নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হকের হয়ে তার এপিএস কাঞ্চন দাস ফোনে দুদকের উপ-পরিচালক যতন কুমার রায়কে ‘হাওয়া করে দেয়ার’ হুমকি দিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেছেন যতন কুমার। তিনি জানান, এপিএস কাঞ্চন তাকে ফোনে বলেছেন, ‘এনামুলের বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রকার মামলার সুপারিশ করা হয় তাহলে তোকে হাওয়া করে দেয়া হবে।’ কাঞ্চন আরো বলেছেন, ‘সংসদ সদস্য এনামুল হক প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাইকে ম্যানেজ করেছেন শুধু তুই ছাড়া। তুই যদি মামলার সুপারিশ করিস তাহলে তুই হাওয়া হয়ে যাবি।’
যতন কুমার রায় জানান, হুমকি পাওয়ার পর তিনি রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে জিডি করেছেন বলে জানান।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে এমপি এনামুলের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন দুদকের যতন কুমার।
উল্লেখ্য, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ও অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে এমপি এনামুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।
সূত্র জানায়, অনুসন্ধান শেষের দিকে। কিছু দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। সূত্র আরো জানায়, দুদকের সংগ্রহ করা তথ্য এবং এনামুলের দেয়া সম্পদ বিবরণীর তথ্যের মধ্যে বিস্তর গরমিল রয়েছে। এনামুল হক নিজ ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সম্পদের যে হিসাব বিবরণী দুদকে দাখিল করেন, তার সঙ্গে মিল নেই দুদকের সংগৃহীত তথ্যের। দুদকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এমপি এনামুল গত পাঁচ বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। এসব সম্পদের অর্জনের উৎস দুদক খুঁজে পায়নি।
দুদকের প্রতিবেদনে এনামুলের মালিকানাধীন এনা প্রপার্টিজের নিজস্ব ভবনসহ ১৭টি প্রকল্পের কথা উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে, এনা প্রপার্টিজ আয়কর দেয়ার সময় যে অডিট প্রতিবেদন দাখিল করেছে, আর ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণকালীন যে অডিট দাখিল করেছে, তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এনামুল হক ৩১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা গোপন করেছেন। সালেহা ইমারত কোল্ড স্টোরেজে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় শেয়ার থাকলেও তা আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি।
নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামা সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে শুধু বেতন-ভাতা থেকে তার বছরে আয় ছিল ২০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর পরে এখন কৃষি, বাড়ি ও দোকান ভাড়া,ব্যবসা ও পেশা থেকে বছরে তার আয় হয় ৫০ লাখ টাকা।
এনামুলের নিজের, স্ত্রীর ও নির্ভরশীলদের মোট ১৬ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাধারণ শেয়ার রয়েছে। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকায়। তবে নগদ হিসেবে নিজের ১০ লাখ টাকা ও স্ত্রীর হাতে পাঁচ লাখ টাকা দেখিয়েছেন তিনি। নিজ নামে ব্যাংকে আছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৯১ টাকা ও স্ত্রীর নামে এক লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা।