প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দেশের প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মপরিকল্পনায় ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের চিরন্তন অবয়ব অপরিবর্তিত রেখে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে নাগরিকদের দোরগোড়ায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শীর্ষক এ মেগা প্রকল্পের অধীনে সড়ক যোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগসহ টেলি যোগাযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মতো অনেকগুলো লক্ষ্য রাখা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই ঢাকায় শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি পাস করা হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, এই প্রকল্প চলতি জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের জুন মাসে শেষ হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে বাছাই করে ১৫টি গ্রামের উন্নয়ন করা হবে। এ জন্য সরকারের ব্যয় হবে ৮০০ কোটি টাকা।
দেশের প্রতিটি নাগরিক যাতে বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, উন্নত রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, খেলাধুলা, বিনোদনসহ সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পান সেই লক্ষ্যেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রামকে শহরে পরিণত করার জন্য সরকারি সম্পদের শতভাগ সুষম বণ্টন, পরিকল্পিত রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, শতভাগ ভিক্ষুক মুক্তকরণ, শতভাগ বাল্যবিয়ে রোধ, মাদক নির্মূল, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন, কৃষকদের সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান, পরিচ্ছন্ন হাটবাজার, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অগ্রগতি, অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন এবং বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত ১৫টি পাইলট গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ ও সহজতর করার লক্ষ্যে জনসম্পদ সৃজনে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট গ্রাম অন্তর্ভুক্ত ১০টি উপজেলার মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রণয়ন/হালনাগাদের মাধ্যমে সারাদেশে সকল উপজেলায় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করা। ২০৪১ সালের মধ্যে পরিকল্পিত ও জলবায়ু সহিষ্ণু টেকসই-উন্নত দেশ বিনির্মাণে মাঠ পর্যায়ের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করার পাশাপাশি ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পাইলট গ্রাম অন্তর্ভুক্ত ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব আহরণ, গ্রামসহায়ক নীতি কাঠামো প্রয়োগ, স্বেচ্ছাসেবার অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নগর পরিষেবা প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সেবাসমূহ পাইলট গ্রামসমূহের সম্প্রসারণ বৃদ্ধি করা।
এছাড়া পাইলট গ্রাম প্রকল্পের অধীনে সম্পাদিত কার্যাবলীর এবং আহরিত জ্ঞান সারা দেশে প্রয়োগের লক্ষ্যে উপযুক্ত জ্ঞান ব্যবস্থাপনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন এবং ডকুমেন্টেশন করা হবে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম সড়ক উন্নয়ন (মাটির কাজ; ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন নির্মাণ; প্রতিরক্ষা ইত্যাদি); গ্রোথ সেন্টার, গ্রামীণ বাজার উন্নয়ন এবং কৃষিপণ্য কালেকশন সেন্টার নির্মাণ; পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নির্মাণ; উপজেলা বহুমুখী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ; বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ উন্নয়ন; গ্রামীণ আবাসন উন্নয়ন; খাল ও পুকুর খনন; গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়ন, সড়ক বাতি স্থাপন, বন্ধু চুলা ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট সরবরাহ; সামাজিক বনায়ন এবং ভিলেজ ব্র্যান্ডি। একনেক করপত্রে দেখা গেছে, অষ্টম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন কৌশল, গ্রামীণ সড়ক পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ কৌশল, গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কের জন্য অগ্রাধিকার কৌশল, গ্রামীণ গ্রোথ সেন্টার/হাটবাজার, গ্রামীণ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, গ্রামীণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া, উপজেলা উন্নয়ন/মহাপরিকল্পনা, কমিউনিটি অবকাশ কেন্দ্র ও গ্রামীণ বিনোদন সুবিধা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা উন্নয়ন এই শিরোনামে পৃথক পৃথক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ বাস্তবায়নের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে এই বিষয়গুলোর উপর গবেষণা/সমীক্ষা পরিচালনা করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় উদ্ভাবন করা হয়েছে।
