ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন হলেও রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে স্বৈরশাসকের সহযোগীরা এখনও বহাল তবিয়তে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন ভাতাতি নিলেও মানসিকতার কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না তাদের মধ্যে। বরঞ্চ তাদের হুমকি ধমকি আরও বেড়ে গেছে। এতে গ্রাহকরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন। গ্রাহকগণ ডেসকোর নিয়ম কানুন অনুসরণ করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মিটার সংগ্রহ করতে গিয়েই প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ডেসকোর ল্যাবে কর্মরত চিহ্নিত কয়েকজন প্রকৌশলীর খামমখেয়ালীপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে কেউ কেউ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করার পর এখন তারা ঘাটে ঘাটে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কারণ এই মিটার সিন্ডিকেটের হোতারা সংঘবদ্ধ হয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে সাধু সেজে কিছুটা হলেও আস্থা অর্জন করেছেন। তারা ঐসব অভিযোগকারীর চরিত্র হননে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরের আশ্বাস পেয়ে মিটার সিন্ডিকেটের হোতারা বর্তমানে আরও বেপরোয়া আচরণ প্রদর্শন করছে। তারা হুমকি দিয়ে বলছেন, ল্যাবের আশাপাশে যেন অভিযোগকারীদের দেখা না যায়। এ যেন অনেকটা সন্ত্রাসী কায়দায় দমনের অপচেষ্টা। এতে অভিযোগকারীদের মাঝে আতঙ্ক ভর করেছে। অনেকটা স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আচরণের মতোই বলে মন্তব্য করেন ভুক্তভোগীরা। শেখ হাসিনাও মনে করতেন তিনি কোন ভুল করতে পারেনা না। এখানেও সেই অবস্থা বিরাজমান। ডেসকোর মিটার সিন্ডিকেটের হোতারা যেন সবাই সাধু। তারা নিজেদের সৎ প্রকৌশলী দাবী করেন। অথচ আচরণ অত্যন্ত নোংরা, স্বেচ্ছাচারি ও ভয়ানক। কথায় কথায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন তারা। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট মিটারের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ভেংগে ফেলেন মিটার সিন্ডিকেটের হোতারা। আবার উক্ত সরঞ্জামাদির ‘ডাইছ’ এর সামান্য ক্রটি দেখিয়ে ল্যাবে পরীক্ষা না করেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হলে ডেসকোর ল্যাবের প্রকৌশলীরা চুপসে যান। ভুক্তভোগীরা বলছেন উক্ত প্রকৌশলীরা অনেক আগেই খামখেয়ালীপনার সীমা লঙ্ঘন করেছেন।
অভিযোগের স্তুপ
বিগত দিন থেকে বর্তমান সময়ে পর্যন্ত ডেসকোর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট সেন্ট্রাল ল্যাবে কর্মরত প্রকৌশলীদের অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা ও খামখেয়ালিপনা নিয়ে বারবার অভিযোগ করার পরও কোন প্রতিকার মেলেনি। এ কারণে তারা আরও বেপরোয়া। নির্বাহী প্রকৌশলী রেজওয়ান হোসেনের আস্কারা পেয়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ এবং উপ-সহকারি প্রকৌশলী আশরাফ উল্ল্যাহ চৌধুরী কাউকে আমলে নেন না। তারা মনে করছেন এটা তাদের পৈতৃক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অথচ তারা প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারি। গায়ে মানে না আপনি মোড়ল-এমন ভাবখানা দেখান নির্বাহী প্রকৌশলী রেজওয়ান হোসেন। তিনি নিজেকে সৎ প্রকৌশলী দাবি করেন। কিন্তু তার নানা অনিয়েমর প্রসঙ্গে টেনে ভুক্তভোগীরা বলছেন, সততার মানদণ্ড কেমন এবং এর রং কি। এটা পরিমাপ করার যন্ত্র পৃথিবীতে আবিস্কার হয়েছে কি না? তিনি নিজেকে নিজে সৎ বললেই তো সার্টিফিকেট নেওয়া যায় না। অভিযোগ রয়েছে, যাদের আচরণ অত্যন্ত স্বেচ্ছাচারি তারা নিজেদের কেমনে সৎ দাবি করেন। দুর্নীতিবাজরা দীর্ঘদিন ল্যাবে কর্মরত থাকায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। যে কারণে তাদের টিকিটি কেউ স্পর্শ করতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে অভিযোগ দায়ের করেও কোন প্রতিকার মিলছে না।
ভারতীয় সিকুর মিটার প্রীতি
ভারতীয় সিকোর মিটার সিন্ডিকেটের হোতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পর ল্যাবে কর্মরত স্বেচ্ছাচারি প্রকৌশলী রেজওয়ান হোসেন এবং দুর্নীতিবাজ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ ও উপ-সহকারি প্রকৌশলী আশরাফ উল্ল্যাহ চৌধুরীর প্রতি বিশেষ দুর্বলতা বেড়েছে ম্যানেজমেন্টের। তাদের সাহস দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়ে তারা এখন খোশ মেজাজে আছেন। তাদের বলা হয়েছে গণমাধ্যমে লিখে কিছুই হবে না। ‘সিকুর’ মিটার নিয়ে গণ মাধ্যমে যতই সংবাদ প্রকাশিত হোক না কেন কর্তৃপক্ষের আস্কারায় তারা এখন আরও বেপরোয়া বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানায়। গ্রাহক হয়রানি বন্ধ, মিটার সিন্ডিকেট প্রতিরােধ, ল্যাবে কর্মরত প্রকৌশলীদের স্বেচ্ছাচারিতা দমন এবং সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে সচেতনমহল বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।