প্রবাস ডেস্ক : আগস্টের শেষ সপ্তাহে কানাডার অনেকগুলো শহর একসঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠে। টরন্টোর ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারের মতো না হলেও ক্যালগারির এলিস্টন পার্কে উন্মুক্ত আকাশের নিচে বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী যে বিশাল আনন্দযজ্ঞে করে, তাকে কোনোদিক দিয়েই টরন্টোর চেয়ে কম বলা যাবে না।
‘গ্লোবাল ফেস্টিভ্যাল’ নামে এ অনুষ্ঠানটি ক্যালগারিবাসীকে টেনেছে বরাবর। গত বছর কোভিড-১৯-এর কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি, এবারও হবে কি হবে না, সেরকম একটা আশঙ্কা ছিল। জুলাইয়ে আলবার্টা প্রদেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিত উন্নত হয়ে গেলে সরকারের তরফে মধ্য জুলাই থেকে সব ধরণের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়।
সেই ছোঁয়া গ্লোবাল ফেস্টিভ্যালেও এসে লেগেছিল। সময় স্বল্পতায় আগের মতো স্টল নির্মাণের সুযোগ ছিল না, কিন্তু মানুষের ঢল তাতে থামেনি। শনিবার উৎসবের শেষ দিনে বাংলাদেশের উপস্থিতি ছিল চোখে দেখার মতো। বেশ কয়েকবছর ধরেই ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ নামের সাংস্কৃতিক সংগঠনটি এখানে অংশ নিয়ে আসছে। এবছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে বিশাল লেকের দক্ষিণ-পশ্চিমের বিস্তির্ণ জায়গাজুড়ে ৪টি স্টেজ, আর তাকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষ বসেছিল বিকেল থেকেই। সন্ধ্যা ৭টায় সাউথ বল স্টেজে ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’-এর প্রথম পরিবেশনা। দলনেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানের সঙ্গে ‘ওরা ১১ জন’ বাংলাদেশের লাল-সবুজ রঙ নিয়ে হাজির। স্বাধীনতার ৫০ বর্ষপূর্তি ব্যানারটি মঞ্চের শোভা যেন বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।
মঞ্চের সামনে সবুজ গালিচায় নানা দেশের মানুষ মন দিয়ে শুনছে বাংলা গান-‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’। এরপর মুক্তিযুদ্ধের গান-‘পূর্বদিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্তলাল’। এভাবে টানা ৫টি দেশাত্মবোধক গান। ওদিকে এয়ারকানাডা স্টেজ তখন প্রস্তুত হচ্ছে পরবর্তী আয়োজনের জন্য, সেখানে সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশের নৃত্য পরিবেশনা। তানিশা ফারিহা, রোজ সরকার, মনুতাহারা কখনো দ্বৈত কখনো দলবদ্ধভাবে বাঙালির নৃত্যকে হাজির করেছে দর্শকদের সামনে।
মুনতাহাদের শেষ পরিবেশনা ছিল ‘ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে’। বহু দেশের মানুষ, ভাষা না বুঝেও সেই গানের টানে মঞ্চের সামনে নাচানাচি করছিল। এমন দৃশ্য বাংলাদেশিদের চোখে জল আনতে বাধ্য। বাঙালি যে জাতিগতভাবেই আবেগপ্রবণ। সর্বশেষ অনুষ্ঠান হয় ভিলেজ স্টেজে, সেখানে রাত্রীসহ ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পরিবেশনা দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে রাত সাড়ে ৯টায় আতশবাজি শুরু হওয়া অবধি।
কথা হচ্ছিল তানিশার বাবা কামরুল হাসানের সঙ্গে। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে মেয়ে নাচ শিখছে। বর্তমানে কলকাতার এক বাঙালির কাছে নাচের তালিম নিচ্ছে। কোভিডের কারণে সামনা-সামনি নাচ শেখা বন্ধ, কিন্তু ভিডিওকলের সুযোগটাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে মেয়ে তানিশা। মুনতাহারও একই অবস্থা। বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে মুনতাহা নৃত্য নিয়ে অনেকদূর যাবে এ প্রত্যাশা ওর মা লুবনা ইয়াসমিন এবং বাবা সায়ীদ চৌধুরীর।
কথা হচ্ছিল ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা নাসরীন আখতারের সঙ্গে। গত ৮ বছর ধরে এ গ্লোবাল ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়ে আসছে তার প্রতিষ্ঠান। কোভিডের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রস্তুতি তেমন নিতে পারেননি, তেমন একটা আক্ষেপ তার কথায়। যদিও মঞ্চে তার কোন প্রভাব দর্শকদের নজরে পড়েনি। গ্লোবাল ফেস্টিভ্যাল যেন বাংলাদেশময় হয়ে উঠেছিল।