কার্যপত্রে আরও দেখা গেছে, পাইলট প্রকল্পে গবেষণা/সমীক্ষার ফলাফলসমূহ প্রয়োগ করা হবে। এ প্রকল্পের আউটপুটসমূহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসডিজি’র অভীষ্ট-১ (দারিদ্র্য বিলোপ, টার্গেট ১.১, ১.৩), অভীষ্ট-৬ (নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন), অভীষ্ট-৯ (টেকসই নগর ও জনপদ), অভীষ্ট-১২ (পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন), অভীষ্ট-১৩ (জলবায়ু কার্যক্রম) এর লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। পাইলট প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম ছাড়াও পাইলট গ্রামসমূহে অন্যান্য বিভাগের কার্যক্রমকে সমন্বয় করবে। কাজেই, এসডিজি’র অধিকাংশ অভীষ্ট এবং লক্ষ্যসমূহের বাস্তবায়ন দৃষ্টান্ত পাইলট গ্রামসমূহে স্থাপিত হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি’র লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে তিন বছরে: প্রকল্প প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে শহরের মতো গ্রামেও আবাসনের জন্য ফ্ল্যাট সুবিধা, ইউনিয়নে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পানি ও স্যানিটেশন এবং টেকসই জ্বালানিব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে ১৫টি ইউনিয়নে পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করবে। পর্যায়ক্রমে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে তিনটি গ্রামে ৬১৬টি ইউনিট বা ৬৮টি চারতলা আবাসন ভবন নির্মাণ করা হবে। জুলাই ২০২৩ থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে তিন বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
লক্ষ্য খাদ্য ও আবাসন নিশ্চিত করা: প্রকল্পটির বিষয়ে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল মনজুর মোহাম্মদ সাদেক জানান, এলজিইডি’র ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ প্রকল্পটি উন্নত দেশের গ্রাম বিনির্মাণে কাজ করছে। সোনার বাংলা গড়ার বঙ্গবন্ধুর এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নকে আমরা আত্মস্থ করে উন্নত দেশ গড়ার কাজ করছি। এ প্রকল্পের প্রতিটি সমীক্ষা ২০৪১ সালের উন্নত টেকসই দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে। ২৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কারিগরি সহায়তা প্রকল্প; যা ব্যয় সংকোচন করে ১৯.৪২ কোটি টাকায় শেষ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রতিটি হিসাব স্বচ্ছ, যৌক্তিক। কোন অডিট আপত্তি পর্যন্ত নেই। এ প্রকল্পও খুবই স্বচ্ছতার সাথে দক্ষভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ফসলি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগামী ৩০-৪০ বছরে তা আরও অনেক কমে আসবে। তাই দেশের জনগণের খাদ্য ও আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে যার যতটুকু জমি আছে তার সঙ্গে সমন্বয় করেই আবাসন করে দেওয়া হবে। সবাই তাদের এই আবাসনের কাছে আবাদের জমি পাবেন। সেখানে তারা ফসল ফলাতে পারবেন। পশু পালন করতে পারবেন। দুর্যোগের সময় কোস্টাল এলাকার মানুষরা কষ্ট থেকে রেহাই পাবেন।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘আমরা তাদের নিজেদের জমিতেই তাদেরকে বিল্ডিং বানিয়ে দিচ্ছি। বিল্ডিং বানানোর টাকা ২৫ বছরে তারা শোধ করতে পারবেন। একটি ইউনিট নিতে তাদের খরচ পড়বে ১৮ লাখ টাকা। একটি ইউনিট নিতে মোট খরচের ১০ শতাংশ জমা দিতে হবে।’
