ঢাকাবুধবার , ৯ ডিসেম্বর ২০২০
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভ্রাম্যমাণ আদালতের ২ হাজার ১৪৫টি মামলার পরও
অভিনব কৌশলে নকল ওষুধে বাজার সয়লাব

দৈনিক পাঞ্জেরী
ডিসেম্বর ৯, ২০২০ ৩:৫১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

এস এম বদরুল আলম : র‌্যারের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ওষুধ প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির বিরুদ্ধে গত ১ বছরে ২ হাজার ১৪৫টি মামলা দায়ের করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ঐ সময় ১২ কোটি ৪১ লাখ ৬ হাজার টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়। আর ৩৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। সিলগালা করা হয় ৪৪টি প্রতিষ্ঠান। জব্দ করা হয় প্রায় ৩২ কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধ এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় ৪৭ কোটি টাকা মূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়। সরকারের এতসব নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও ওষুধ নকল ও ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হচ্ছে না। বরং ঐসব অসাধু চক্র অভিনব কৌশল অবলম্বন করে নকল ওষুধ বাজারে ছাড়াচ্ছে। দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইউনানী ওষুধ কোম্পানি ২৬৬টি এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানি ২০৫টি, হোমিও ৭৫টি, হারবাল ২৫টি। এর মধ্যে অনেক কোম্পানির লাইসেন্স নবায়ন নেই। পাশাপাশি নেই ওষুধের ট্রেড নামের অনুমোদন ও চূড়ান্ত লেভেল কার্টুনের অনুমোদন। তারপরও বছরের পর বছর কোন কিছু তোয়াক্কা না করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী কিছু কোম্পানি ফর্মুলা অনুযায়ী ওষুধ তৈরি করলেও বেশিরভাগ কোম্পানি ফর্মুলার বাইরে গিয়ে অতি মুনাফার লোভে নানা ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
পেশাদার ডিগ্রিধারী হাকিম কবিরাজদের স্থান দখল করেছে কেমিস্টরা। সম্প্রতি ফরিদ, মুয়াজ্জেলিনসহ কয়েকজন কেমিস্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। যারা হার্বসের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট কেমিক্যাল ব্যবহারের নিয়ম বাতলিয়ে থাকে। তবে এখন অনেক হাকিম কবিরাজও কেমিক্যাল বিদ্যা রপ্ত করে অসৎ কাজে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কঠোর পদক্ষেপের মধ্যেও নকল ও ভেজাল ওষুধের কারবার থেমে নেই। নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে নকল ওষুধ বাজারে ছাড়ছে অপরাধীরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিম্নবর্ণিত এসব কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সত্ত্বেও তারা বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির কতিপয় অবৈধ সুবিধাভোগী অসাধু কর্মকর্তারা উল্লিখিত ঔষধ কোম্পানির মালিকপক্ষের কাছ থেকে নিয়মিত অবৈধ সুবিধা নিয়ে ঐ সমস্ত কোম্পানির ঔষধসমূহ মানসম্মত বলে রিপোর্ট প্রদান করে থাকে। ফলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মাঠপর্যয়ের কর্মকর্তারা বাজার থেকে যে সকল ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে গুনগত মান যাচাইয়ের জন্য। নমুনাসমূহ ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে প্রেরণ করে ৬/৯ মাস অপেক্ষা করেও নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পায় না। ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির ওই সকল দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাথে নকল ভেজাল ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের সাথে নমুনা প্রতি মোটা অংকের অর্থের চুক্তি থাকায় প্রায় সব নকল ভেজাল ঔষধ কোম্পানির ঔষধসমূহ রাতের আঁধারে মানসম্পন্ন বলে রিপোর্ট পেয়ে যায়। মাঝেমধ্যে কিছু কোম্পানির ঔষধসমূহ সাব-স্ট্যান্টার্ড বলে রিপোর্ট প্রদান করে থাকে, যা উপরিমহলের আইওয়াস মাত্র। এ ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে যে সমস্ত কোম্পানি নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাতের শীর্ষে রয়েছে, সেই সকল কোম্পানির বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশিত হলো।
