জাওয়াহিরির ভিডিওবার্তা
ঢাকা: আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি ভিডিওবার্তায় ভারত অঞ্চলে তার সংগঠনের নতুন শাখা খোলার ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এ ঘটনায় বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন নয়। তবে বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন তারা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের জঙ্গি সংগঠন ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোণঠাসা হয়ে পড়া জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে আল কায়েদার বর্তমানে কোনো যোগসূত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে জাওয়াহিরির নামে প্রকাশিত সেই ভিডিওবার্তাটি ভুয়া কি না তাও যাচাই করা হচ্ছে।
শুক্রবার কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্র এ তথ্য জানায়।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ভারতীয় উপমহাদেশের এ অঞ্চলে উগ্র মৌলবাদি গোষ্ঠী সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। তাই স্থানীয় জঙ্গিদের একত্রিত করার কোনো প্রক্রিয়া চলছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভারত ও মিয়ানমারের পদক্ষেপও পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ।
স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবার বলেন, ‘ভিডিওবার্তার ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। বাংলাদেশে আল কায়েদার কার্যক্রম চালানোর ঘোষণায় সরকার বিচলিত নয়। জঙ্গি দমনে সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এখানে জঙ্গিবাদের উত্থানের সুযোগ নেই।’
আগামী সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডিশনাল আইজিপি) একেএম শহিদুল হক বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠন ছাড়াও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। তারা যেন সংগঠিত হয়ে কোনো নাশকতা করতে না পরে সে ব্যাপারে পুলিশ বাহিনী সচেষ্ট রয়েছে।’
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘ওই ভিডিওবার্তার বিষয়টিও আমরা গুরুত্ব দিয়েই খতিয়ে দেখছি। তবে বাংলাদেশে আল কায়েদার তেমন কোনো নেটওয়ার্ক নেই।’
পুলিশ ও র্যাবের কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জাওয়াহিরির ভিডিওবার্তাটি আলোচনায় আসার পর গত বৃহস্পতিবার থেকেই নজরদারি জোরদার করে গোয়েন্দারা। বাংলাদেশে আল কায়েদার কার্যক্রম চালাতে পারে এমন কোনো জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে তারা।
তবে কয়েকটি ইসলামি দল এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ছাড়া কারোরই আল কায়েদার নেটওয়ার্কে জড়ানোর কোনো সম্ভাবনা দেখছে না গোয়েন্দারা। এমন ৪০টি সংগঠনের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানায় সূত্র।
এছাড়া আফগানিস্তানে তালেবানের সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়ে দেশে ফেরা শতাধিক জঙ্গিকেও নজরদারিতে আনা হচ্ছে। এই আফগানফেরত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সন্দেহজনক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে- জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ-হুজি, হিযবুত তাহরীর, হরকাতুল জিহাদ, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসারুল্লাহ সুন্নাহ, শাহাদাৎ আল হিকমা, জামাতুল মুসলিমীন, হিজবুত তাহরীরর, ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুয়াত মুভমেন্ট, আরাকান রোহিঙ্গা ফোর্স, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, আরাকান পিপলস আর্মি, লিবারেশন মিয়ানমার ফোর্স, আরাকান মুজাহিদ পার্টি, রোহিঙ্গা ইনডিপেন্স ফোর্স, রোহিঙ্গা ইনডিপেন্স আর্মি, রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্টআল হারাত আল ইসলামিয়া, তাওহিদী জনতা, বিশ্ব ইসলামী ফ্রন্ট, জুম্মাতুল আল সাদাত, শাহাদাৎ-ই-নুবুয়াত, আল্লাহর দল, ইসলামিক ফ্রন্ট, জামাত আস সাদাত, আল খিদমাত, হিজুবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, মুসলিম মিল্লাত, শরিয়া কাউন্সিল, আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ, দাওয়াতী কাফেলা, হিজবুল মাহদি, বাংলাদেশ সন্ত্রাস বিরোধী দল, আল ইসলাম মর্টিয়ার্স ব্রিগেড, জমিয়তে আহলে হাদিস আন্দোলন, জামিয়াতুল এহজিয়া উতরাজ, হায়াতুর ইলাহা, সত্যবাদ, আনজুমানে তালামিজে ইসলামিয়া, কালেমার জামাত, তানজীর বাংলাদেশ, ফোরকান মুভমেন্ট, সাহাবা পরিষদ, কেতাল বাহিনী, এসহার বাহিনী, আল ফাহাদ, হরকাতুল মুজাহিদীন, মুজাহিদীন-ই-তাজিম, জাদিদ আল কায়দা, আল মারকাজুল আল ইসলামী এবং জামাতুল ফালাইয়া।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, তালিকাভুক্ত এসব সংগঠনের অনেকগুলোর কার্যক্রম বাস্তবে নেই। নেতৃত্বহীন হয়ে বিলুপ্ত হয়েছে কয়েকটি। আবার শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে কয়েকটি। তবে জেএমবি, হুজি, হিজবুত তাহরীররসহ কয়েকটি সংগঠনের শতাধিক জঙ্গি পলাতাক রয়েছে। তাদের বিষয়ে নতুনভাবে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলেও জানায় গোয়েন্দারা।
প্রসঙ্গত, আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি গত বুধবার কথিত এক ভিডিওবার্তায় ভারতে নতুন শাখা খোলার ঘোষণা দেন। ওই বার্তায় জাওয়াহিরি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের গুজরাট, আহমেদাবাদ, কাশ্মীর ও আসামে পর্যায়ক্রমে শাখা খোলার আভাস দেন।