কক্সবাজারের ঈদগাহ রশিদ আহমদ কলেজ মাঠে বাণিজ্য মেলার নামে জুয়া ও অশ্লীলতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায় যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দায়ভার নিতে হবে। ২০ জানুয়ারি বিকাল দুইটাই কলেজ গেটের চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কে এক বিশাল মানববন্ধনে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। মানববন্ধনটির আয়োজন করে ঈদগাঁও এলাকাবাসীসহ সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা। পূর্ব ঘোষিত সময়সূচী অনুযায়ী এলাকার বিভিন্ন বয়সী ধর্মপ্রাণ মুসলমানগন মানববন্ধনে অংশ নেন। এতে বাণিজ্য মেলার নামে জোয়ার আসর, অশ্লীল নাচ- গানসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। তারা জীবনের বিনিময়ে হলেও এ মেলা প্রতিহতের অঙ্গীকার করেন। প্রতিবাদ সমাবেশে মেহের ঘোনা, চান্দের ঘোনা, সাতঘরিয়া পাড়া ও ভাদিতলার স্থায়ী অধিবাসীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনের বক্তারা উল্লেখ করেন, গত ১৬ ই ডিসেম্বর ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চতুর্দিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন গ্রুপের মারামারির কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। যা এলাকার শান্তি কামি মানুষের আশাকে ভঙ্গ করে দেয়। বক্তারা বলেন, কতিপয় বহিরাগত অসাধুচক্র বাণিজ্য মেলার নামে জুয়া ও অশ্লীলতা উৎসবের আয়োজন করার পাঁয়তারা করছে। বারুই ধারাবাহিকতায় এ চক্রটি ২১ জানুয়ারি থেকে ঈদগাহ রশিদ আহমদ কলেজ মাঠে ক্ষুদ্র, কুটির শিল্প এবং বস্ত্র মেলার নামে জুয়া ও অসামাজিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থায় চরম অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, কলেজের চতুরপার্শে বিরাট এলাকা অরক্ষিত ও ঝোপঝাড়ে ভরপুর। বর্তমানে ঈদগাহ উপজেলা সহ বিভিন্ন স্থানে খুন-খারাবী ও অপহরণের মতো মারাত্মক ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় অরক্ষিত পরিবেশে বাণিজ্য মেলার আয়োজন হীতে বিপরীত হয়ে যাবে। মেলায় নারী-শিশুসহ বিভিন্ন লোকের সমাগম হলে খুন-খারাবি, অপহরণ ও নারীদের যথেষ্ট শ্লীলতাহানির সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকার প্রতিবাদীরা আরো বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে গত ডিসেম্বর দীর্ঘ বন্ধ ছিল। চলতি জানুয়ারি মাসে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় একাডেমিক এরিয়ায় মেলার নামে বেহায়াপনা শুরু হলে মেলার চতুর্দিকের ৩ /৪ হাজার ছাত্রছাত্রীর জীবন চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। ব্যাঘাত ঘটবে তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনের। বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক দুইদিন ব্যাপী বিজয় মেলা উদযাপনের পরও একাডেমিক এরিয়ায় আবারো বাণিজ্য মেলা আয়োজনের হেতু কি তা এলাকাবাসীর বোধগম্য হচ্ছে না। এ ধরনের উদ্যোগ স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। প্রতিবাদীরা আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, এ মেলা কে কেন্দ্র করে মারামারি, খুন-খারাবি, অপহরণসহ নানা নেতিবাচক ঘটনার জন্ম দেবে। যা এলাকার স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক বিঘ্ন হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী উক্ত মেলার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। আয়োজক কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা থাকায় অসাধু ও সুযোগসন্ধানী চক্র কর্তৃক আয়োজিত গণবিরোধী এ মেলা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান। নচেৎ যে কোন মূল্যে এ অনৈসলামিক কার্যকলাপ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এলাকাবাসী সর্বাত্মক প্রস্তুত বলে হুঁশিয়ার করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা, লেখক ও উন্নয়ন চিন্তক নুরুল হক নুর, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার গিয়াস উদ্দিন বাহার, আলেমে দ্বীন মোকতার আহমদ, রাজনৈতিক নেতা মোহাম্মদ রিদুয়ান, মানবিক কর্মী সাদ্দাম হোসেন রিফাত, সমাজকর্মী নুরুল ইসলাম, স্থানীয় নুরুল ইসলাম বাঙ্গালী প্রমূখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রবিউল আলম রবি। এলাকাবাসীর উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক, আলী আহমদ, আবু সৈয়দ, জামশেদ উদ্দিন, রমজান আলী, মোহাম্মদ ফয়সাল, জসীমউদ্দীন, ইমাম হোসেন, সিরাজুল মোস্তফা, বেলাল উদ্দিন, কলিমুল্লাহ, কাওছার উদ্দিন, জিহাদী, আজিজুল হকসহ এলাকাবাসী। পরে এলাকাবাসীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ ও রশিদ আহমদ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বরাবরে পাঠানো হয়।