নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল থেকে পুলিশের পাহারায় দূরপাল্লার কিছু কিছু বাস চলাচল করছে। তবে এসব রুটে অভিজাত কোনো পরিবহন তাদের বাস চালাচ্ছে না। চলছে ‘সি’ গ্রেডের লক্কর-ঝক্কর পরিবহনের বাস।
বুধবার সকালে সরেজমিনে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনাল ঘুরে এমনটাই দেখা যায়।
দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের বৃহত্তম গাবতলী বাসটার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতো আজ টার্মিনাল প্রাঙ্গণে যাত্রীদের তেমন উপস্থিতি নেই। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টার্মিনালে যাত্রীদের আনাগোনা ক্ষাণিকটা বাড়তে দেখা যায়। মটর শ্রমিকদের দেখা গেছে অলস সময় কাটাতে।
গাবতলী টার্মিনালের বাস কাউন্টারগুলোতে কথা বলে জানা যায়, হরতাল থাকলেও সকাল থেকেই গাবতলী বাসটার্মিনাল থেকে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদাহ, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব এলাকার বাসই ছেড়ে গেছে। তবে একে ট্রাভেলস, হানিফ পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, ঈগল পরিবহনের মত অভিজাত কোম্পানির বাসগুলো ছাড়ছে না। চলছে সূবর্ণা, পূর্বাশা, সৌহার্দ পরিবহন, সুমন পরিবহন, ফাতেমা পরিবহন, সততা পরিবহন, রাজধানী পরিবহনসহ ‘সি’ গ্রেডের লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাস।
হানিফের কাউন্টার মাস্টার দাউদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আজতো আমরা গাড়ি ছাড়বোই না, কালও ছাড়া হবে কি না সন্দেহ। কারণ সরকার বলছে গাড়ি পোড়ালে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। কিন্তু আমাদের গাড়ির যে দাম, সে তুলনায় সরকারের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ খুবই কম।’
ঢাকা- কুষ্টিয়া- ঝিনাইদহ রোডে চলাচলকারী এসবি পরিবহনের গাবতলী কাউন্টার মাস্টার আকরাম হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আজ তাদের গাড়ি চলছে না। তবে কাল থেকে চলার সম্ভাবনা আছে।
হরতালের মধ্যে চলাচলকারী সৌহার্দ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার নাসিরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই যাত্রী আসছে। তাই আমরা গাড়ি ছাড়ছি। তা ছাড়া মহাসড়কে পুলিশ রয়েছে।’
রাজবাড়ি রুটে চলাচলকারী সততা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার বাবলু জানান, তাদের মালিকের নির্দেশ থাকায় তারা গাড়ি চালাচ্ছে। তবে তাদের গাড়িগুলো চেয়ার কোচ না।
রাজবাড়ী যাওয়ার জন্য সকালে গাবতলী টার্মিনালে আসা যাত্রী ফারুকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে চলাচল করতে তো ভয় লাগেই। কিন্তু কি করবো, খুবই জরুরি কাজ। তাই চলে এলাম। সাড়ে দশটার সততা পরিবহনের টিকিট কেটেছি।’
এদিকে হরতালের মধ্যে গাবতলী টার্মিনাল ও এর আশপাশের এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে, টেকনিক্যাল মোড় ,মাজার রোড, গাবতলী গরুর হাটের সামনে বেশি সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা হয়।
এসময় হরতালের দায়িত্বে থাকা দারুসসালাম থানার এসআই জামাল জানান, সকাল থেকে গাবতলী এলাকায় কোনো সহিংসতা ঘটেনি। তেমন কোন মিছিলও লক্ষ্য করা যায়নি।
মহাখালী : গাবতলীর মতই মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকেও দূর পাল্লার দু’ একটি গাড়ি পুলিশি পাহাড়ায় ছেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি যাত্রীদের উপস্থিতি কম।
মহাখালী বাসটার্মিনালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজিজুল হাকিম বলেন, ‘সকাল থেকেই দু’ একটি গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ইমাম পরিবহন, আলম-এশিয়া, শ্যামল বাংলাসহ বেশ কিছু পরিবহন পুলিশ পাহারায় ছাড়া হয়েছে। তবে কিছুটা আতঙ্ক থাকার কারণে যাত্রী কম।
এদিকে বার্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তথ্য মতে, মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা হতে বুধবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ৬টা পর্যন্ত বিজিবি, র্যাব ও পুলিশি নিরাপত্তায় দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে আনুমানিক ৬৬ হাজার ২৬২ টি বাস/ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান গমনাগমন করেছে। এছাড়াও পথিমধ্যে বিপুল সংখ্যক বাস ও পণ্যবাহী গাড়ী নিরাপত্তা বহরের সাথে যুক্ত হয়ে নিকট দূরুত্বে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে গমন করেছে। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৬৪টি তেলবাহী ট্যাংকার চলাচল করেছে বলেও বিজিবি সূত্রে নিশ্চিত করা হয়।
উল্লেখ্য, সারা দেশে চলমান অবরোধের পাশাপাশি ঢাকা ও খুলনা বিভাগে আজ বুধবার ভোর ছয়টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়েছে। খুলনার দুই জেলা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে হরতাল হবে ৩৬ ঘণ্টা। মঙ্গলবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ হরতালের কথা জানানো হয়।