কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : বিদায় নিয়েছে ২০১৪। স্বাগত ২০১৫ সাল। নতুন করে আলোর পথ দেখাবে আর সমৃদ্ধ হবে গোটা বাংলাদেশ। সেই প্রত্যাশায় ১৬ কোটি বাঙালির। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো আরো একটি বছর। হারিয়ে গেলে দিনপঞ্জিকা থেকে ২০১৪ সালের দিনগুলি। ভালো কিছুর প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে কুষ্টিয়া।
তবে এ বছরে প্রাপ্তি থেকে হারিয়ে গেছে অনেক কিছুই। এই এক বছরে অনেক কিছুই ঘটেছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ৫০০ মেগাওয়াট হাই ভোল্টেজ ব্যাক টু ব্যাক কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সাব-স্টেশনটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে যাওয়া, ঈদের আনন্দ করতে নৌকায় ভ্রমণে গিয়ে লাশ হয়ে পদ্মায় ভেসে ওঠে একই পরিবারের ৪ জনসহ ১২ জন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে সমালোচনায় আসে।
এছাড়া, ইবির এক শিক্ষার্থী নিহতের জের ধরে বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
পদ্মারর গড়াই নদীতে গোসল করতে গিয়ে সলিল সমাধি হয়েছে কয়েক শিক্ষার্থীর। শহরতলীর বারখাদা এলাকায় পরিত্যক্ত এক কুয়ায় পড়ে ৩ থেকে ৭ বছর বয়সী তিন শিশুর করুণ মৃত্যু কুষ্টিয়াবাসীকে হতবাক করে দেয়। জেনারেল হাসপাতালে ৩ দিনে প্রায় আড়াইশতাধিক কলেরায় আক্রান্তের বিষয় গোপন রেখেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এতোকিছুর মধ্যে থেকেও আনন্দের কথা হচ্ছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এবং গড়াই নদীর উপর সেতু ও কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এবং বাইপাস সড়কটি শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ী ফিরে পেল সেই আগের লাল রং।
স্মরণকালের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে সারাদেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন : এ বছরের পহেলা নভেম্বর ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ৫০০ মেগাওয়াট হাই ভোল্টেজ ব্যাক টু ব্যাক কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সাব-স্টেশনটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে যায়। ফলে বিপযর্য় দেখা দেয় গোটা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায়। দেশ হয়ে পড়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত। ওই দিন ছিল শনিবার। সকাল ১১টা ২৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের সময় হঠাৎ করেই সাবস্টেশনে টেকনিক্যাল ক্রটি দেখা দেয়ার পর বিকট শব্দে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সারাদেশের উৎপাদনে থাকা সব বিদ্যুৎকেন্দ্রও একযোগে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জাতীয় গ্রিডলাইন অকেজো হয়ে পড়ায় দেখা দেয় চরম বিদ্যুৎ বিপযর্য়। সেদিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অন্ধকারে ছিল পুরোদেশ। ঘটনার তিনদিন পর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় তদন্তে আসেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. আহমেদ কায়কাউস এবং মোহাম্মদ হোসেনসহ ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. আহমেদ কায়কাউস ভেড়ামারা সাব-স্টেশনটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ উদঘাটন না করেই পরিদর্শন শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘ব্ল্যাক আউট’ উন্নত অনেক দেশেও হয়েছে। বহু দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু বাংলাদেশে ব্ল্যাক আউটের সময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। আমরা ভালোভাবেই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠেছি।’ সে সময় তিনি বলেছিলেন ‘পাওয়ার সিস্টেমে প্রতি মিলি সেকেন্ডও রেকর্ড করা হয়। এ ব্যবস্থার কোথায় সমস্যা ছিল তা খতিয়ে দেখতেই আমরা উপকেন্দ্র এসেছি। শুধু এখানে নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ এবং সঞ্চালনের কাজ করে বিদ্যুৎ বিভাগ। তিন জায়গাতেই আমরা তদন্ত করবো।’ অথচ তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে বলে জানান দিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
ঈদের আনন্দ করতে গিয়ে সলিল সমাধি : এ বছরের ২৯ জুলাই কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর বৈরাগীরচর এলাকায় ঈদের দিন বেড়াতে গিয়ে ট্রলার ডুবিতে একই পরিবারের ৪ জনসহ ১২জনের সলিল সমাধিতে বেদনায় মুষড়ে পড়ে গোটা জেলার মানুষ।
ঈদের দিন বিকেলে উপজেলার বৈরাগীরচর, তারাগনিয়া ও ছিলিমপুরে এলাকার ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী নিয়ে জেগে ওঠা নতুন চরে একটি ট্রলার নিয়ে ঈদ আনন্দ করতে যায়। এ সময় প্রবল স্রোতে ট্রলারটি ডুবে যায়।
পরে কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা সিভিল ডিফেন্স, জেলা প্রশাসন, বিজিবি সদস্য ও স্থানীয়রা এবং খুলনা থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল উদ্ধার তৎপরতা চালায়।