গাজীপুর বোর্ড বাজার এলাকার বড় বাড়ি নামক স্থানে আল-সাফা ফার্মাসিউটিক্যালস, ন্যাচার ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) লি., মেসার্স শেড ফার্মাসিউটিক্যালস আয়ুর্বেদিক, এস এ ল্যাবরোটরীজ (ইউনানী), বগুড়ার সবুজ ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী), এবি ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু), দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু), নারায়ণগঞ্জের সুরমা ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী), জুরাইনের অনির্বাণ ফার্মাসিউটিক্যালস, নারায়ণগঞ্জের বিসমিল্লাহ ল্যাবরোটরীজের (ইউনানী), পাবনার ইমপোল (ইউনানী) ল্যাবরেটরীজ, রাজধানীর যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইলে মডার্ন হারবাল, ঈশ্বরদী পাবনার ন্যাচারাল আয়ুর্বেদিক ল্যাবরেটরীজ, ম্যানসন্স ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী), ঢাকার ডীপলেইড ফার্মাকো (হোমিও), গাজীপুরের জেবিএল ড্রাগ ল্যাবরেটরীজ (ইউনানী), বগুড়ার বিজি ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, পাবনার ইউনিফিল ফার্মাসিউটিক্যাল (ইউ), রেমেক্স ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, কিউব ফার্মাসিউটিকাল ইউনানী, নিকো আয়ুর্বেদিক, জনতা ড্রাগ ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, আরকে ইউনানী, এডল্যাব ফার্মাসিউটিক্যালস আয়ু, ইউনিজেম ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনানী, সিকো ফার্মাসিউটিক্যাল (ইউ), ফেয়ার ল্যাবরেটরিজ ইউনানী, ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস ল্যাব: ইউনানী, পিএম ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, নিরাময় ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, ফার্মাজেম ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, রেডরোজ ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, ইউনিকেয়ার বাংলাদেশ ইউনানী, ইউনিয়ন ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, উত্তরা ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, ইষ্টল্যান্ড ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, লিবারেট ল্যাবরেটরীজ আয়ু, এমএম ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু), দি ওরিয়েন্ট ল্যাবরেটরীজ আয়ু, রাজশাহীর এলটি ল্যাবরেটরীজ (আয়ু), রাজধানীর হাইম্যাক্স ইউনানী ফার্মাসিউটিক্যালস, ময়মনসিংহের ফার্স্ট ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু), গাজীপুরের জেবিএল ড্রাগ ল্যাবরেটরীজ (ইউনানী, ঝিনাইদাহের প্রজ্ঞা ল্যাবরেটরীজ (আয়ু), নোয়াখালীর ইউনিক ফার্মা আয়ুর্বেদিক, লাইসেন্স নং-৮৭, আকসা ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনানী, লাইসেন্স নং-২৯৪, আরিভা ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, লাইসেন্স নং-২৫৫, কুমিল্লার এনসি ল্যাবরেটরীজ আয়ু, বি-বাড়িয়া রিকন ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, লাইসেন্স নং-৩০, নারায়ণগঞ্জের সেফটি হেলথ ইউনানী ল্যাবরেটরীজ, লাইসেন্স নং-১২৮, ঢাকার বাবু বাজারের ইউনিক ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, লাইসেন্স নং-২৭২, কুষ্টিয়ার বৃক্ষ ইউনানী ল্যাবরেটরীজ, লাইসেন্স নং-৫০, সাভারের জীনি ইউনানী ল্যাবরেটরীজ লি., লাইসেন্স নং-১৩, রংপুরের ইকো ল্যাবরেটরীজ ইউনানী, লাইসেন্স নং-২২৪, সাভারের কে.ইউ ফার্মাসিউটিক্যাল আয়ু, লাইসেন্স নং-১৩৮।
