সিলেট প্রতিনিধি : সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত কারান্তরীণ সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী যে কোন সময় বরখাস্ত হতে পারেন। একই মামলায় অভিযুক্ত হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছ বরখাস্ত হওয়ায় এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে পৌর মেয়র গৌছকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদেশের কপি হবিগঞ্জ পৌরসভায় পৌঁছে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ১২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে, সরকার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে লিখিত আদেশের মাধ্যমে ক্ষেত্রমতো মেয়রকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ক্ষেত্রে আইনের ওই ধারাটি কার্যকর হলে ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হতে পারেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব।
কারান্তরীণ হওয়ার আগেই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদকে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তাই তিনিই বর্তমানে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী মেয়র কারান্তরীণ হওয়ার পর বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অবহিতপত্র প্রেরণ করেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তাই মন্ত্রণালয় চাইলে কারান্তরীণ মেয়রকে বরখাস্ত করতে পারবেন। তবে সেটি কেবল মন্ত্রণালয়েরই এখতিয়ার।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেয়র কারান্তরীণ হওয়ার বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় চাইলে মেয়রকে বরখাস্ত করতে পারবে।
তিনি জানান, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দেয়া নির্দেশনাপত্র নিয়ে প্যানেল মেয়র-২ অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ তার কাছে এসেছিলেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মতো কাজ করা হবে।
মেয়র আরিফ বরখাস্ত হয়েছেন কি-না এমন তথ্য জানতে যোগাযোগ করা হয় সিলেট বিভাগীয় নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম এজহারুল হক, স্থানীয় সরকার বিভাগীয় পরিচালক মো. মিজানুর রহমান ও জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলমের সঙ্গে।
নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম এজহারুল হক বলেন, ‘এখানো পর্যন্ত মেয়র আরিফের বরখাস্তের বিয়য়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরশন আইন সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা কেবল পৌরসভাগুলোর বিষয় দেখে থাকি।’
মেয়র আরিফের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সিলেট ল কলেজের সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শুনেছি মেয়র আরিফকে বরখাস্ত করা হতে পরে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হবিগঞ্জ পৌর মেয়র গউছ আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাই তাকে আগে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যার সাড়ে ৯ বছর পর গত ২১ ডিসেম্বর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও পৌর মেয়র গউছসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে সম্পূরক চার্জশিট দেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি মেহরুন্নেছা পারুল।
হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রশীদ আহমেদ মিলন চার্জশিট গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জরি করেন। ২৬ ডিসেম্বর পৌরমেয়র গউছ ও ৩০ ডিসেম্বর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান।