নিজস্ব প্রতিবেদক
কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খেলে নানারকম স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দিতে পারে। এরমধ্যে কিডনি, লিভার ও হৃৎপিণ্ড স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
বুধবার সকালে রাজধানী কলাবাগানস্থ পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলনের (পবা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেয়া সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষিবিদ আখতারুজ্জামান বলেন, গরু মোটাতাজা করার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিতে ইউরিয়া, চিটাগুড়, খড় মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়। এই পদ্ধতিতে গরুকে মোটাতাজা করার জন্য ৪-৫ মাস সময় লাগে। কিন্তু লোভী ব্যবসায়ীরা ৩ সপ্তাহ থেকে ২ মাসের মধ্যে গরুকে মোটা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করছে। এগুলো হচ্ছে- নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ ইউরিয়া; স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ যেমন: ট্যাবলেট- ডেকাসন,ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন, বেটনেনাল, কর্টান, স্টেরন, অ্যাডাম-৩৩ ইত্যাদি, ইনজেকশন- ডেকাসন, ওরাডেক্সন ইত্যাদি; অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ইনজেকশন; অ্যান্টিহিস্টামিন গ্রুপের ওষুধ: সিপ্রোহেপটাডিন যেমন- পেরিএ্যাকটিন ট্যাবলেট।
তিনি বলেন, এভাবে মাটাতাজা করা গরুর মাংস খেলে এসব ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থ মানব শরীরে প্রবেশ করে। ফলে মানুষের কিডনী, লিভার, হৃৎপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে লিভার ও কিডনীর রোগ দেখা দেয়। বিদ্যমান উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। যাদের রক্তচাপ ও রক্তে সুগারের মাত্রা বিপদসীমার কাছাকাছি তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ মানবশরীরে বেশি মাত্রায় জমা হলে মানুষের বিপাক ক্রিয়াতেও প্রভাব পড়ে। মানুষও মোটাতাজা হতে থাকে।
কৃষিবিদ আখতারুজ্জামান আরো জানান, এসব ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য গরুর শরীরের স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়া নষ্ট করে দেয়। গরুর ক্ষুধা এবং পিপাসা বেশি হয়। এতে গরু প্রচুর পরিমাণে খাদ্য ও পানি খেতে থাকে । এই গরুগুলো বেশিদিন বাঁচেও না। অস্বাভাবিকভাবে মোটা করা এসব গরু নির্জীব ও শ্লথ হয়ে যায়। এদের ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয়। আচরণে অত্যন্ত ক্লান্তিভাব দেখা যায়।
বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৪০-৪২ লাখ গরু এবং ১৮ লাখ ছাগল জবাই হয়। এর শতকরা ৪০ ভাগ কোরবানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে জবাইকৃত গরুর শতকরা ৪০ ভাগ ভারত থেকে আসে।
পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- পীসের মহাসচিব ইফমা হুসাইন, পবার সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, পল্লীমা গ্রীণের সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক, পবার নির্বাহী সদস্য মো. সেলিম, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুল হক, পরিবেশ সাংস্কৃতিক মঞ্চের পরিচালক মিজান শরীফ খোকা, ইকো সোসাইটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার অনুতোষ চ্যাটার্জী।
প্রসঙ্গত, পশু আইন-২০০৫ এর ধারা-৯ এ পশু পরীক্ষা, ধারা-১০ এ পোস্টমর্টেম পরীক্ষা এবং ধারা-১২ এ সংক্রমিত পশু বাজারজাতকরণের বিধি-নিষেধ রয়েছে। ধারা-২৫ এ এ আইনের বিধি নিষেধ লঙ্ঘনের দায়ে অনূর্ধ্ব ২ বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডেরর বিধান রয়েছে। ক্ষতিকর ওষুধ দিয়ে গরু মোটাতাজা করা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোরবানি উপলক্ষে ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে গরু মোটাতাজ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও হুশিয়ারি দিয়েছে সরকার।