রাজশাহী প্রতিনিধি
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের কাউন্সিলের আর মাত্র তিন দিন বাকি। এ কাউন্সিলের মাধ্যমেই নির্ধারণ করা হবে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ পরিকল্পনা। তাই মহানগর কমিটিতে ঠাঁই করে নিতে রাত দিন দৌড় ঝাঁপে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নগরীর ৪টি থানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দৌড়াঝাঁপ শুরু করেছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে প্রার্থীদের জীবন-বৃত্তান্ত গ্রহণ শুরু হয়েছে। এবার রাজশাহী কলেজ শহীদ মীনার চত্বরে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এবারের কাউন্সিলে মহানগর ছাত্রলীগের ১০১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হবে।
এবারের কাউন্সিলে মূল লড়াই হবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে। এবারের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ঠাঁই পেতে দলের নবাগত কর্মীরাও সিনিয়রদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন রাত ছুটাছুটি করছেন। এ ছাড়া অছাত্র ও নামেমাত্র ছাত্র এমন নেতাও প্রার্থী হচ্ছেন বলে গুঞ্জন চলছে। আবার স্ব-পদে বহাল থাকতে মহানগরীর অনেক নেতারাই লবিং করছেন।
মহানগর ছাত্রলীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে কাঙ্ক্ষিত পদ প্রত্যাশীরা রাত-দিন গণসংযোগ চালালেও কেউই প্রকাশ্যে মুখ ফুটে বলছেন না তিনি কোন পদের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। সবাই তাকিয়ে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের দিকে।
এবার মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি পদ পেতে যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন ছাত্রলীগ নেত্রী অর্ণা জামান। এছাড়াও রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ, তিনি রাজশাহী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।
মাহমুদ হাসান রাজিব, তিনি সরকারি সিটি কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, তিনি ২০১২ সালে ডিগ্রিতে ভর্তি হলেও এ পর্যন্ত প্রথম বর্ষ অতিক্রম করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রার্থীতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সভাপতি প্রার্থী হতে চাই।’ তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা সংবাদে উল্লেখ না করতে তিনি অনুরোধ করেন।
অপর প্রার্থী হলেন সাখওয়াত হোসেন রিফাত, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএর শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি বোয়ালিয়া পশ্চিম থানার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ছাত্র রাজনীতিতে নতুন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বোয়ালিয়া থানা ছাত্রলীগকে আমি নতুন করে সাজিয়েছি আশা করি মহানগরেও ভালো কিছু করতে পারবো। মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমার ভালো যোগাযোগ রয়েছে।’
এ ছাড়াও মহানগর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ দীপনও সভাপতি পদের প্রত্যাশী। তিনি রাজশাহী কলেজের চতুর্থ বর্ষের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তবে প্রচার প্রচারণা, মহানগর এবং কেন্দ্রিয় নেতাদের সঙ্গে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষের যোগাযোগ ভালো।
আবার মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদের বিপরীতে রয়েছে একাধিক প্রার্থী। এর মধ্যে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম খান ববিন। তিনি রাজশাহী কলেজে মাস্টার্স প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী। রাজশাহী কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি ছিল নিছক ভুল বোঝাবুঝি। আমরা নিজেরা সমাধান করে নিয়েছি।’
এই পদের আর একজন প্রার্থী হলেন রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিক হোসেন দীপু। তিনি রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ছাত্র দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পারিবারিকভাবে তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান।
আরেক প্রার্থী হলেন পিয়ারুল ইসলাম পাপ্পু, তিনি রাজশাহী ইউআইটিএ ইউনিভার্সিটির বিবিএ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি বোয়ালিয়া পূর্ব থানার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নতুন বলে জানা যায়।
এ ছাড়াও রাজপাড়া থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন উক্ত পদে পার্থী হচ্ছেন বলে জানা যায়। তিনিও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নতুন। মহানগর ছাত্রলীগের পদ পেতে প্রচার প্রচারণা ও কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগা বজায় রাখছেন এই ছাত্র নেতা।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের কাউন্সিল সম্পর্কে জানতে চাইলে বর্তমান সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক জানান, মহানগর কাউন্সিলের উপর আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্ভর করছে। যারা পদ পেতে সিভি জমা দিয়েছেন তাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই মহানগর কমিটিতে স্থান দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ইতিহাস অনুসন্ধান করা হবে। প্রার্থীদের সিভি জমা দেয়ার পূর্বশর্তের মধ্যে রয়েছে- প্রার্থীকে অবশ্যই ছাত্র হতে হবে।
আগামী ১০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এএইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মহানগর ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, সাধারণ সম্পাদক মীর তৌহিদুর রহমান কিটুসহ রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।