ঢাকাবুধবার , ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শ্রমিক অসন্তোষ
অস্থিরতায় বন্ধ ১২৭ গার্মেন্ট, বেকার ৩২ হাজার শ্রমিক

দৈনিক পাঞ্জেরী
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৪ ১২:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সাভার প্রতিনিধি

রাজধানীর কাছে হওয়ায় দ্রুততম সময়ে দেশের পোশাক খাতের অন্যতম অঞ্চলে পরিণত হয়েছে সাভার ও আশুলিয়া। একই সঙ্গে পরিচিতি অর্জন করেছে শিল্পাঞ্চল হিসেবেও। তবে শ্রমিক আন্দোলন, কারখানা ভাঙচুর, শ্রমিক নির্যাতন ও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে লাভজনক এসব কারখানা।
বিভিন্ন ইস্যুতে অব্যাহত শ্রমিক আন্দোলনের মুখে গত এক বছরে সম্ভাবনাময় এ শিল্পাঞ্চলে ছোট ও মাঝারি মিলে অন্তত ১২৭টি কারখানা বন্ধ করে দিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে মালিকরা। এতে চাকরি হারিয়েছে অন্তত ৩২ হাজার শ্রমিক।
বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাক কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়লেও গত এক বছরে চিত্র পাল্টে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশিরা এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। অতিরিক্ত দাম দিয়েই গার্মেন্ট পণ্য কিনতে তারা বেছে নিচ্ছে বাইরের বিভিন্ন দেশের পোশাক কারখানা।
শিল্প পুলিশ সূত্রমতে, সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকায় ৮ শতাধিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কাজ করছে ৯ লাখেরও বেশি শ্রমিক। এর মধ্যে গেল বছরের শেষ দিকে শ্রমিক আন্দোলন, কারখানা ভাঙচুর ও রাজনৈতিক কারণে অস্থির হয়ে ওঠে বেশিরভাগ কারখানা। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঠিকমতো অর্ডার সরবরাহ করতে না পারায় কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয় অন্তত ৫৪টি কারখানা। বন্ধ হয়ে কারাখানার মধ্যে রয়েছে আশুলিয়ার জিরানী এলাকার লিবার্টি ফ্যাশন লিমিটেড, বলিভদ্র এলাকার ইন্ট্রাকো ফ্যাশন, নয়ারহাট এলাকার নুরজাহান অ্যাপারেলস লিমিটেডও।
কারখানা বন্ধের কারণ জানতে চাইলে বলিভদ্র এলাকার হাসেম প্লাজায় অবস্থিত ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল আলম বলেন, ‘বিরোধীদলের ডাকা হরতাল, অবরোধের সময় বিদেশি ক্রেতারা কারখানায় এসে পৌঁছাতে অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক বিদেশি ক্রেতা এদেশে বিনিয়োগে অনীহা প্রকাশ করতে শুরু করে। এ কারণে কারখানায় ক্রমশই অর্ডার কমতে থাকে। আর্থিক সঙ্কটের পড়ে শ্রমিকদের মজুরি ঠিকমতো দিতে না পারায় তারা আন্দোলন শুরু করে। এক পর্যায়ে গেল বছরের ডিসেম্বরে কারাখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই।
একই রকম ব্যাখ্যা দেন বন্ধ হয়ে যাওয়া জিরানি এলাকার লিবার্টি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘লিবার্টিতে কাজ করতো ৪ হাজার শ্রমিক। রানা প্লাজার ভবন ধসের পর থেকেই আমার কারখানাটি অযৌক্তিভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অভিযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে কারখানাটি বন্ধ করে দিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হই।’
নুরজাহান অ্যাপারেলসের মালিক সফিউল আলমও বললেন একই কথা। বন্ধ হয়ে যাওয়া অন্য কারখানা মালিকরা অভিযোগ করলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার কমতে শুরু করে। এতে আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হয় মালিকদের। ঠিকমতো মজুরি দিতে না পারায় আন্দোলনে নামে শ্রমিকরা। শুধু তাই নয় ঠিক সময়ে পণ্য রপ্তানি করতে না পারায় বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়ে হারাতে হয় পুঁজিও। এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বন্ধ করে দিতে হয় কারাখানা।

