ঢাকাশনিবার , ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ট্রাম্পের শপথ এবং বাংলাদেশের ভাবনা

তালুকদার রুমী
জানুয়ারি ১৮, ২০২৫ ৮:৪২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের মতো শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পেন শপথ নিয়ে বিশ্বজুড়েই বেশ আগ্রহ রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ট্রাম্পের শপথগ্রহণ নিয়ে আগ্রহ অনেকটাই বেশি। কারণ মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও আলোচনার যে বিষয়টি সামনে এসেছেতা হলো আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেমন হবে। বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে মানবাধিকার সংক্রান্ত কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে শীতলতা চলছিলো। এসময় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বক্তব্যেও তা প্রকাশ পাচ্ছিলো। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে অনেকটাই উষ্ণতা দেখা গেছে। নোবেল জয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট নেতাদের সম্পর্ক বরাবরই বেশ ভালো। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে তার উচ্ছ্বসিত ছবিতেও তার প্রতিফলন দেখা যায়। তবে অনেকের মতে বিশ্ব বরেণ্য অর্খনীতিবিদ শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের সাথে শুধু ডেমোত্র্যাট না, রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে। অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সর্ম্পক আরও উচ্চ শিখরে পৌঁছাবে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে অবধারিতভাবেই এই প্রশ্ন উঠে যে গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বরফ যেভাবে গলতে শুরু করেছিলো, এখনও তা অব্যাহত থাকবে কি না। নাকি, ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ায় বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের মাঝে বড় কোনও পরিবর্তন আসবে? বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের ওপর রাতারাতি কোনও প্রভাব না পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে গিয়ে পড়বে। কেননা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভালো সম্পর্ক নয়।এর কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় ২০১৬ সালে ফিরে গেলে। তখন রিপাবলিকান পার্টি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই বছরই ফ্রান্সের এইচইসি প্যারিস নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখার সময় ড. ইউনূস ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়কে ‘সূর্যগ্রহণ’ বা অন্ধকার সময় হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।তবে সেটা যাই হোক এবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেছেন, দুই দেশের অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে ও টেকসই উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ রয়েছি। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এর আগে তিনি ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে তাদের দু’জনের কিছু ছবিসহ একটি টুইট করেছিলেন। দাতে নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ হিসাবে সম্বোধন করেছেন। এতে বেশ স্পণ্ট ছিল যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী’র মধ্যকার সম্পর্ক সবসময়ই ভালো। সেই সাথে, রিপাবলিকান পার্টির সাথেও ভারতের সম্পর্ক সবসময়ই খুব ভালো থাকে। তাদের দু’জনের এই বন্ধুত্ব বাংলাদেশের জন্য কিছুটা চিন্তার কারণ বলেই মনে করছিলেন বিশ্লেষকরা। কেননা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ভারত এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই ভারতের লক্ষ্য হবে, আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় আনতে সবরকম সহযোগিতা করা। তবে বাংলাদেশের সেই উদ্বেগের কারণ এই অল্প সময়ের মধ্যেই কেটে গেছে। ইতোমধ্যে ট্রাস্পের সাথে ভারতের সম্পর্ক ভিন্ন রূপ নিয়েছে। আর সেটার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। এই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে সৌজন্যমূলকভাবে বিদেশি কূটনীতিকদের অংশগ্রহণ থাকে। সাধারণত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না। ট্রাম্প অবশ্য প্রচলিত রীতিনীতির ধার ধারেন না। তিনি তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তালিকায় ইউরোপের মধ্যমপন্থীদের বাদ দিয়ে অনেক কট্টর ডানপন্থী ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শপথ অনুষ্ঠানে আমেরিকার শত্রু হিসাবে চিহ্নিত চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আমন্ত্রণ পেলেও বন্ধু হিসাবে পরিচিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমন্ত্রণ পাননি। এ বিষয়টিকে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা ট্রাম্পের নতুন চিন্তা ধারার শুরু বলে মনে করছেন।চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ দীর্ঘদিনের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার সে যুদ্ধের হয়তো অবসান ঘটাতে চান। সেজন্য তাঁর আক্রমণের দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভারতের দিকে ঘুরিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত বিকল্প পথ খুঁজছে এবং তারই অংশ হিসেবে তারা নীরবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার দিকে ঝুঁকছে। এটি একটি বড় ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার সপ্তাহ কয়েক আগেই ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোকে একটি কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘পারো তো অন্য কোনো বেকুব খুঁজে নাও (এখানে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ব্রিকস দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে বেকুব পেয়ে তার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে; কিন্তু এখন থেকে আর তা চলবে না)’। একই সঙ্গে ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, যদি ব্রিকসের ৯টি সদস্যদেশ ডলারের বৈশ্বিক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের পণ্য আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্পের এই হুমকি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় দেওয়া প্রতিশ্রুতির অনেক পরে এসেছে। ভোটের প্রচারণার প্রথম দিনেই তিনি কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা বলেছিলেন। ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী নীতির প্রধান নিশানা হলো চীন। আর সে পরিপ্রেক্ষিতে চীন ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। এটি অবাক করার মতো কিছু নয়। কারণ, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ ক্রমেই বাড়ছে। তবে ট্রাম্প তাঁর আক্রমণের দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও ব্রিকসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভারতের দিকে ঘুরিয়েছেন। ডলারের প্রতি সমর্থনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে এখন পর্যন্ত ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের নীতি ভারতের জন্য এখন একটি বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তাঁর নীতি ভারত সরকারকে নিজের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করেছে। গত জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এর পর থেকে নরেন্দ্র মোদির পছন্দের ভারতীয় সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্মী এবং হিন্দু আধিপত্যবাদী মিত্ররা এই গণবিক্ষোভকে সিআইএর শাসন বদলানোর ‘অপারেশন’ হিসেবে চিত্রিত করেছে। এমনকি তাদের কেউ কেউ সতর্ক করে বলেছে, ‘আমেরিকান ডিপ স্টেট’ ভারতকেও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারে। এর পর থেকে মোদির দল বিজেপি স্পষ্টভাবে মার্কিনবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে। তারা অভিযোগ করছে, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের বড় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। মোদির ঘনিষ্ঠ মিত্র আদানি যুক্তরাষ্ট্রে সিকিউরিটিজ জালিয়াতি ও ঘুষের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। বিজেপি এ ঘটনাকে ভারতের সরকারকে দুর্বল করার একটি চেষ্টা হিসেবে দেখছে। এ ধরনের মনোভাব দীর্ঘদিনের ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিপরীত এবং এটি শীতল যুদ্ধের সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন আনুষ্ঠানিক জোটনিরপেক্ষ ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকেছিল। এই পরিবর্তনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এর মধ্যে বৈশ্বিক নেতৃত্ব হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সামর্থ্য ও ইচ্ছা কমে যাওয়ার পাশাপাশি চীন ও ভারতের নিজেদের কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে প্রধান কারণ বলা যেতে পারে।আসলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে যাওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতের মতো এমন কিছু দেশের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে, যে দেশগুলো প্রতিরক্ষার জন্য আর আগের মতো ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করে না। এ সব নানা সমীকরণকে সামনে রেখে ট্রাম্প তার এ মেয়াদে ভারত নীতির যে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন সেটা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই স্বস্তির বিষয়। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন বিশ্ববরেণ্য আইকনিক ব্যক্তিত্ব। তার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে মধুর সর্ম্ক দেখেছি তা সত্যি আমাদেরকে গর্বিত করে। বিশ্ব বরেণ্য অর্খনীতিবিদ শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের সাথে শুধু ডেমোত্র্যাট না, রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসবিশ্বজয়ী ইমেজকে কাজে লাগিয়েডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলবেন এটাই সবার প্রত্যাশা। ট্রাম্পের এ সময়েবাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সর্ম্পক আরও উচ্চ শিখরে পৌঁছাবে এমনটাই দেশবাসী বিশ্বাস করে।