একে এক ভাসতে থাকে লাশ। লাশের সংখ্য বাড়তে থাকে। দৌলতপুরের বৈরাগীরচর এলাকা থেকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এখানে সেখানে ভেসে ওঠে লাশের সংখ্যা। ঈদের আনন্দই যেন সেসব মানুষদের বাবা-মায়ের সব স্বপ্ন কেড়ে নেয়।
নৌকা ভ্রমণে কেউ বা স্বামী, সন্তান, কেউবা আবার স্ত্রী হারিয়ে শোকবিহ্বল হয়ে পড়ে। নৌকাডুবিতে নিহতের স্বজনদের সবাইকে যেন কোনোভাবেই কেউ শান্তনা দিতে পারছিল না। নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া পপি এখনও তার সেই স্মৃতির কথা ভুলতে পারেনা।
মৃত্যুপুরী যেন গড়াই নদী : শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে গড়াই নদী। রেনউইক যজ্ঞেশ্বর গেটের মধ্য বাগান পাড়ি দিয়ে বাঁধ সংলগ্ন নদীর ধার শহরের মানুষের কাছে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। তবে দর্শনীয় স্থান হিসেবে যতটা না পরিচিত, তার চেয়ে বেশি পরিচিত হয়ে উঠছে মৃত্যুপুরী এলাকা হিসেবে। এ বছরের মাসের তারিখে মানুষখেকো নদীটি কেড়ে নিয়েছে বেশ কয়েকটি তরতাজা প্রাণ। সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেকে নদীতে গোসল করতে নেমে জীবন্ত ফিরে আসেনি।
১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে শহরের রেনউইক যজ্ঞেশ্বর বাঁধ সংলগ্ন গড়াই নদীতে গোসল করতে গিয়ে সজীব (১৯) নামে এক শিক্ষার্থী পানিতে তলিয়ে যান। পরে বিকেলে সাড়ে তার লাশ ভেসে ওঠে। সজিব কুষ্টিয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী ছিলেন। একই স্থানে ২০১২ সালের ২৭ জুলাই কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ফরিদুল হাসান (২০) ও রিফাত মজুমদার (২০) গোসল করতে নেমে জীবন্ত ফিরে আসেননি।
প্রতিদিনই কর্মব্যস্তাতার ফাঁকে একটু আনন্দ উপভোগ করতে রেনউইক বাঁধে পরিবার পরিজন, কেউবা প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে আসেন অনেকে। সেখানে নৌকায় করে নদীতে ঘুরেও বেড়ান। কেউ কেউ আবার নদীতে গোসল করতে নামেন। তবে বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়ার কারণে অনেকেই আর গোসল নামেন না।
রেনউইকের ওই স্থানটিতে গোসল করতে গিয়ে যেন আর কারো করুণ মৃত্যু না হয় এজন্য ওই স্থানটিকে বিপদজনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই বোর্ডটি কবে হারিয়ে গেছে।
কুয়ায় পড়ে ৩ শিশুর মৃত্যু : একই বছরের ১১ নভেম্বর মাসে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বারখাদা ক্যানেলপাড়ার একটি মাঠে পরিত্যক্ত কুয়ায় পড়ে ৩ শিশুর মৃত্যু হয় তারা। পরস্পর চাচাতো ভাই। পরিত্যক্ত একটি কুয়ার পাশে খেলতে গিয়ে ডুবে যায়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যয়ে বিকেলের দিকে লোকজন তিন শিশুকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গোটা জেলার মানুষ শোকাহত হয়ে পড়ে।
ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত ২৫০ রোগী : এ বছরের ২২ আগস্ট এক সপ্তাহ ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে যে ডায়ারিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল।
ডায়রিয়ার ফলে হাসপাতালগুলোতে জায়গা না হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাঁটিয়ে চলছে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় হিমশিম খেতে হয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
তখন ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গঠন করা হয়েছিল উচ্চ পর্যায়ের দুইটি কমিটি। এছাড়াও ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ টিম চিকিৎসা সেবা তদারকির করে।
তখন ডায়রিয়ার ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এই পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে তাৎক্ষণিক তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডারকে মেডিকেল টিম পাঠানোর অনুরোধ করেছিলেন। পরে বিজিবির একটি মেডিকেল টিম নিজেদের ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালের বাইরে খোলা আকাশের নিচে তাবু খাঁটিয়ে চিকিৎসা দেয়া শুরু করে।
কুষ্টিয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন এর আগে এতো রোগী একবারে কখনো হাসপাতলে আসেনি। ঢাকার রোগতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (আইডিসিআর) থেকে একটি টিম এসে কাজ শুরু করে।
তবে হত মাসে জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কুষ্টিয়ার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এর আগে যে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে ৩ দিনে প্রায় আড়াশ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। আসলে সেটি ডায়রিয়া ছিলনা। সেটি ছিলো ‘কলেরিয়া’ দূষিত পানি পানের জন্যই জেলায় ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছিল এবং বিষয়টি প্রচার করলে অনেক সমস্যা হতো তাই বলা প্রকাশ করতে পারিনি।’
