সিলেট প্রতিনিধি
ঢাকাই চলচ্চিত্রের ধূমকেতু সালমান শাহ। এসে সবার চোখ ধাঁধিয়ে হঠাৎ চলে গেছেন। কিন্তু মানুষ সেই আলোর ঝলকানিতে আজও চোখ বুঁজে বুঁদ হয়ে আছে। শনিবার তার ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। শুক্রবারই ভক্ত অনুরাগীরা ছুটে গেছেন সিলেটস্থ হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজার সংলগ্ন সালমান শাহর কবর আর জিন্দাবাজারস্থ বাড়িতে।
সন্ধ্যায় সিলেট নগরের জিন্দাবাজারের দারিয়াপাড়াস্থ ‘সালমান শাহ হাউজ’ এ গিয়ে দেখা যায় ভক্তরা ভিড় জমিয়েছেন। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই একবার এসে দেখে যাচ্ছেন সালমান শাহ হাউজ। তার রেখে যাওয়া স্মৃতি দেখে অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন। রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলোতেই সালমান শাহকে খুঁজে ফিরছেন তারা। এরপর দল বেঁধে যাচ্ছেন কবর জিয়ারত করতে।
রফিকুল ইসলাম কামাল নামে এক ভক্ত বলেন, ‘সালমান শাহ আমাদের মাঝে এখনো রয়েছেন। বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি তার আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তায়। চরিত্র রূপায়ণে সাবলীলতা ও নৈপূণ্য এবং কেতাদুরস্ত স্বভাবের সমন্বয়ে সময়কে ছাপিয়ে যেতে পেরেছেন তিনি। তার চোখ, মুখ, চুলের ছাঁট পুরুষের সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে রয়েছে।
এদিকে, সালমান শাহর মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে পারিবারিক উদ্যোগে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। সালমান শাহর মেজ মামা আলমগীর কুমকুম বলেন, ‘শনিবার যোহরের নামাজের পর শাহজালাল (রহ.) মাজারে ফকির-মিসকিনদের খাবার বিতরণ, বাদ আছর মাজার মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মহাফিল।’
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হাজারো ভক্ত অনুরাগীকে হতবাক করে না ফেরার দেশে চলে যান সালমান শাহ। তার মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশ। যদিও মৃত্যুর রহস্যের জট আজও খোলেনি। মৃত্যুর ১৮ বছর পেরিয়ে গেল। কিন্তুর মলিন হননি সালমান, আজও ভক্তদের হৃদয়ে রয়েছেন চির উজ্জ্বল হয়ে।
১৯৭১ সালে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্ম নেয়া এই তারকার বাবার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। মা-বাবার বড় ছেলে সালমান শাহ ওরফে ইমন। দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানা বাড়ি জল্লারপাড়স্থ দারিয়া পাড়ায়; যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’। সালমানের স্ত্রীর নাম সামিরা। খুলনা বয়রা মডেল হাইস্কুল শেষে ১৯৮৭ সালে ধানমণ্ডির আরব মিশন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন সালমান। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং মালেকা সায়েন্স কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন তিনি।
সালমানের ক্যারিয়ার ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে শুরু, এরপর মাত্র তিন বছরে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করে অমর হয়ে গেছেন সালমান শাহ। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে এত হিট ছবি আর কোনো নায়ক দিতে পারেননি। এর মধ্যে ১৪টিতেই নায়িকা ছিলেন শাবনূর। মৌসুমীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবিতে জুটি বাঁধেন তিনি। এছাড়া শাবনাজ, লিমা, শাহনাজ, শিল্পীর সঙ্গেও জুটি বেঁধেছিলেন।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রভুবনে এই ক্ষণজন্মার আগমনটা অনেকটা ধূমকেতুর মতো। সিলেটের শাহজালাল মাজারের পাশেই সালমানের সমাধি। তার কবরের সামনে এখনও প্রতিদিন ভিড় হয়। এখনো তার পাগলপারা কোনোও ভক্তের বুকের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে ওঠে মাজার প্রাঙ্গণ।