সারা দেশে সব অবৈধ ইটভাটা চার সপ্তাহের মধ্যে গুঁড়িয়ে দিতে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার এ আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, ড্রাম চিমনি ও ফিক্সড চিমনি এবং ইটভাটার বর্তমান মেয়াদ পর্যন্ত লাইসেন্স এবং পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকলে তা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আদালত আরো উল্লেখ করেন, যে পদ্ধতিতে ইটভাটা পরিচালনা করা হোক না কেন লাইসেন্স না থাকলেই সেটা অবৈধ। আদেশে অপসারণ ধ্বংস করার আদেশ দেয়া আছে। এই নির্দেশ পাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় অবৈধ ইটভাটা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে গুড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু মাদারীপুর জেলার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে এই জেলার ৭৬টি ইট ভাটা আছে। এরমধ্যে অর্ধেক পরিমান ইটভাটাই অবৈধ। এই অবৈধ ইটভাটাগুলো বহাল তবিয়তে প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে। মোটা অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই ইটভাটা চলছে বলে জেলাজুড়ে গুঞ্জন রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় অধিকাংশ ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কোন রাগঢাক না করে ইট ভাটায় অবৈধ স্ব-মিল বসিয়ে বড় বড় গাছ কেটে কাঠ করা হচ্ছে। সেই কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ইট। জেলার অধিকাংশ ইটভাটা অবৈধ হলেও কোথাও ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়ার বা বন্ধ করে দেয়ার দৃশ্য চোখে পড়েনি। মাদারীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম শরিফুল ইসলাম জানান, মাদারীপুরে আমাদের নতুন অফিস। এই অফিসে কাজ করছি আমিসহ মোট ৩ জন। তারপরও আমরা নিয়মিত অবৈধ ইটভাটায় অভিযান করছি। এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি ইটভাটাকে ৩৫ লাখ টাকার মতো জরিমানা করা হয়েছে।
ইটভাটাগুলোর আশেপাশের অনেক বাসিন্দারা ভাটা মালিকদের ভয়ে কথা বলতে সাহস পায়না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক বাসিন্দা বলেন, ইটভাটাগুলো ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। যেখানে ইটভাটা আছে তার আশেপাশের জমিতে ফসল ভাল হয় না। এছাড়া ফল গাছে ফল হয় না। আমরাও বিভিন্ন অসুখ ভুগতেছি। আমরা যদি ইট ভাটার বিরুদ্ধে কিছু বলতে যাই তাহলে আমাদের বিভিন্ন ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এমনকি আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য পায়তারা করে ভাটা মালিকরা। সিনিয়র আইনজীবী আবুল হাসান সোহেল জানান, যদি কোন নাগরিক বা কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন না করে তাহলে সেটা আদালত অবমাননার সামিল হবে। যেহেতু অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে উচ্চ আদালত জেলা প্রশাসক মহোদয়দের নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে নির্দেশ মোতাবেক স্ব-স্ব জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দিবেন বা ভেঙ্গে দিবেন। যদি কোন জেলা প্রশাসক উচ্চ আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন না করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আদালত চাইলে আদালত অবমানার দায়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা কয়েকটি ইটভাটা বন্ধ করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছি। জেলায় কোন ইটভাটা বন্ধ হয়নি এবং ইটভাটা বন্ধ বা গুড়িয়ে না দিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে গিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের (এডিএম) সাথে কথা বলতে বলেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শাহ্ মো. সজীব বলেন, আমরা কয়েকটি ইটভাটা পানি দিয়ে বন্ধ করে এসেছি। সেই ইটভাটাগুলো আবার চালু করেছে কিনা সে বিষয় আমার জানা নেই। আমাদের ফলোআপ করা হয়নি। ইটভাটা বন্ধ বা গুড়িয়ে না দিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে কিনা একই প্রশ্ন এডিএমকে করলে তিনি জানান, ইটভাটা গুড়িয়ে দিতে যে ইকুপমেন্ট প্রয়োজন তাও আমাদের নেই। আমাদের প্রতিবন্ধকতার প্রতিবেদন তৈরি করে বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়ের কাছে পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছ থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি। আমাদের প্রতিবন্ধকতা আমরা বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছে পাঠিয়েছি। আদালতের বিষয়টি তারা দেখবেন।