খিঁলগাও এলাকার শান্তিপুরে বাবা-ছেলেকে গুলি করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় বড় মেয়ের স্বামীকে সন্দেহ করছে পুলিশ। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সময়মতো গ্রেপ্তার করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বাবা ইসরাইল হোসেন (৫৫) ও ছেলে শরীফ হোসেন ওরফে সায়মনকে (৩২) গুলি করে ৩৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। গুলিয়ে সায়মন নিহত হন। ইসরাইল পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এখন এসে পুলিশ নিহত সায়মনের বড় বোনের স্বামী পরাগকে সন্দেহ করছে। কারণ গতকাল শনিবার যাত্রাবাড়ীতে তার বাসা থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাই হয়ে যাওয়া ৩৮ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকা।
পরাগ জানিয়েছেন, তার ট্রাক ড্রাইভার নাকি তাকে সেই টাকা দিয়েছেন। অথচ ঘটনার সময় ড্রাইভার তার কাছে ছিলেন না। সেই টাকা ড্রাইভারের কাছ থেকে কী করে পরাগের কাছে এলো এ প্রশ্ন নিয়েই এগুচ্ছে পুলিশ।
তবে তদন্তের খাতিরে পরাগকে এখন গোয়েন্দা নজরদারিতেই রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সায়মনের বাবা ঈসরাইল হোসেন (৫৫) এখন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার সঙ্গে আত্মীয়স্বজন ও জামাই পরাগও রয়েছেন। পরাগ তার শ্বশুরকে দেখভালের দায়িত্বে থাকার কারণেই এখন তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই ঘটনার সঙ্গে পেশাদার ছিনতাইকারীরা রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। ওই এলাকার আশেপাশে সংঘটিত অতীত ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদেরও সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে খিঁলগাও থানার এসআই লিয়াকত আলী বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা তার দুলাভাইকে নজরদারিতে রেখেছি। তবে এখনও গ্রেপ্তার করছি না কারণ, তিনি তার শ্বশুরের সাথে পঙ্গু হাসপাতালে আছেন। যেকোন সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে। ডাকা হলে তিনি আসবেন বলে জানিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরাগ জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া ৬ লাখ টাকা তার ড্রাইভার দিয়েছেন। শ্বশুর অসুস্থ থাকার কারণে তিনি বিষয়টি জানাননি। তবে কেন ড্রাইভার তাকে এ টাকা দিল তাও দেখা হচ্ছে।’
তিনি জানান, ড্রাইভার মোহাম্মদ আব্দুল আলীমকে (৩২) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে তিনি ৬ লাখ টাকা পেয়েছেন এবং সেই টাকা পরাগের কাছে জমা দিয়েছেন।
ফলে ৩৮ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র ৬ লাখ টাকা উদ্ধার হলো। বাকি টাকা এখনও উদ্ধার করা হয়নি। সেটার সন্ধান চলছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজ ভুঁইয়া জানান, ৬ লাখ টাকা সায়মনের দুলাভাইয়ের বাসা থেকে উদ্ধার হয়েছে। এই টাকা উদ্ধারের আগে ও পরে থেকেই কিছু মানুষের প্রতি সন্দেহ আরও বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলছে আশা করছি শীঘ্রই একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছবো। আর যে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে তা আমাদের কাছে হেফাজতেই আছে। সময় মতো আমরা তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবো বলে আশা রাখি।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মতিঝিলের ইউনিভার্সেল মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ৩৮ লাখ টাকা বাড়ি ফিরছিলেন বাবা ও ছেলে। শান্তিপুর হাইস্কুলের সামনে বাড়ির মূল ফটকে তারা প্রাইভেট কার থেকে নামার সময় ওঁৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার গুলি করলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ছেলে সায়মন এবং আহত হন বাবা ইসরাইল হোসেন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে খিদমাহ হাসপাতালে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ব্যাপারে সায়মনের চাচা বাদী হয়ে গত শুক্রবার তিন/চারজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।