মগবাজার ফ্লাইওভার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রযুক্তিগত দিক থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ ঝিমিয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালে কাজ শেষ করার কথা। বছর শেষ হওয়ার তিন মাস বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজের এক চতুর্থাংশ সম্পন্ন হয়নি। ফলে রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে মগবাজার-মৌচাক ও মালিবাগ হয়ে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কগুলোয় যানজট লেগেই থাকে। যেন ভোগান্তির অশেষ আধার। ইতোমধ্যে সড়কটি পরিণত হয়েছে মৃত্যুকূপে। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ১০ মিনিটের পথ যেতে লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৭ সদস্যের কমিটি করলেও তাতে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
সোয়া আট কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভারটি বাংলামোটর থেকে মৌচাক এবং চৌধুরীপাড়া থেকে মালিবাগ মোড় হয়ে শান্তিনগর পর্যন্ত অংশ বাস্তবায়ন করছে তমা কনস্ট্রাকশন। আর তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেস থেকে রমনা থানা পর্যন্ত বাস্তবায়ন করছে সিমপ্লেক্স নাভানা নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
২০১৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এক চতুর্থাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দু’টি। মূলত প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজে অগ্রগতি হচ্ছে না।
দেড় বছর আগে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ শুরু হওয়ার পর থেকে রাস্তার দু’পাশে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত ও খানাখন্দের। তার ওপর নির্মাণ কাজে অত্যন্ত ধীরগতির কারণে সড়কজুড়ে লেগে থাকে যানজট। ফ্লাইওভারের খাম্বা স্থাপনের জন্য মাটি খুঁড়ে যত্রতত্র ফেলে রাখায় জায়গা কমে আসছে সড়কের। সামান্য বৃষ্টিতেই এ মাটিতে হাঁটুসম কাদার সৃষ্টি হয়। যানবাহনের চাকার সঙ্গে কাদা ছিঁটকে গিয়ে পথচারীদের জামা কাপড় ও আশপাশের দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যায়। ফুটপাত দিয়ে চলাও দুষ্কর।
সাতরাস্তার মোড়ে রাস্তার মাঝখানে টিনের বেড়া থাকায় যানবাহন ফুটপাতের ওপর দিয়েই চলছে। পথচারীরা হাঁটতে পারেন না এ সড়ক দিয়ে। এছাড়া নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এলোমেলোভাবে সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে যানবাহন দূরের কথা, অনেক সময় পায়ে হেঁটেও রাস্তা পার হওয়া যায় না।
পরিস্থিতি দেখতে প্রায়ই পরিদর্শনে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নানা পদক্ষেপও নেন। ঈদ-উল-ফিতরের আগে মগবাজারের যানজট পরিস্থিতি দেখতে এসে মন্ত্রী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঈদের আগের ৭ দিন ও পরের ৩ দিন কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মন্ত্রীর সেই নির্দেশ মানেনি। তারা ঈদের দু’দিন আগে কাজ বন্ধ করে আবার ঈদের একদিন পরেই শুরু করে।
গত ২০ আগস্ট যানজট ও জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজ তদারকির জন্য ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক মো. কায়কোবাদ হোসেনকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিটির কোনো দৃশ্যমান কাজ হয়নি। ঈদুল আজহা ও দুর্গাপূজায়ও কাজ করবে কমিটি।
আজমিরী পরিবহনের চালক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘একবছর ধরেই সড়কটিতে কাজ চলছে। যানজট নিরসনে মন্ত্রী অনেক নির্দেশ দেন, আমরা খবরে শুনি। বাস্তবায়ন দেখি না। আমরা চাই নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাতে।’
মালিবাগ থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কটির দুই লেনের মধ্যে একটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একটি লেন দিয়েই দু’দিক থেকে যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে লেনটির বিশাল অংশজুড়ে আবার যন্ত্রপাতি ফেলে রাখা হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর এগুতে হয় যানবাহনকে।
বাংলামোটর থেকে মগবাজার পর্যন্ত সড়কটি কিছুটা ভালো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা গলির সামনেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কনটেইনার থাকায় রাস্তাটি সঙ্কুচিত হয়ে গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সড়কগুলোয় আমাদের করার কিছু নেই। ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরুর আগেই সেগুলো আমরা এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর) কাছে ন্যস্ত করেছি। প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাস্তাগুলো এলজিইডিই দেখাশুনা করবে।’
যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম শিমুল বলেন, ‘আমরা সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণ করি। বড় মালবাহী ট্রাক এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করায় বৃষ্টি হলেই রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। প্রাচীর ঘিরে কাজ করতে গেলে যানবাহন চলতে পারে না। এরপরও আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।’
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাজমুল আলম বলেন, ‘কাজ করতে গেলে সমস্যা সৃষ্টি হবেই। আমরা চেষ্টা করছি সে সব কাটিয়ে উঠতে। এলাকায় খালি জায়গা নেই, যেখানে মালামাল রাখা যাবে। আমরা প্রতিদিনই সড়কগুলোয় ইটপাথর দিয়ে ভালো রাখার চেষ্টা করছি।’