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

একদিকে বিদেশি ক্রেতাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়া অন্যদিকে সরকারের নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই আরো জটিল অবস্থায় পড়তে হয় কারাখানা মালিকদের। শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে না পেরে উভয় সঙ্কটে কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার এ এইচ ড্রিসেস, দস্তগীর অ্যাপারেলস, পৌর এলাকার আড়াপাড়া মহল্লার ফেয়ার নিটিং লিমিটেডসহ সাভার ও আশুলিয়ার আরো ৭৩টি কারাখানা।
সূত্রমতে, বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কারখানার অধিকাংশই নির্ভর করতো বৃহৎ কারখানার ওপর। বড় কারাখানার সঙ্গে সাব-কন্ট্রাকের ওপরই চলতো সেসব কারাখানা। কিন্তু ন্যূনতম মজুরির দাবিতে সৃষ্ট লাগাতার শ্রমিক আন্দোলনের কারণে ক্ষুদ্র কারাখানাগুলো তাদের পণ্য উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ে। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
এছাড়াও ক্ষুদ্র কারাখানাগুলো নির্ভরশীল থাকায় নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই বৃহৎ কারাখানাগুলো শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি গুনতে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তারা কৌশলে সাব-কন্ট্রাকে কাজ না দিয়ে নিজেদের শ্রমিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা শুরু করে। এতে ক্ষুদ্র কারাখানাগুলো অর্ডার হারিয়ে নিষ্ক্রিয় পড়ে। অনেক কারাখানা মূলধন হারিয়ে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
শুধু তাই নয়, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের পর অনেক কারখানা মালিক শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধে বিপাকে পড়েন। এ কারণে তারা কারাখানার উৎপাদন খরচ কমাতে শুরু করেন শ্রমিক ছাঁটাই। আর এতে দেখা দেয় আরো বড় বিপত্তি। ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে শ্রমিকরা ফের আন্দোলন করতে পথে নামে। এমন বিব্রতকর সঙ্কটে সাভার ও আশুলিয়ার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোশাক কারাখানাগুলো রাতারাতি ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে।
সাভারের আড়াপাড়া এলাকার ফেয়ার নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এইচ হাশেমি জানান, তার কারখানায় অন্তত ৫শ শ্রমিক কাজ করতো। কারখানা ছোট হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা তাদের কাজ দিতে অনীহা প্রকাশ করতো। আর এ কারণেই অর্ডারের জন্য বড় কারখানার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়। তবে নতুন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি পুষিয়ে নিতে কারখানা মালিকরা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। তারা ছোট কারখানায় কাজ না দিয়ে নিজস্ব শ্রমিকদের ওপর বাড়তি চাপ দিয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে কাজ না পেয়ে তার কারখানায় বেশ কয়েক মাসের গ্যাস ও বিদুৎ বিল বকেয়া থেকে যায়। এছাড়াও শ্রমিকদের বেতন বকেয়া থাকায় তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে কারখানাটি বন্ধ করে দিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হই।
সাভারের সম্ভাবনাময় শিল্পাঞ্চলে শতাধিক পোশাক কারাখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণাকেই দায়ী করছেন মালিকারা। কারাখানা বন্ধ করে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে মালিকরা জানালেন, বৃহৎ পোশাক কারখানাগুলো বেশিরভাগই সময়ে তাদের অতিরিক্ত উৎপাদনের জন্য ছোট কারখানার ওপর নির্ভরশীল থাকে। তবে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই তারা ক্ষুদ্র কারাখানা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। নিজেদের শ্রমিকদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে অতিরিক্ত উৎপাদন শুরু করেছে। এতে অর্ডার সঙ্কটে পড়ে ক্ষুদ্র কারাখানাগুলো বাধ্য ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।