
নিজস্ব প্রতিবেদক :
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন ও জামায়াতের গোপন আঁতাত বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিভিন্ন বাম নেতারা।
আবার কেউ কেউ মনে করেন এ রায় দেশবাসীকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।
বুধবার দেয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তারা এমন মন্তব্য করেন।
তবে এ রায় দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তা গ্রহণ করবে না বলেও মনে করেন তারা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এমন রায় আমাদেরকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে, খোলামেলা স্বাক্ষ-প্রমাণ ও যুক্তি-তর্ক নিখুঁতভাবে বিবেচনা করে, আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনাল সাইদীর বিরুদ্ধে ‘মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদানযোগ্য’ একাধিক অপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে রায় দিয়েছিল। সে কারণে ট্রাইব্যুনাল স্বাভাবিকভাবেই সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। এমতাবস্থায় উচ্চতর আপিল আদালতের রায়ে আজ সেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ রদ করে যাবজ্জ্বীবন দণ্ডাদেশ প্রদানের সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে, সাম্প্রদায়িকতাকে পরাভূত করতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে জনগণকে আরো কঠোর সংগ্রাম চালাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ধারায় নতুন গণজাগরণ সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধের নতুন পর্ব সংগঠিত করতে হবে।’
‘সেই লক্ষ্যে প্রস্তুত হতে ও গণআন্দোলন গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান’ জানান তিনি।
‘অপরদিকে গত এক বছর ধরে দেশের মানুষের মনে যে সন্দেহ ছিল যে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সাথে আতাঁত করার চেষ্টা করছে, আসলে এ রায়ের মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হলো’ বলে মনে করেন বালাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছাইফুল হক।
তিনি বলেন, ‘এ রায় হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন।’
ছাইফুল বলেন, ‘তারা এ রায় যেভাবে দেখতে চেয়েছে আসলে সেভাবেই রায় হয়েছে এবং জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে এ রায় দেয়া হয়েছে। এ রায় জনগণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে প্রত্যাখ্যান করবে।’
‘এভাবে গোপন আঁতাত ও সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তার গদি রক্ষার জন্য যে কৌশল নিয়েছে তা আখেরে ভূল বলে প্রমাণিত হবে এবং এটা আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হবে’ বলেও মনে করেন এই বাম নেতা।
‘এ রায় জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে পারেনি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও সমন্বিত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে’ বলে করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ।
তিনি বলেন, ‘তবে এ রায়ের ব্যাপারে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল ৭১’র হত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হবে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন মহলে জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের সমঝোতার যে কথা উঠেছিল তা রায়ের মাধ্যমে জনগণের সেই সন্দেহ বদ্ধমূল হল।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু দেশবাসী জানে ৭১’র অপরাধী কাদের মোল্লার যখন যাবজ্জ্বীবন কারাদণ্ড হয়েছিল তখন সেই রায়ের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণজাগরনের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে তার ফাঁসির রায় কার্যকরে প্রতিয়মান হয়েছিল দেশবাসী কি চায়?’