ময়মনসিংহের নকল ও ভেজালকারী মো. কামরুল ইসলাম যুবদল, বিএনপি ও সমন্বিত সড়ক পরিবহনের নেতা বলে পরিচয় দেয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানীর লেভেল কাটুন নকল করে ঔষধ উপাদন করে আসছে বলে সুত্র মতে জানা যায় । যার মধ্য রয়েছে জেসি আই, সবুজ ফার্মাসিউটিক্যাল, জেনিয়াল ইউনানী, প্রিভেন্টিস বাংলাদেশ ইউনানী, এমী ল্যাবরেটরী আয়ু, কনফিডেন্স ফার্মাসিউটিক্যাল (আয়ু), ভিগো ল্যাবরেটরী, একরাম ল্যাবরেটরীসহ বিভিন্ন কোম্পানীর ঔষধ, যা সরাসরি স্টার মেডিকেল হল, রনি মেডিকেল হল, জয়দেব মেডিকেল হল, পারুল মেডিকেল হল, একতা ফার্মেসী, কামরুল মেডিকেল হল, সায়মন ড্রাগস, শিরিন মেডিকেল হল, গৌরঙ্গ বাজার কিশোরগঞ্জের উজ্বল হোমিও হলে সরাসরি বিক্রয় করছে, এছাড়া ময়মনসিংহের দূর্গাবাড়ি কামরুলের নিজের দোকান সৃজন ফার্মেসীতে সরাসরি নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রয় হচ্ছে। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা ঔষধ তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মালিকগণ অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গাজীপুর বোর্ড বাজার এলাকার বড় বাড়ি নামক স্থানে আল-সাফা ফার্মাসিটিকেল উইনানী এবং পাওনিয়ার উইনানী নামক একই মালিকের দুইটি কোম্পানীতে উৎপাদিত হচ্ছে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ, যার মালিক আতাউর রহমান ও তার ছেলে সাইফুল ইসলাম। বাপ-বেটা মিলে বিভিন্ন ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক ঔষধ কোম্পানীর ঔষধসমূহ নকল করে বাজারজাত করছে। বোর্ড বাজার এলকায় আল-সাফা দাওয়াখানায় গেলে বিভিন্ন প্রকার নকল ভেজাল ইউনানী-আয়ুর্বেদিক ঔষধ পাওয়া যাবে। কুনাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত আল-সাফা ও পাওনিয়র ল্যাবরেটরীজের কারখানায় অভিযান চালালে অত্র রিপোর্টের সত্যতা পাওয়া যাবে। উক্ত কোম্পানির উৎপাদিত ঔষধসমূহের মধ্যে সাফাক্যাল, হাসিটন, মাস্তিটন, গোলাপটন, আপেলটন, সাফা-জিনসিনসহ উক্ত কোম্পনির ৪৫০ মিলি সিরাপ বাজারে মাত্র ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যার লেবেল কার্টুনের মূল্য মুদ্রিত রয়েছে ৩৫০ টাকা, ৪৫০ টাকা।
ন্যাচার ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) লি. পুদিনা-এস, এন মুন্ইশ, এন জিংগো, এন ভিট-বি, রুচি ভিট-বি, নিশাত রেইনবো, ভিয়েক্স নামক ঔষধসমূহের লেভেল কার্টুনের চূড়ান্ত অনুমোদন ব্যতীত উৎপাদন ও বাজারজাত করছে উক্ত নেচার ল্যাবরেটরীজ ইউনানী এর কারখানা মিরপুর পলাশ নগর এবং মিরপুর স্টেডিয়ামের পেছনে নেচার ল্যাবরেটরীজ ইউনানীর মালিক খলিল একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে সেখানে নেচার ল্যাবরেটরীজ ইউনানীর গোপন একটি ঔষধের ডিপো বানিয়েছেন। এখান থেকে ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধসমূহ নেচার ল্যাবরেটরীজ ইউনানীর নিজস্ব কাভার্ডভ্যানে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঔষধ ডেলিভারি দেয়া হয়। ইতোপূর্বে নেচার ল্যাবরেটরীজকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই এলাকায় (মিরপুর পলাশনগর) অবস্থিত মেসার্স শেড ফার্মাসিউটিক্যালস আয়ুর্বেদিক এর কারখানায় র‌্যাব ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ এন্টিবায়োটিক ঔষধ জিম্যাক্স এর উৎপাদন কালে সেড ফার্মার মালিক ডা. সনজয় বারই ও কয়েকজন কর্মচারি হাতেনাতে ধরা পড়ে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক শেড ফার্মার মালিকের জেল জরিমানা ও কারখানা সিলগালা করে। উক্ত কোম্পনির জিও ভিটা, গ্লাক্টো, রুচিভিটা, গ্লাকটন, হাইপিক, জিন-কিং ট্যাবলেট, ফুলভিটা ক্যাপসুল ও সিরাপসহ প্রায় শতাধিক আইটেমের ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাত অব্যাহত রেখেছে।
