যেদিকে দু’চোখ যায় শুধু ধূ-ধূ বালুচর। চৈত্রের উত্তপ্ত গরমে হাসফাস চরাঞ্চলের মানুষের। চৈত্রের গরমের তৃষ্ণা নিবারণে তিস্তার ধূ-ধূ বালুচরে চাষ করা হয়েছে প্রশান্তির রসালো ফল তরমুজ। গ্রীষ্মের প্রখর রোদের তাপে প্রকৃতি যেখানে নির্জীব, সেই মরুময় বালু চরে তরমুজ চাষ করে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে চাচ্ছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মশিউর রহমন ও মোছাঃ নাসরিন বেগম। কাপাসিয়ার বাদামের চরে জেগে ওঠা মালিকবিহীন প্রায় ৫২ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার স্বপ্নে বিভোর ওরা দুইজন। তরমুজের ফলন ভাল হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তরমুজ বাজারজাত করা যাবে আশা তরমুজ চাষি মশিউর ও নাসরিনের। তারা আশা করছেন ভাল দাম পেলে ৫২ বিঘা জমিতে প্রায় ৫ লাখ টাকা লাভ হবে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে এই প্রথম তারা তরমুজ চাষ শুরু করেন। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার হরিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ১০ হেক্টর জমিতে এবার তরমুজ চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। দিন দিন তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে স্থানীয় কৃষকরা। কাপাসিয়ার বাদামের চরের মশিউর রহমান বলেন, আগাম তরমুজ চাষ করতে পারলে ভাল দাম পাওয়া যেত। বর্তমানে ৫০ হতে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হয়তো ২০ হতে ৩০ টাকায় নেমে আসবে। চারা রোপন থেকে শুরু করে ফসল উঠানো পর্যন্ত এক বিঘা জমিতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমির তরমুজ বিক্রি হয় ৪০ হতে ৫০ হাজার টাকা। একই দাবি করে অপর কৃষক নাসরিন বেগম বলেন, রাস্থাঘাট না থাকায় চরের কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের ভাল দাম পান না। যানবাহন না থাকায় চর হতে শহর এলাকায় যে কোন পণ্য সরবরাহ করা কষ্টসাধ্য। ঘোড়ার গাড়ী ও নৌকা ছাড়া শহর বন্দরে পণ্য নেয়ার কোন পথ নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হলে বেশি লাভ হতো। তরমুজ ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, এলাকার তরমুজের স্বাদ আলাদা। তবে সব এলাকার তরমুজ ভাল হয় না। বর্তমানে বাইরের জেলার তরমুজ বেশি বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন দাম কমছে। শুরুতেই ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ৪০ হতে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কাপাসিয়া ইউয়িনের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: লিটন মিয়া বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে কাপাসিয়া ইউনিয়নেই ৭ হেক্টর জমিতে দুইজন কৃষক তরমুজ চাষ করেছে। তারা প্রতিনিয়ত কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে তারা অনেক লাভবান হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রাশিদুল কবির বলেন, তরমুজ একটি মৌসুমি ফল। বালুমাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। সেই আলোকে তিস্তার বালু চরে দিন দিন তরমুজ চাষ বেড়েই চলছে। অল্প খরচে বেশী লাভ তরমুজ চাষে। কাপাসিয়ার দুই কৃষকের তরমুজের ফলন অনেক ভাল হয়েছে। তাদের দেখে গ্রামে অনেকে আগ্রহী হয়ে উঠছে।