স্পোর্টস ডেস্ক : অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। এমন খবর ছিল দুই দিন ধরে। আশা ছিল চিরচেনা আবাহনী প্রাঙ্গণে ফিরে আসবেন সুস্থ হয়ে। কিন্তু না, তিনি আসবেন ঠিকই, নিথর- প্রাণহীন দেহে। সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন বাংলাদেশের হকি ইতিহাসের কিংবদন্তী সাবেক তারকা খেলোয়াড় জুম্মন লুসাই। আজ রোববার বেলা তিনটা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
সন্ধ্যা ৬টায় আবাহনী ক্লাবে তার মরদেহ নেয়া হবে।
দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা হকি তারকা বলা হয় তাকে। সিলেটের জুম্মন লুসাই হিসেবে সমধিক প্রসিদ্ধ হলেও এশিয়া ছাড়িয়ে বিশ্ব হকি অঙ্গনে ছিল তার নামডাক।। যার নামের আদ্যোপান্ত জুড়ে রয়েছে খ্যাতি। আশির দশকে আন্তর্জাতিক হকি অঙ্গনে মাঠ কাঁপানো হকি খেলোয়াড় ছিলেন তিনি।
তার অসাধারণ নৈপুণ্যের কারণে ১৯৮৫ সালে জুম্মন লুসাই বিশ্ব হকি একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন। এ অনন্য কীর্তি তাকে বসিয়েছে সম্মানের উচ্চ শিখরে। জুম্মন লুসাই ছিলেন অনেক খেলোয়াড়ের স্বপ্নের নায়ক। তিনি খেলতেন ডিফেন্সে। দীর্ঘদিন জাতীয় হকি দলে খেলেছেন তিনি। ছিলেন ফুলব্যাক খেলোয়াড়। বাংলাদেশের হকিতে পেনাল্টি কর্নারের জন্য পারদর্শী (স্পেশালিষ্ট) বলা হতো তাকে।
জুম্মন লুসাই বাংলাদেশের প্রথম হ্যাট্রিকম্যান। ঢাকায় ১৯৮৫ সালে দ্বিতীয় এশিয়া কাপ হকিতে ইরানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। ১৯৮৯ সালে শেষবার জাতীয় দলে খেলেছে এশিয়া কাপ হকিতে। দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি খেলেছেন দেশের অন্যতম শক্তি আবাহনীর হয়ে।
জুম্মন লুসাইয়ের পরিবার এক ঐতিহ্যবাহী হকি পরিবার। তাদের পরিবারে বেশ কজন হকি খেলতেন। ছোট ভাই জুবেল লুসাই হকি খেলেছেন আবাহনীর জার্সি গায়ে। জুম্মন লুসাইয়ের বিয়াই রামা লুসাই সতের নম্বর জার্সি গায়ে সমান তালে হকি এবং ফুটবল খেলেছেন মোহামেডানে। সিলেটে আদিবাসি লুসাই পরিবারে জন্ম নেয়া জুম্মন লুসাই জীবন ধারণ করেছেন খুবই সাদাসিধে।
তার খেলার জীবনে ১৯৮৫ সালে করাচিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলেছিলেন। হকি ফেডারেশনের ৪০ বছর পূর্তিতে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। এছাড়া দেশের মূল জন স্রোতের বাইরের একজন প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের জন্য অনেক সম্মান বয়ে এনেছেন জুম্মন লুসাই। সব সময় চেষ্টা করেছেন মানুষকে শেখাতে।
তার মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।