেও তার গুরুত্বের মাত্রা কী রকম সেই প্রশ্ন এসে দাঁড়াবে। মার্কেজের গল্প বলার ধরন বা স্টাইল এতই আন্তরিক ও বিশ্বাসযোগ্য যে, আসলে মার্কেজের পাঠক মানে তার প্রায় বইয়েরই পাঠক। তবে মার্কেজের গল্প বলার পদ্ধতি যতই জনপ্রিয় হোক তিনি হয়ত তার এই শক্তি পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করতে পারেননি।

মার্কেজের কাহিনী পাঠের মুগ্ধতা স্তিমিত হলেই জেগে উঠবে পাঠকের বিচারবোধ। সেটা মার্কেজের জীবনী পাঠেও জানা যায়। তিনি মার্কিন আর  ফ্রেঞ্চ আধুনিকদের প্রচুর লেখা পড়েছেন। দাদিমার কাহিনি বলার পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউরো-আমেরিকান আধুনিকদের যৌনচেতনা। যৌনতাকে প্রায় উপন্যাসেই এত প্রশ্রয় দিয়েছেন যে, যা দ্রুত পর্নের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে উপন্যাসগুলোকে। যদিও উপন্যাসে যৌনতার ব্যবহার হবে না সেটা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। মার্কিন কথাসাহিত্যিক উইলিয়াম ফকনারকে এক সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার উপন্যাসে অতিমাত্রায় যৌনতার প্রয়োগ হয় কেন? তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন ‘আমি নিজে যৌনদক্ষ মানুষ। যৌনতাকে খুবই পছন্দ করি। সেটা উপন্যাসে না আসা অন্যায় হতো না?’ বলাই বাহুল্য মার্কেজের ফকনার প্রীতি জগতখ্যাত। রসিকতা হলেও এখানে লেখা যে আসলে ব্যক্তি লেখকের স্বভাবকেও চিহ্নিত করে দেয় সেটাই বলার বিষয়। দস্তইয়েভস্কি, তলস্তয়, বালজাক, ভিক্তর হুগো, সারভেন্তাসদের মতো প্রথম শ্রেণির লেখক হয়ত মার্কেজ নন। কিন্তু কথাসাহিত্যের পাঠকের দাদিমার মতোই তিনি মিশে গেছেন পাঠকদের রক্তে। মার্কেজের প্রয়াণ আমাদের রক্তে তাকে আরও জীবন্ত করে তোলে।

মার্কেজের সামগ্রিক জীবন থেকে যেই শিক্ষাটা লেখক পাঠক নিতে পারেন সেটা তার জাগ্রত থাকা। সবসময় তার অভিজ্ঞতার দরজা জানালা খোলা রেখেছিলেন তিনি। কঠিন কোনো দর্শনালোচনায় তিনি গল্প বলার কায়দাকানুন নষ্ট করেননি। আর তার মতো সুবিদিত পাঠক একমাত্র কাস্ত্রো ছাড়া আর কেউ আছে কিনা সেটা ফিদেল কাস্ত্রোই সন্দেহ করতেন।

মার্কেজ কিউবার চলচ্চিত্র সংস্থার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চিত্রনাট্য লেখার কর্মশালা নামের একটা প্রোগ্রাম করার নোট দিয়ে একটা বই প্রকাশ করেছিলেন ‘চিত্রনাট্যের কর্মশালা’ নামে। আমার মনে হয় এটা চলচ্চিত্রের শিক্ষার্থীদের জন্য পথপ্রদর্শক হতে পারে। এত সৃজনশীল চিত্রনাট্যের আলোচনা জগতে অন্যকোনো চলচ্চিত্রকারও করেছিলেন কিনা আমার জানা নেই।