নিজস্ব প্রতিবেদক : দু’হাতে গোটা কয়েক ক্যানোলা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়া ক্ষত। এ অবস্থায় হাত-পা নাড়াতে না পারলেও বিড়বিড়িয়ে যেন কী একটা বলছিলেন দগ্ধ গাড়িচালক মো. আবুল কালাম। একটু এগিয়ে তার মুখের কাছে কান নিতেই শোনা যায়, ‘মায়া (মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া) ভাইরে বইলেন, আমি আর বাঁচমু না। আমারে যেন হে আইসা একটু দেইখা যায়। আর এহানকার ডাক্তারগো যেন একটু কইয়া যায় আমার যত্ন নিতে।’
শনিবার সকালে সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, এভাবেই আর্তনাদ করছেন প্রাইভেটকার চালক মো. আবুল কালাম (৩৩)। শুক্রবার রাত ১১টায় নিউ ইস্কাটন রোডের সেলিম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে পার্কিং অবস্থায় একটি প্রাইভেটকারে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা গাড়ির আগুন নিভিয়ে বের করে আনেন চালক মো. আবুল কালামকে। অবশ্য ততক্ষণে তার শরীরের এক তৃতীয়াংশ আগুনে ঝলসে যায়।
আবুল কালাম বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)। আবুল কালাম বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার রাংতা গ্রামে মৃত আব্দুল হকের ছোট ছেলে। তার মেজ ভাই মো. আবু তালেব কৃষিকাজ করেন। আর বড়ভাই ইব্রাহীমও ঢাকায় গাড়ি চালান। সন্তান দগ্ধ হওয়ার কথা শুনে দুপুরে হাসপাতালে উপস্থিত হন মা সুফিয়া বেগম ও চাচাতো বোন জাহানারা বেগম।
আবুল কালামের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আবুল কালামের শরীরের ৩৩ ভাগ পুড়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে, তার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাই তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে কালামের স্বজনরা অসহযোগিতার অভিযোগ করে বলেন, সবকিছু আমাদেরই কিনতে হচ্ছে। এমনকি সুঁই পর্যন্তও আমাদের কিনতে হচ্ছে। তারপরও এখানকার নার্সরা ঠিকমত রোগীর খোঁজ নিচ্ছে না।
উল্লেখ্য, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের ভাতিজা নাদিম চৌধুরীর গাড়িচালক মো. আবুল কালাম। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার আসা-যাওয়া বেশি। আর অনেক সময় কালামের গাড়িতে করেই চলাফেরা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সে কারণে মায়াকে ভাই হিসেবে সম্মান করেন কালাম।