ঢাকাবুধবার , ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মৃত্যুদণ্ড থেকে ১২ বছর

দৈনিক পাঞ্জেরী
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৪ ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

Saidi1নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ৭ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ বছর এবং ৮ নম্বর অভিযোগের ভিত্তিতে ১২ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
অধিকাংশ বিচারকদের মতামতের ভিত্তিতে ৬, ১১ এবং ১৪ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়।
আমৃত্যু কারাদণ্ড
অভিযোগ-১০: একাত্তরের সালের ২ জুন সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে তার সশস্ত্র সহযোগীরা ইন্দুরকানি থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার হানা দিয়ে ২৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসব বাড়ির মালিকেরা হলেন- চিত্তরঞ্জন তালুকদার, হরেণ ঠাকুর, অনিল মণ্ডল, বিসা বালি, সুকাবালি, সতিশ বালা প্রমুখ। সাঈদীর ইন্ধনে তার সহযোগীরা বিসা বালিকে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। বেসামরিক মানুষের আবাস্থলে আগুন দেওয়া নিপীড়নের শামিল। সাঈদী এ ঘটনায় বাড়িঘর পোড়ানো ও বিসা বালিকে হত্যার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, যা আইনের ৩(২)(এ) ধারায় অপরাধ। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
অভিযোগ-১৬: সাঈদীর নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জনের রাজাকার দল পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তার তিন বোন মহামায়া, অন্ন রানী ও কমলা রানীকে ধরে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তিনদিন ধরে ধর্ষণ করে পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্য অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় এ অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হলেও শাস্তি দেয়া হয়নি।
অভিযোগ-১৯: সাঈদী প্রভাব খাটিয়ে পারেরহাটসহ অন্য গ্রামের ১০০-১৫০ জন হিন্দুকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করে। তাদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হতো। অন্য অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় এ অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হলেও শাস্তি দেয়া হয়নি।
১০ বছর কারাদণ্ড
অভিযোগ-৭ : ৮ মে বেলা দেড়টায় সাঈদী তার সশস্ত্র সাঙ্গপাঙ্গ ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সদর থানার ভাদুরিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম সেলিমের বাড়িতে হানা দেন। সেখানে নুরুল ইসলাম খানকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসাবে চিনিয়ে দেন সাঈদী। পরে তিনি তাকে আটক করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন, যারা তাকে নির্যাতন করে। বাড়ি লুটপাট করার পর যাওয়ার আগে আগুন লাগিয়ে বাড়িটাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়, এটা আইনের ৩(২)(এ) এবং ৩(২)(জি) ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধে সাঈদীকে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্য অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় এ অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হলেও শাস্তি দেয়া হয়নি।
মৃত্যুদণ্ড থেকে ১২ বছর কারাদণ্ড
ট্রাইব্যুনাল বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও ৮ নম্বর অভিযোগে সাঈদীকে ১২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ৮ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৮ মে বেলা ৩টায় সাঈদীর নেতৃত্বে তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তায় সদর থানার চিতলিয়া গ্রামের মানিক পসারির বাড়িতে হানা দিয়ে তার ভাই মফিজ উদ্দিন এবং ইব্রাহিমকেসহ দুই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যান। সেখানে পাঁচটি বাড়িতে কেরসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সেনা ক্যাম্পে ফেরার পথে সাঈদীর প্ররোচণায় ইব্রাহিমকে হত্যা করে লাশ ব্রিজের কাছে ফেলে দেয়া হয়। আর মফিজকে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে সাঈদী ও অন্যদের আগুনে পারেরহাট বন্দরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় সাঈদী সরাসরি অপহরণ, খুন, যন্ত্রণাদানের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিল, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩(২)(এ) ধারা অনুসারে অপরাধ। এ অভিযোগে আপিল বিভাগ সাঈদীকে ১২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন।
প্রামাণিত অভিযোগ থেকে খালাস
অভিযোগ-৬: ৭ মে সাঈদীর নেতৃত্বে একদল শান্তি কমিটির সদস্য পিরোজপুর সদরের পারেরহাটে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওই এলাকায় স্বাগত জানান। তাদেরকে পারেরহাট বাজারে নিয়ে এসে সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষদের বাড়িঘর ও দোকান পাট চিনিয়ে দেন সাঈদী। পরে সাঈদী অন্যান্যদের সঙ্গে এ সকল বাড়ি ও দোকানে হানা দিয়ে মূল্যবান সম্পদ লুট করে। যার মধ্যে সেখানে মুকুন্দ লাল সাহার দোকান থেকে বাইশ সের স্বর্ণ ও রৌপ্য লুট করেন সাঈদী।রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে সংগঠিত এসব কার্যক্রম মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যা আইনের ৩(২)(এ) ধারায় শাস্তিযোগ্য। এ অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন সাঈদী। তবে এ অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হলেও শাস্তি দেয়া হয়নি।
অভিযোগ-১১: ২ জুন সাঈদীর নেতৃত্বে শান্তি কমিটি ইন্দুরকানি থানার টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে যান। সেখানে সাঈদী তার বড় ভাই আবদুল মজিদ হাওলাদারকে ধরে নির্যাতন করেন। এরপর সাঈদী নগদ টাকা, অলঙ্কারাদি ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে যান। এমন অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
অভিযোগ-১৪: মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়ায় যায়। রাজাকারদের আগমন দেখে গ্রামের অধিকাংশ হিন্দু নারী পালিয়ে যান। কিন্তু মধুসূদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী ঘর থেকে বের হতে পারেননি। তখন সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকাররা তাকে ধর্ষণ করেন। এর ফলে স্বাধীনতার পর তিনি একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এ নিয়ে গ্রামে বিভিন্ন কথা ওঠায় শেফালী ঘরামী দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন। পরে এই হিন্দুপাড়ার ঘরে আগুন দেওয়া হয়। এই অভিযোগ থেকেও সাঈদীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।