বগুড়ার সবুজ ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) সবুজ আমলকী প্লাস ৪৫০ মিলি, সবুজ জিনসিন ২০ মিলি + ৪০ মিলি + ৬০ মিলি + ১০০ মিলি + ৪৫০ মিলি সিরাপ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। উক্ত সবুজ জিনসিন নামক সিরাপে সিনড্রেনাফিন সাইট্রিয়েট ও ট্রাডালাফিন সাইট্রিয়েট ব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও বগুড়ার ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তা বরাবরই বগুড়ার চিহ্নিত নকল ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে প্রয়াস রহস্যজনক ভূমিকায় রয়েছে। এ ব্যাপারে সবুজ ফার্মাসিউটিক্যালস এর মালিক মো. সবুজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বগুড়া ওষুধ প্রশাসন আমার নিয়ন্ত্রণে। আমার চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগের নেতা। এখান থেকে কেউই আমার কিছু করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন ঢাকায় ওষুধ প্রশাসনের বড় অফিসারদের তিনি মাসোহারা দিয়ে থাকেন। ফলে সেখান থেকেও কিছু হবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
জুরাইন এর দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) একই ডিএআর নাম্বার ব্যবহার করে বলারিস্ট সিরাপ ও দি-টন সিরাপ নামে একি বলারিস্ট দুই নামে ভিন্ন ভিন্ন লেবেল কার্টুনে বাজারজাত করছে। এছাড়া উক্ত কোম্পানি দি গোল্ড, এনজয় প্লাস ক্যাপসুল, এনজয়প্লাস সিরাপসহ প্রায় শতাধিক আইটেমের ঔষধ সামগ্রি উৎপাদন বাজারজাত করছে। এ ধরনের অভিযোগে দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস এর কারখানায় ৩-৪ বার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন প্রকার অনিয়মের অভিযোগে উক্ত কোম্পানি একাধিকবার সিলগালা ও সাময়িক লাইসেন্স বাতিলসহ মোটা অংকের জরিমানা আদায় করে।
এদিকে অতিসম্প্রতি দিহানের মালিক মো. লিটন ইষ্ট ব্যাঙ্গল ল্যাবরেটরী (ইউ) নামে কিশোরগঞ্জ শিল্প নগরীতে আর একটি কোম্পানি খুলে একই প্রতিষ্ঠানে দিহান ও ব্যাঙ্গল ল্যাবলোটরী (ইউ) ওষুধ উৎপাদন করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করলে কোম্পনীর কর্মরত ব্যাক্তিরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পালিয়ে গেলে প্রশাসন প্রতিষ্ঠানের কাউকে না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করে দেয়।
নারায়ণগঞ্জের সুরমা ফার্মাসিউটিক্যালসের (ইউনানী) আরক পুদিনা (সুরমিন্ট), সেব-এস (শরবত সেব) নামক ৪৫০ মিলি সিরাপ রাজধানীসহ সারাদেশে মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে। জানা যায়, উক্ত ভিটামিন সিরাপ দু’টিতে মাত্রাতিরিক্ত গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই দু’টি ভিটামিন সিরাপ সেবন করলে অতিদ্রুত স্বাস্থ্য বৃদ্ধি, রুচি বৃদ্ধি হয়। যে কারণে জনসাধারণ এই দু’টি ভিটামিন সিরাপ কিনতে ঔষধের দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ এলাকার দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা একাধিকবার সুরমা ফার্মাসিউটিক্যালস এর উৎপাদিত ভিটামিন সিরাপ আরক পুদিনা (সুরমিন্ট), সেব-এস (শরবত সেব) এর গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরীতে উল্লেখিত দু’টি ভিটামিন ঔষধের নমুনা পাঠিয়ে ও অদ্যাবধি নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পায়নি। কারণস্বরূপ জানা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরীর কর্মকর্তাদের নিয়মিত অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে সুরমা ফার্মাসিউটিক্যালস এর মালিক ফিরোজ।
