ঢাকামঙ্গলবার , ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে

তালুকদার রুমী
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫ ১০:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অব্যাহত চাপের মুখে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যখন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারসহ সরকার পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে তখনই রাজপথে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী, সাত কলেজসহ তিতুমীর শিক্ষার্থীরা। তাদের বহুমুখী দাবিতে আন্দোলন যেন সরকারের জন্য গলায় ফাঁসের অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চতুর্মুখী এ আন্দোলন শুধু সরকারের জন্যই অস্বস্তিকর নয়, পুরো রাজধানীবাসীর জন্য নিত্যদিনের সীমাহীন দুর্ভোগেরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দাবি-দাওয়া জানানোর প্রতিযোগিতা চলছে। সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারী, এমন কি হকার-রিকশাওয়ালা পর্যন্ত দাবি-দাওয়ার মিছিলে শামিল হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ৫ আগস্ট অভূতপূর্ব গণআন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সেই শিক্ষার্থীদেরও একাংশ আন্দোলনে নেমেছে। যৌক্তিক-অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে, রাস্তা অবরোধ হচ্ছে, গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে। মানুষ আন্দোলকারীদের কাছে অসহায় ও জিম্মী হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেউ দাবি-দাওয়া নিয়ে সচিবালয়, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ধারেকাছে ভিড়তে পারত না। এখন এসব বাসভবন-কার্যালয়কে ঘিরেই প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন আন্দোলনের। এমনকি এসব বিক্ষোভ-প্রতিবাদ কর্মসূচি ঠেকাচ্ছেও না অন্তর্বর্তী সরকার। এতে করে সৃষ্ট যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভুগতে হচ্ছে নগরবাসীকে। লাখো মানুষ অফিস শেষে পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। তিন দিন আগে সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজটির সামনের রাস্তা আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। ফলে মহাখালী থেকে গুলশান পর্যন্ত রাস্তার যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে হঠাৎ করে রাস্তা বন্ধ করার পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যাত্রীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হলেও তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বেন না বলে ঘোষণা দেন। এদিকে জুলাই আন্দোলনে আহতদের পুনর্বাসন, ক্যাটাগরি পদ্ধতি বাতিলসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে গত রোববার সকালে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত বেশ কয়েকজন। এর কিছুক্ষণ পরই আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবন, ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে অবস্থান নেন আহতরা। এসব এলাকা দিয়ে যানবাহন যেতে দেওয়া হয়নি। শুধু রোগী বা অ্যাম্বুলেন্স দেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, দেখা দেয় তীব্র যানজট। এছাড়াও রাজধানীর হাইকোর্ট মাজার চত্বরে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরি হারানো পুলিশ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। এমনকি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে নৃশংস জুলাই হত্যাকা-ে জড়িতদের সেইফ এক্সিট দেওয়ার প্রতিবাদে ও ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রোববার দুপুর ২টা থেকে রাজু ভাস্কর্য থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে ইনকিলাব মঞ্চ। এদিকে রাজধানীতে নানামুখী আন্দোলনের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। এমনকি লাগামহীন এসব আন্দোলনের ফলে বেচাকেনাও বন্ধ হয়ে যায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থায় আইন করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন, দাবি-দাওয়াকারীরা এতদিন কোথায় ছিল? স্বৈরাচারের আমলে তো তাদের রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। কথা পর্যন্ত তারা বলতে পারেনি। সত্য বটে, স্বৈরাচারের আমলে অনেক ক্ষেত্রে অন্যায়-অনাচার, বৈষম্য-বঞ্চনা ও অবিচার হয়েছে। মানুষ যখন মুক্ত হয়েছে, কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, দাবি-দাওয়া আদায়ের অধিকার পেয়েছে, তখন এসবের প্রতিকারে সোচ্চার হয়েছে। এর মধ্যে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। কিন্তু সব কিছুরই একটি অনুকূল সময় আছে। অন্তর্র্বতী সরকার এমনিতেই নানা সংকট-সমস্যার সম্মুখীন। তার ওপর সুনির্দিষ্ট কিছু দায়িত্বও আছে, যা দেশ ও জাতির আগামী দিনের পথচলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমতাবস্থায়, দাবি-দাওয়ার মিছিল যদি চলতে থাকে তবে সরকারের মূল দায়িত্ব পালনে বিঘœ সৃষ্টি হতে বাধ্য এবং হচ্ছেও। এটা কারো অজানা নেই, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হতে চললেও পতিত স্বৈরাচার ও তার ভারতীয় সহযোগীদের ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। তারা যৌথ উদ্যোগে নানাভাবে অন্তর্র্বতী