ঢাকাসোমবার , ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পাহাড়িদের নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

তালুকদার রুমী
জানুয়ারি ২০, ২০২৫ ৯:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে হাসিনা-মোদি একজোট হয়ে তাদের দোসরদের দিয়ে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। সেসব ষড়যন্ত্র ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে সরকার সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করে যাচ্ছে। দেশ এখন অনেকটা স্থিতিশীল। তারপরও তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। সর্বশেষ ‘পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’ নামক একটি সংগঠনকে মাঠে নামানো হয়েছে। এই সংগঠন পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ লেখা গ্রাফিতি পুনর্বহালের দাবিতে গত ১৫ জানুয়ারি মতিঝিলের পাঠ্যপুস্তক ভবন (এনসিটিবি) ঘেরাও করতে যায়। তাদের প্রতিহত করতে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেনটি’ নামে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে কয়েকজন আহত হয়। পরদিন ‘পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’ নামধারি সংগঠনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে শিক্ষাভবনের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ যুক্ত করার দাবিতে কারা এদের মাঠে নামিয়েছে? কারা একটি মীমাংসিত বিষয়কে নতুন করে সামনে এনে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছে? কারা এদের নেপথ্যে থেকে উসকানি দিচ্ছে? গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কিছু এনজিও উক্ত ছাত্র সংগঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা এসব ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং করছে। তাদের সংবাদ পরিবেশনের ধরন দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না, পত্রিকাগুলো হাঠাৎ উদ্ভুত ওই ছাত্র সংঠনের পক্ষাবলম্বন করে কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। অথচ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি করে পাখির মতো বাংলাদেশীদের হত্যা করলেও এসব সংবাদ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে না। এমনকি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যে গণহত্যা চালিয়েছে, তাও দায়সারাভাবে তুলে ধরতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে চিহ্নিত পত্রিকাগুলো শেখ হাসিনা ও ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে বলে অনেকের অভিযোগ। বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে ‘আদিবাসী’ বলে কিছু নেই। যেসব পাহাড়ি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নিজেদের ‘আদিবাসী’ বলে দাবি করে, তারা মূলত শরনার্থী। মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, ভারত থেকে এসে তারা পাহাড়ে বসতি স্থাপন করেছে। চারশ’-পাঁচশ’ বছর আগের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, পাহাড়ে তাদের কোনো বসতি বা অস্তিত্ব ছিল না। কাজেই, তারা ‘আদিবাসী’ এ দাবি সঠিক নয়। ‘আদিবাসী’, ‘সান অফ সয়েল’ বা ভূমিপুত্র বলতে যা বোঝায়, তা তারা নয়। ‘আধিবাসী’ দাবিকারিদের আগে অনাদিকাল থেকে এখন যারা বাঙালী বলে পরিচিত তারাই বাংলাদেশের আদিবাসী। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাররিজিন ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘রেড ইন্ডিয়ান’রা আধিবাসী। আজকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের যারা নাগরিক, তাদের সিংহভাগই অভিবাসী। প্রকৃত ‘আদিবাসী’রা অত্যন্ত ক্ষুদ্র জাতিতে পরিণত হয়েছে। তারা অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে পাহাড়ি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী দেশের অন্যান্য নাগরিকদের তুলনায় অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। সরকারি চাকরিতে তাদের জন্য ‘কোটা’ও সংরক্ষিত রয়েছে। অথচ পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালি বা সারা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য এ ধরনের কোনো কোটা নেই। সেখানের বাঙালিরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তুলনায় অনেক কম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, পাহাড়িরা এক সময় কিছু বৈষম্যের শিকার হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পাহাড়ে বসবাসরত সকল নাগরিকের উন্নয়নে একটি ‘রোডম্যাপ’ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থাসহ পাহাড়িদের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের সহায়তা দিচ্ছে। এত সুযোগ-সুবিধা লাভের পরও কেন তারা সাংবিধানিকভাবে মীমাংসিত একটি বিষয় নিয়ে নিজেদের ‘আদিবাসী’ দাবি করছে? এর পেছনে যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত রয়েছে, তা দেশের মানুষ বহু আগে থেকেই জানে। তারা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’কে উসকে দিচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এর সাথে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কিছু পত্রপত্রিকা ভূমিকা রাখছে। পাহাড়িদের অযৌক্তিক দাবি, আন্দোলনের পক্ষাবলম্বন করছে। পান থেকে চুন খসলেই ‘গেল গেল’ বলে রব তুলছে।