জুরাইনের অনির্বান ফার্মাসিউটিক্যালস এর মালিক ডা. সেলিম মোহাম্মাদ শাহজাহান বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি। তিনি তার মালিকানাধীন অনির্বাণ মেডিসিনাল ইন্ডাস্ট্রিজ নামক ঔষধ কোম্পানিতে সিলগোল্ড এভোরিন (চন্দ্রনাসব) ৪৫০ মিলি সিরাপ, এনিসিড (আমলকি রসায়ন), এসপারমোভিট ৪৫০মিলি সিরাপ, রিকহক (উপসম) ৪৫০ মিলি সিরাপ, ইস্কিনা ৪৫০ মিলি সিরাপ নামক ঔষধসমূহের বিভিন্ন প্রকার অপদ্রব্য ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও সম্প্রতি উক্ত কোম্পানিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ৩০ লাখ টাকা জরিমানাসহ ৫ জন কর্মচারিকে আটক করে। বর্তমানে অনির্বাণ মেডিসিনাল ইন্ডাস্ট্রিজ (আয়ু) নারায়ণগঞ্জে স্থানান্তরিত হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের বিসমিল্লাহ ল্যাবরোটরীজের (ইউনানী) নামক ঔষধ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ গ্লোবিরোন (শরবত ফওলাদ) ২০০ মিলি সিরাপ, আমলা (শরবত আমলা) ৪৫০ মিলি, পুদিনা (আরক পুদিনা) ৪৫০ মিলি, পিউ-বি (শরবত গাওজবান) ৪৫০ মিলি তুলশী (কফসিরাপ) ১০০ মিলি, বাসক (কফসিরাপ) ১০০ মিলি, রুচি-বি (হাব্বে হেলতিন), সিরাপ, এট্রোজিন (জিনসিং সিরাপ) ১০০ মিলি এবং বি-জিনসিন নামক ১০০ মিলি সিরাপ একই ডিএআর নম্বর ব্যবহার করে দুই নামে যথাক্রমে এট্রাজিন ও বি-জিনসিন নাম ব্যবহার করছে। বর্তমানে বিসমিল্লাহ ল্যাবরেটরীজ (ইউনানী) কাগজে কলমে বন্ধ দেখানো হলেও ঔষধের উৎপাদন ও বাজারজাত থেমে নেই।
এস এ ল্যাবরোটরীজ (ইউনানী) একই ডিএআর নাম্বার ব্যবহার করে শরবত সেব দুই নামে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে যার ট্রেড নাম হিটোন (শরবত শেব) ও আপেল-জি (শরবত শেব), হেপঠো, ম্যাগফেরল, ম্যাগোজিন (শরবত জিনসিন), মিকোরেক্স (শরবত ছদর) নামক ঔষধসমূহ লেবেল কার্টুনে চূড়ান্ত অনুমোদন ব্যতীত উৎপাদন ও বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বি ফার্মাসিউটিক্যালস’র (আয়ু) এবি কফ, এবি-টনসহ প্রায় শতাধিক বৈধ-অবৈধ ও নিম্নমানের ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এক প্রকার বেপরোয়াভাবে ভাটারা এলাকায় এবি ফার্মাসিটিক্যালস এর কারখানায় অতর্কিত অভিযান চালালে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম ধরা পরবে।
ম্যানসন্স ফার্মাসিউটিক্যালস (ইউনানী) কর্তৃপক্ষ সাসটিনা, ম্যানভিক্যাপ, ম্যানসিন (শরবত জিনসিন) নামক ঔষধসমূহে বিভিন্ন প্রকার অপদ্রব্য ব্যবহারপূর্বক উৎপাদন ও বাজারজাত করায় জনস্বাস্থ্য আজ হুমকির সম্মুখিন।
ঢাকার ডীপলেইড ফার্মাকো (হোমিও) লিবোনেক্স, ভিমেক্স প্লাস, জিনসেং ট্যাবলেট ও সিরাপে মানব দেহের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
গাজীপুরের জেবিএল ড্রাগ ল্যবরেটরীজ (ইউনানী) মালিকপক্ষ রুচিটন, দামালিন, অ্যামবো-ডি, জিনটোরিন, নিশিক্যাপ, জেবিলেক্স নামক ঔষধসমূহ টেস্টিং ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ না করে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে, এমনকি উক্ত কোম্পানির উৎপাদিত কফ সিরাপে মাত্রাতিরিক্ত এলকোহল ব্যবহার করার ফলে জেবিএল এর কফ সিরাপের বিক্রি বেড়ে গেছে।
অবৈধভাবে ট্রেড নামে বাজারজাতকারী এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রচলিত ধারায় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক শিল্প সমিতি ও বাংলাদেশ ইউনানী শিল্প সমিতির সচেতন নেতাদের।