সরকারকে অহেতুক সংকটে ফেলার, ব্যস্ত রাখার এবং ব্যর্থ করে দোয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘আনসার লীগ’, ‘রিকশা লীগ’, গার্মেন্ট লীগ’, ‘সনাতন লীগ’, ‘ইসকন লীগ’ ইত্যাদির দাবি-দাওয়া ও তৎপরতা থেকে এটা বুঝতে মোটেই বেগ পেতে হয় না। এ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে শতাধিক দাবি-দাওয়ার আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে। আন্দোলন এখনো চলছেই। সম্প্রীতি ইবতোদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা ঢাকার রাস্তায় আন্দোলনে নেমে পুলিশের মারপিটের শিকার হয়েছেন। পরে অবশ্য দাবি-দাওয়া আদায়ের আশ্বাস পেয়ে ঘরে ফিরে গেছেন। তাদের দাবি যৌক্তিক ও মানবিক। ওদিকে হঠাৎ করেই রেলওয়ের রানিং স্টাফরা রানিং অ্যালাউন্স, পেনশন ও অনুতোষিক সুবিধার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন। ট্রেন চলেনি। যাত্রীদের অশেষ দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। পরে সরকারি আশ্বাস পেয়ে তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। কারো অজানা নেই, ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা অনেক দিন ধরে আন্দোলন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার কারণেই তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত ও নানা রকম সংকটের মুখোমুখী হতে হচ্ছে বলে তারা দাবি করে আসছিল। অধিভুক্তি বাতিল ও অন্যান্য দাবিতে তারা বিক্ষোভ-সমাবেশ, রাস্তাদখল থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পর্যন্ত জড়িত হয়েছে। সরকার সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করেছে। এখন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ওই কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। তারা অনশন করেছে, রাস্তা অবরোধ করেছে, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গত শনিবার তারা বিকাল চারটার পর মহাখালী-আমতলী-গুলশান সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ নামের কর্মসূচি পালন করেছে। এতে পুরো এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চরম ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, সাত কলেজকে নিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। কাজও চলছে। এমন কি, তিতুমীর কলেজের বিষয়টিও বিবেচানায় আছে। এ প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রণালের তরফে বলা হয়েছে, বিদ্যমান বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। তারপরও তারা তাদের দাবিতে অনড়। এ ধরনের আচরণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেউ আশা করে না। আমাদের শিক্ষার্থীদের একটা মর্যাদাপূর্ণ ইতিহাস আছে, ঐতিহ্য আছে, আত্মত্যাগের মহিমা আছে এবং বিজয়ের অনন্য গৌরব আছে। ভাষা আন্দোলন থেকে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত সব আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের অগ্রণী ভূমিকা ও ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। সেই শিক্ষার্থীদের একাংশ যৌক্তিক-অযৌক্তিক দাবি নিয়ে হাজির হবে, কীভাবে তাদের কাছ থেকে এটা আশা করা যায়? অনেকরই মনে আছে, অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এইচএসসি পরীক্ষায় সব বিষয়ে পরীক্ষা না দিয়ে ফলাফল দেয়ার আবদার জানায় শিক্ষার্থীরা। সরকার তা মেনে নেয়। শিক্ষার্থীরা তাদের এরকম অন্যায় দাবি-দাওয়ার সূত্র ধরে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করবে কিংবা রাস্তায় অবরোধ করে জনগণকে জিম্মি করবে, এটা মোটেই বরদাশতযোগ্য হতে পারে না। অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত শ্রমিক, হকার বা রিকশাওয়ালা যা করতে পারে, সেটাই যদি শিক্ষিত-সচেতন শিক্ষর্থীরা করে তবে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য থাকলো কোথায়? বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার নরম সরকার। নরম মাটিতে বিড়াল যেমন পা আঁড়ায় তেমনি নরম সরকারের ওপরও ন্যায়-অন্যায়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক অনেক চাপ আপতিত হয়। এতে সরকার বিপাকে পড়ে, জনগণ বিপদে পড়ে। সেই অবস্থাটাই এখন চলছে। পতিত স্বৈরাচার এখন দাঁত বের করছে। অন্যদিকে সরকারও আছে নানা সমস্যায়। এটা সরকারের জন্য মোটেই ভালো সময় নয়। সরকারকে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। যে কোনো পক্ষের দাবি দাওয়ার প্রশ্নে আলোচনাই উৎকৃষ্টপন্থা। আলোচনার মাধ্যমেই যৌক্তিক সমাধান নিশ্চিত হতে পারে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি ও জনগণকে জিম্মি করা যাবে না। এটা আন্দোলনকারীদের মনে রাখতে হবে। সরকারকেও উদার ও উন্মুক্ত মনোভাব নিয়ে যে কোনো দাবি ও সংকট নিরসনে সচেষ্ট হতে হবে। সকল ধরনের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া সরকারের দায়িত্বের অংশ ও সক্ষমতার পরিচায়ক। অন্তর্র্বতী সরকার নির্বাচিত সরকার নয় বটে, কিন্তু এ সরকার জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত সরকার। জনইচ্ছা ও জনসমর্থনই এ সরকারের শক্তির ভিত্তি। সরকারকে তাই যে কোনো অপকর্ম, অন্যায়, অবিচার ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। দ্বিধাহীনভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।