তিনি যেন তার নামের মান মান রেখে চলেছেন বিশ্বজুড়ে! দেখতে ভোলাভালা হলেও তিনি কিন্তু মোটেও তা নন। তিনি একজন নীরব ঘাতক। বিদেশে লোক পাঠানোর নামে নি:স্ব করেছেন কয়েক হাজার পরিবারকে।
তিনি মালয়শিয়া সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। গত প্রায় ১ দশকে মালয়শিয়া কর্মী পাঠানোর নামে প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তার প্রতারনার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন সবার চোখের সামনেই। হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে এই মালয়শিয়াতেই পাঠিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গড়ে তুলেছেন হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসার। সাইনবোর্ড হোটেল কিংবা রিসোর্ট ব্যবসার হলেও তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হলো তিনি আসলে আন্তর্জাতিক মাদক ও স্বর্ণ চোরা কারবারী চক্রের অন্যতম সদস্য। এসবই হলো বিশ্বজিতের আসল ব্যবসা।
এখানেই শেষ নয়! গা শিউরে ওঠার মত রয়েছে আরও ঘটনা।
অদিতি ইন্টারন্যাশনাল (RL No: 983) এর স্বত্ত্বাধিকারী বিশ্বজিত সাহা মালয়শিয়ার মত ঐ একই পন্থায় অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাইয়ে গড়ে তুলেছেন হোটেল ব্যবসা। এখানে তিনি নামে-বেনামে একাধিক হোটেল এবং রিকন্ডিশন গাড়ি বিক্রয় কোম্পানীর মালিক তথা বিনিয়োগকারী।
ঢাকা জেলার দোহারে সরকারী জমি দখল, মার্কেট দখল সহ অত্যন্ত সুচতুর বিশ্বজিত সাহার আমলনামা আরও লম্বা। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ এবং বিশ্বস্ত সুত্র থেকে জানা যায যে, তিনি ২০২৩ সাল থেকে উজবেকিস্তানের ভিসার নামে প্রথমে ৬৬৫ জন এবং পরবর্তিতে আরও ১৪৩৫ জনের নিকট থেকে গড়ে ৩-৫ লক্ষ টাকা নিয়েছে। যদিও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এন্টার ইঞ্জিনিয়ারিং উজবেকিস্তানে কর্মী নেওয়ার সকল খরচ বহন করার চুক্তি করেছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সম্পূর্ণ ফ্রি কস্টের ভিসা হলেও যে সকল কর্মীরা প্রায় ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে দিলো ভাগ্য ফেরাবার আশায়, আজও ফেরেনি তাদের ভাগ্য! ২হাজারের অধিক লোকের কাছ থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা নিয়ে উজবেকিস্তানে লোক পাঠাতে পেরেছে মাত্র ৩০৭ জন। কিন্তু এই এই ৩০৭ জন উজবেকিস্তান পৌছাতে পারলেও তাদের কপালে জোটেনি প্রতিশ্রুত কাজ, বেতন, আবাসন, খাদ্য কিংবা গোসলের পানি! এক নির্মম এবং নিদারুন কষ্ট ও নির্যাতনের মধ্যে চরম অসহায় সময় কাটাচ্ছে তারা। যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় বলে জানিয়ে ওখানে থাকা ভুক্তভোগী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পরিবারের পক্ষ থেকে। আর এদিকে গরীবের জুম বেচা, গরু বেচা, ধান বেচা টাকা পাচার করে দুবাইয়-মালয়শিয়ায় প্রতারনার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে এই বিশ্বজিত সাহা।
অদিতি ইন্টাররন্যাশনাল উজবেকিস্তানে কর্মীদের ২ বছরের জব ভিসার কথা বলে টাকা নিলেও কারও সাথেই ২ বছর কেন- ১ বছরের জব বা ভিসা করতে পারে নি। ফলে এই কর্মীরা এক বিভৎস ও নারকীয় অবস্তার মধ্যে মাসের পর মাস গোসল ছাড়া, খাদ্য ছাড়া, বেতন ছাড়া প্রহর গুনছে!
বিশ্বজিত সাহার প্রতারণা, জালিয়াতি এবং ভুয়া কাগজপত্র টের পেয়ে বাংলাদেশ সরকারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অদিতি ইন্টারন্যাশনালের ফাইল আটকে দেয়। শুধু তাই নয় অত্র সচিবালয় থেকে ‘কেন কর্মীদের সাথে ২ বছরে চুক্তির কথা বলে প্রতারণা করা হয়েছে, উজবেকিস্তানে কর্মরত কর্মীদের করুন ও অসহায় অবস্থার কার এবং তারা এখন কি কাজ করছে ইত্যাদি বিষয় এই কোম্পানীকে জানাতে বলে। কিন্তু অদিতি ইন্টারন্যাশনার এর কোন সদুত্তর দিতে না পারলেও উল্টো বিভিন্ন প্রভামশালী মহল থেকে অত্র মন্ত্রলায় চাপ প্রয়োগ করছে। বিশেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো রুহুল আমিনের নিকট একটি বেসরকারী টিভির সাংবাদিক সহ আরও কয়েকজনকে পাঠিয়ে জোর তদ্বির করায় বিশ্বজিত সাহা। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়,তাতেও প্রবাসী সচিব সম্মত না হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রচ্ছন্ন হুমকি বা ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেন।
এদিকে বিশ্বজিতের অবৈধ টাকার পাগলা ঘোড়া যেন থামছেই না। তিনি গরীবের রক্তচোষা টাকা দিয়ে শীঘ্রই মন্ত্রণালয় কিনে ফেলবেন বলে টেবিল চাপেড়ে তার অফিস স্টাফদের সম্মুখে চ্যালেঞ্জ করেন। অন্যদিকে প্রবাসী কল্যাণের সচিবকেও দেখবেন বলে জানান।