পাহাড়ি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কিছু মানুষ বুঝে হোক, না বুঝে হোক, ‘আদিবাসী’ ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে আসছে। তাদের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। বুঝতে হবে, তারা ‘আদিবাসী’ নন। এটা মীমাংসিত বিষয়। অন্যান্য নাগরিকদের মতো তারাও এদেশের নাগরিক। এটাও জানতে হবে, তারা অন্যসব নাগরিকের তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করছে। এ বাস্তবতা তাদের মেনে শান্ত থাকা উচিত। ষড়যন্ত্রকারীরা ‘আদিবাসী’ ইস্যু তুলে ধরে দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে, সে ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। সরকারের উচিত, এর পেছনে যেসব ষড়ন্ত্রকারী রয়েছে, তাদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাদের চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। ছাত্র-জনতার অবিস্বরণীয় গণঅভ্যুত্থনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর যে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, তা নস্যাৎ করতে সর্বত্র চলছে গভীর ষড়যন্ত্র। এখন আদিবাসীদের দিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। পুলিশ, র‌্যাব, প্রশাসন, আদালতসহ সকল সেক্টরে পালিয়ে যাওয়া হাসিনা সরকারের দোসররা বিভিন্নভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থিতিশীল হয়ে একটা শান্ত. সুন্দর পরিবেশে যাতে কাজ করতে না পারে সে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার সরকারের প্রেতাত্মারা। প্রায় ১৮ বছর ধরে হাসিনা সরকার সারাদেশে তার দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী ও সংগঠন দিয়ে মানুষকে হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন ও দখলদারিত্ব চালিয়ে যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তা স্বল্প সময়ে নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। এজন্য সময় প্রয়োজন। এর মধ্যে পুলিশ বাহিনীকে দলীয় ক্যাডার দিয়ে সাজানোয় তারা এখনো আন্তরিকভারে কাজ করছে না। এতে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দলীয় এই পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রের কর্মচারি না হয়ে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের কর্মচারি হিসেবে রয়ে গেছে। প্রশাসন, র‌্যাব, সেনাবাহিনী এবং আদালতেও স্বৈরাচার হাসিনার দোসররা রয়ে গেছে। তারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে ছাত্র-জনতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু র‌্যাব, পুলিশ, প্রশাসন বা বিচার বিভাগই নয় দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে ব্যবহার করেও গভীর ষড়যন্ত্র করেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট হচ্ছে, তাদের মন্দিরে হামলা হচ্ছে এ ধরনের অপপ্রচার বেশ জোরালো ভাবে করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এর কোন সত্যতা নেই। এসব মিথ্যা অপপ্রচারকে পুঁজি করে হিন্দু সম্প্রদায়কে মাঠে নামানো হয়েছে। তারা শহবাগে বিক্ষোভ করেছে। তাদেরকে ইন্দন দিয়েছে ভারত এবং সে দেশের অর্থে চালিত ইসকন নামের একটি প্রতিষ্ঠান এমন বদ্ধমূল ধারণা এখন এদেশের মানুষের মনে। আর এই হিন্দুদের বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা। বিবিসির এক অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত থেকে হিন্দুদের ওপরে ‘অত্যাচার’র ভুয়া পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপরে ‘ব্যাপক অত্যাচার’ হচ্ছে বলে যেসব ভুয়া পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার বেশিরভাগই ভারতীয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছিল বলে ফ্যাক্ট-চেকাররা নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকেও এধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, এমনটাও ফ্যাক্ট-চেকাররা বলছেন। এ বিষয়ে হিন্দু মহাজোটের সভাপতি এডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক স্পষ্ট করে বলেছেন, শেখ হাসিনা হিন্দুদের ওপর চেপে সঙ্কট উত্তরণের চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেরিত একটি ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, বর্তমানে আবার কিছু নিরীহ হিন্দুদের ওপরে হামলা হচ্ছে। যাদের টাকা-পয়সা আছে, বাসার আশপাশে কিছু জমিজমা নিয়ে বিরোধ আছে তাদের ওপরে কিছু দুষ্কৃতকারী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করছে। এর মধ্যে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের একটা বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। সেখানে একজন বিএনপি নেতার কথা বলে ডাকাতি করেছে। এরপর তাদের আটক করার পরে দেখা গেল আওয়ামী লীগের কর্মী। আসলে বাংলাদেশকে অস্থির করতে ভারত এখনো তাদের অনুগত পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে গোপনে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এর পর ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারে প্রতিবাদে সনাতনীরা গত ২৫ নভেম্বর ডিবি কার্যালয় ঘেরাও করে। ২৬ নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে তার সমর্থকরা প্রিজনভ্যান ঘিরে রাখে। পুলিশ তাদের সরাতে গেলে ইসকন নেতাকর্মীরা সেখানে ব্যাপক হামলা ও ভাংচুর চালায়। তারা চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এছাড়া ওই এলাকায় অনেক গাড়ি ভাংচুর করেছে, মসজিদে হামলা চালিয়েছে। এ সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে গোটা সময়টাতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও আন্দোলনের নামে সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর এবং গণদুর্ভোগ চরমে নেয়ার অপপ্রয়াস চলেছে পূর্বাপর। এখনো এর অবসান ঘটেনি। ভারতে বসে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা টেলিফোনের মাধ্যমে তার ফেলে যাওয়া নেতাকর্মীদের প্ররোচণা ও উসকানি দিচ্ছেন মাঠে নামতে, অরাজকতা ও নাশকতা করতে। ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে ও পরিকল্পনা মোতাবেক এসব হচ্ছে। তবে দেশের জনগণ এসব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত রুখে দিতে এখন ঐক্যবদ্ধ।