প্রকল্পের আওতায় ১৫ গ্রাম: সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার পূরণের লক্ষ্যে নির্বাচনের আগেই ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্প অনুমোদনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) বলা হয়েছে, এ প্রকল্প নেওয়ার আগে এলজিইডি ও ডিপিএইচই যৌথভাবে একটি কারিগরি সমীক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। যার আলোকে আটটি সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। আর এসব সুবিধা বাড়াতে ৩৬টি সমীক্ষা ও ৩০টি গাইডলাইন তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়। এসব নীতিমালা ও গাইডলাইন তৈরি এবং পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ১৫টি ইউনিয়নে পাইলট প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সারা দেশের আটটি বিভাগের ৮টি উপজেলার ৮টি গ্রাম এবং ৮টি বিশেষ অঞ্চলের (হাওর, চর, পার্বত্য, উপকূল, বরেন্দ্র মধ্যাঞ্চলের বিল এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলসংলগ্ন) ৮টি বিশেষ উপজেলার সাতটি বিশেষ গ্রামসহ মোট ১৫টি গ্রাম বাছাই করা হয়।
‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পের মাধ্যমে যে তিনটি গ্রামে প্রাথমিকভাবে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের শিমুলবাক গ্রাম, খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালী গ্রাম ও ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চালাকচর ইউনিয়নের হাফিজপুর গ্রাম।
প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব গ্রামকে শহরের সুবিধা দেওয়া হবে সেগুলো হচ্ছে- ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের বিলচান্দা গ্রাম; ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলার শাহাতা ইউনিয়নের ডেমুরা গ্রাম; চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিপুলসার ইউনিয়নের শেকচাইল গ্রাম, রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের ছোট হরিনা গ্রাম; সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের বাগাইয়া গ্রাম; রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের সোনাডাঙ্গা গ্রাম, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের খোরদো চম্পা গ্রাম এবং রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের পাথরডুবি গ্রাম, গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়নের ফুলছড়ি গ্রাম; খুলনা বিভাগের খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার খুরনিয়া ইউনিয়নের টিপনা গ্রাম এবং বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের ইন্দুরিয়া গ্রাম।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম: প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৭ কিলোমিটার সড়ক, ২২০ মিটার ব্রিজ ও ৩৩০ মিটার কালভার্ট নির্মাণ। ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হবে ২৩টি গ্রোথ সেন্টার। ১৫টি গ্রামে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনে ব্যয় হবে ৪৩ কোটি টাকা। ২৭টি হাটবাজার স্থাপনে ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাঁচটি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে ৬২ কোটি টাকা। ২৩ কোটি টাকায় ১৪টি খাল ও পুকুর খনন করা হবে। খেলার মাঠ ও সবুজায়নে ২৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। গ্রামের সড়কে বনায়নের জন্য রাখা হয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ৯৫০টি সড়কবাতির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাড়ে ৯ কোটি টাকা। ৩৫টি ঈদগাহ কবরস্থান, শ্মশানঘাট উন্নয়নে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১০টি উপজেলা মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নে খরচ হবে ৮৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির মাধ্যমে ৫ হাজার ১০০ বেকার তরুণকে জীবনমান উন্নয়নে পেশাভিত্তিক হস্তশিল্প ও কৃষি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। গ্রামগুলোর ব্র্যান্ডিং করার জন্যও ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের জন্য অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ২০ লাখ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে বিদেশে যেতে প্রতিবেশী দেশকে প্রাধান্য দিতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫০টি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট সরবরাহ করা হবে। ৫ হাজার ৩০০ পরিবারকে দেওয়া হবে বন্ধু চুলা। দুই কিলোমিটার গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়ন করা হবে, ১৪টি পুকুর এবং ৩৭ কিলোমিটার খাল খনন করা হবে।
পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট গ্রাম অন্তর্ভুক্ত উপজেলাসমূহের মাস্টারপ্ল্যান দ্রুততম সময়ের মধ্যে হালনাগাদের মাধ্যমে সারা দেশে সব উপজেলায় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের গ্রামে শহরের সুবিধা দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হতে পারব।’