আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের বিহার রাজ্যের এক এলাকা থেকে রোববার গত তিন বছর ধরে বাথরুমে বন্দি থাকা এক গৃহবধূকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। যৌতুক দিতে না পারায় স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন মিলে ২৫ বছরের ওই নারীকে বাথরুমে আটকে রেখেছিলেন।
স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এনডিটিভি মঙ্গলবার জানায়, রোববার বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে ১৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় দ্বারভাঙ্গা শহরের রামবাগ এলাকার এক বাড়ি থেকে ওই নারীকে তারা উদ্ধার করেছে। এ সময় ওই গৃহবধুর পরনে ছিল শতচ্ছিন্ন ময়লা কাপড়, শুকনো এলামেলো চুল এবং হাতের নখ ছিল বড় বড়।
উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী পুলিশ কর্মকর্তা সীমা কুমার জানান, বাইরে বের করার পর সূর্যের আলোয় তিনি চোখ মেলতে পারছিলেন না। দীর্ঘদিন অন্ধকার ও স্বল্প আলোতে থাকার কারণে আলো সহ্য করতে পারছিলেন না।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, শ্বশুরবাড়ির চাহিদামত যৌতুক দিতে না পারায় এবং কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার প্রতিশোধ নিতে ওই গৃহবধূকে গত তিন বছর ধরে বাথরুমে আটকে রাখা হয়েছিল। তারা তার মেয়ের সঙ্গে পর্যন্ত দেখা করতে দিতেন না। বাথরুমেই তার খাবার দেয়া হত। তবে তা ছিল অপর্যাপ্ত এবং অনিয়মিত।
২০১০ সালে দ্বারভাঙ্গা জেলার পাতসান গ্রামের প্রভাত কুমার সিংয়ের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি তার ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার পর তাদের নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তা সীমা কুমার আরো জানান, ‘বিয়ের পর থেকে ওই গৃহবধূটিকে তার বাবামায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি তার স্বামী। তার বাবার বাড়ির কোনো আত্মীয় তার সঙ্গে দেখা করতে দ্বারভাঙ্গা এলে তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হত। এমনকি কোনো বাইরের লোকজনের সঙ্গেও তাকে দেখা করতে দেয়া হত না।’
রোববার বন্দিদশা থেকে ছাড়া পাওয়ার পরপরই নিজের মেয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন ওই নারী। কিন্তু মেয়েকে কাছে আনার পর নিজের মাকে চিনতে পারছিল না সে । এতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই মা।
পুলিশ আরো জানায়, ওই নারীর বাবা শ্যামসুন্দর সিংয়ের করা এক অভিযোগের ভিত্তিতে ওই গৃহবধূকে উদ্ধারের অভিযান চালিয়েছিল দ্বারভাঙ্গা থানার পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই নারীর স্বামী, শ্বশুর ধীরেন্দ্র সিং এবঙ শাশুড়ি ইন্দ্রা দেবীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।