কুঠিবাড়ীর লাল রং ও জমি উদ্ধার : শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর লাল টকটকে সুড়কি রং মুছে দিয়ে হলদে সাদা রংয়ে আচ্ছাদিত করা হয়েছিল। দীর্ঘ ৮ বছর পর এ বছরের শেষের দিকে এই কুঠিবাড়ী ফিরে পেয়েছে তার হারানো সেই আসল রং। এর মাধ্যমে রবীন্দ্রভক্তদের মাঝে ফিরে এসেছে স্বস্তি।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর মূল ভবন ও চারপাশের দেয়াল পূর্বের সেই সুড়কি রংয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। প্রায় একশ বছর আগে প্রিন্স দ্বারকানাথ শিলাইদহ কুঠিবাড়ীসহ জমিদারিত্ব কিনে নিয়েছিলেন। সেই থেকে লাল টকটকে সুড়কি রংয়ের কুঠিবাড়ীতে বসেই বংশ পরম্পরায় জমিদারিত্ব চালিয়ে আসছিলেন ঠাকুর পরিবার। পৈত্রিক সূত্রে প্রিন্স দ্বারকানাথের দৌহিত্র বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮১৩ সালের দিকে জমিদারিত্বের দায়িত্ব নিয়ে শিলাইদহে আসেন। এখানে বসেই ‘গীতাঞ্জলী’সহ তিনি সাহিত্যের অনেক মূল্যবান সৃষ্টি রচনা করেছেন। তাই রবীন্দ্র সাহিত্যে শিলাইদহ কুঠিবাড়ী একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে বিবেচিত। ছবিতে, পাঠ্য বইয়ে এমনকি ইন্টারনেটে ত্রিকোণ বিশিষ্ট লাল রংয়ের বাড়ি দেখলেই সকলে ধরে নিত এটি কবিগুরুর শিলাইদহ কুঠিবাড়ী। কিন্ত আশ্চর্যজনকভাবে ২০০৬ সালে কবিগুরুর শত বছরের ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর পূর্বের লাল সুড়কির রং মুছে দিয়ে হলদে সাদা বা অফ হোয়াইট রংয়ে আচ্ছাদিত করা হয়। এতে মর্মাহত হয় বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের রবীন্দ্র ভক্তরা। তাদের অনেক আন্দোলন সংগ্রাম শেষে দীর্ঘ ৮ বছর পর রবীন্দ্র কুঠিবাড়ীর সেই লাল টকটকে রং আবার ফিরে এসেছে। সেই সাথে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে বিগত বিএনপি সরকারের সময় কুষ্টিয়ার শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির ৬ একর জমির উপর বিএনপি নেতাদের প্রভাবশালীদের অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযানে ২টি এনজিও ৩টি বাড়িসহ ৩০টি দোকান ভেঙে দেয়া হয়।
কুঠিবাড়ির সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে আশপাশের ৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা ওই জমির ওপর অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে। আদালতের রায় অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে উক্ত জমি দখলমুক্ত করা হয়। এতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ফেরত পায় তার পুরানো চেহারা।
ইবিতে বাসচাপায় ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় সহিংসতা : কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ক্যম্পাসে বাসচাপায় এক ছাত্র নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা প্রায় ৮০টি বাসে ভাঙচুর, অন্তত ২০টি বাসে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা ক্যাম্পাস। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়। পরে শিক্ষার্থীদের এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে ইবি প্রশাসন। এ বছরের শেষে দিকে নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখ দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এদিকে ভাড়া করা বাসে অগ্নিসংযোগ করার ঘটনায় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার বাস মালিকসহ শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সড়ক অবরোধসহসহ নানান কর্মসূচি নেয়। ফলে উত্তরাঞ্চলের সাথে দক্ষিাণাঞ্চলের মানুষের যোগযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। মানুষের ভোগান্তি চরমপর্যায়ে পৌঁছায়।
শিক্ষার্থী যখন প্রশিক্ষক : দেশের বহুল প্রচলিত দৈনিক পত্রিকাসহ অনলাইন পত্রিকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ও ইবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক সজিবুল ইসলাম সজিবের অস্ত্র প্রশিক্ষণের ছবি প্রকাশিত হওয়ায় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফলে শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষকের এই অস্ত্র প্রশিক্ষণে দেশব্যাপী সমালোচনা ঝড় তোলে। এদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ছাত্রলীগ নেতার কাছে শিক্ষকের অস্ত্র প্রশিক্ষণের ছবি প্রকাশের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমান পদত্যাগ করে।
বিশ্ব জেলা ইজতেমা : দীর্ঘ ২৩ বছর পর কুষ্টিয়ায় হয়ে গেলো বিশ্ব জেলা ইজতেমা। এ বছরের শেষে দিকে ১১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব জেলা ইজতেমা ১৩ তারিখে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। শহরের হাউজিং এলাকার চাঁদাগাড়া মাঠে প্রায় ২০একর জায়গার উপর এক মাস ধরে চটের বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করেন মুসল্লিরা। আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি লাভের আশায় দোয়া করা হয়। এতে বিদেশি মেহমানসহ আশপাশ জেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মুসল্লি অংশ নেয়। ২৩ বছর আগে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে এই জেলা ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।