ঢাকাশনিবার , ২২ মার্চ ২০২৫
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি: ঠাকুরগাঁও রেড জোনে, ঢাকা সবচেয়ে বিপজ্জনক

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি
মার্চ ২২, ২০২৫ ১১:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে একাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও, সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ তিনটি ভূগর্ভস্থ প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা ভূমিকম্পের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও ইন্ডিয়া প্লেটের কাছাকাছি অবস্থিত এবং এখানে ভূমিকম্পের ইতিহাস বেশ গভীর। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একসময় ঠাকুরগাঁওয়ের নদীগুলোর তলদেশে প্রচুর শাল গাছ পাওয়া যেত, যা প্রমাণ করে যে অতীতে এখানে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ফলে ভূপ্রকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক খরস্রোতা নদীও এক সময় ভূমিকম্পের কারণে বিলীন হয়ে গেছে। ২০০৭-০৮ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো ঠাকুরগাঁওকে ভূমিকম্পের রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর কয়েক দিনের ব্যবধানে নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখা দেয়, যা এ অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক অস্থিরতার প্রমাণ দেয়। কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ভূগর্ভে দুটি প্রধান প্লেট ধাবিত হচ্ছে। ইন্ডিয়া প্লেট পূর্বদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বার্মা প্লেট পশ্চিম দিকে আসছে।বার্মা প্লেটের নিচে ইন্ডিয়া প্লেট ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে, যা ভূমিকম্প সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘সাবডাকশান জোন’, যেখানে ভূত্বকের দুইটি প্লেট একে অপরের নিচে চলে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই অঞ্চলে প্রতিবছর ১ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত সংকোচন হচ্ছে। এর ফলে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে, যা যে কোনো সময় আঘাত হানতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, যদি ৮.৫ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঢাকা শহর। কারণ:অপরিকল্পিত নগরায়ণ – ঢাকায় বিল্ডিং কোড না মেনেই বহু ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।ঘনবসতি – প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৪৯,০০০ মানুষের বসবাস, যা উদ্ধার অভিযানকে কঠিন করে তুলবে।জলাভূমির ওপর নির্মিত ভবন – ঢাকার অনেক এলাকা (উত্তরা, গুলশান, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর) অতীতে জলাভূমি ছিল, যেখানে ভূমিকম্প হলে ভবন ধসে পড়ার আশঙ্কা বেশি। অগ্নিকাণ্ড ও উদ্ধার সংকট – ভূমিকম্পের পর গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণ ও আগুন লাগার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। তিনি আরও জানান,যদি ঢাকার ১% বিল্ডিং ধসে পড়ে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যাবে। ৫-৭ লাখ মানুষ ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়বে। উদ্ধার কাজ ধীরগতিতে চললে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে আরও অনেকের মৃত্যু হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই প্রয়োজন জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা, নইলে বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হবে না। কিছু সুপারিশ হলো: বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মানা , বিশেষ করে নতুন ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প সহনশীল নকশা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পুরোনো ভবন সংস্কার ,যেসব ভবন দুর্বল কাঠামোর, সেগুলো দ্রুত সংস্কার করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ,ভূমিকম্প হলে কীভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখা যায়, সে সম্পর্কে জনগণকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। জরুরি উদ্ধার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়ন , সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও, সিলেট ও ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে এটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে, ভবিষ্যতে চরম মাশুল গুনতে হতে পারে।