শেরপুর প্রতিনিধি
দফায় দফায় তারিখ পরিবর্তনের কারণে শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখন তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই ভোটারদের মাঝে। তবে শেষ মূহুর্তে নির্বাচন চার দিন এগিয়ে নিয়ে আসায় প্রার্থীদের এখন রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় অনেক হিসাব নিকাশ করতে হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। তবে শেষ মূহুর্তে বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে এসেছে দলটি। অন্যদিকে, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অনড় থাকায় মূল লড়াইয়ে উঠে এসেছে কোনঠাসা জাতীয় পার্টি।
শেষ মূহুর্তে চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন ছানু (দোয়াত-কলম), জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মো. ইলিয়াস উদ্দিন (কাপ-পিরিচ) এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম (মোটরসাইকেল), বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা বিএনপি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নির্বাহী সদস্য জহুরুল ইসলাম আবু (ঘোড়া) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।প্রথম দিকে নির্বাচনের হিসাবে গড়মিল হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন মিনাল নির্বাচন থেকে সরে আসায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে খুব একটা প্রভাব ফেলতে না পরালেও দলীয় প্রার্থীর অবস্থান খুব ভালো নেই। ব্যক্তি হিসেবে তার সুনাম থাকলেও জনগণের সঙ্গে তার খুব একটা যোগাযোগ না থাকায় নির্বাচনের মাঠে তার নাম এখনও উঠে আসেনি।
এদিকে, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. ইলিয়িাছ উদ্দিন বিগত পাঁচ বছরে এলাকার উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারলেও তার রয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন। তাই মাঠ দখলে রাখতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিকসহ জেলার সর্বস্তরে নেতাকার্মীদের সমর্থন থাকায় নির্বাচনী মাঠ তার জন্য অনেকটা মসৃন হয়ে গেছে।
ইতিমধ্যে গ্রাম থেকে শহরাঞ্চল পর্যন্ত ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টারে। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ মোড়ে মোড়ে মাইকিং করে বা খালি গলায় ভাষণ দিয়ে ছোট খাটো জমায়েত সৃষ্টি করে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মী সমর্থকরা।
এদিকে, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বায়েজিদ হাসান (তালা), বিএনপির শফিকুল ইসলাম (চশমা), জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) এম এ রশিদ বিএসসি (টিয়াপাখি) ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আনু (উড়োজাহাজ) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়লেও এখন পর্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। তবে শেষ পর্যন্ত এ পদেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের মূল লড়াই হতে পারে।
অন্যদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা বেগম (হাঁস), বিএনপি সমর্থিত আয়েশা আক্তার (কলস) ছাড়াও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সুলতানা রাজিয়া (ফুটবল) মাঠে রয়েছেন। এই পদে বিএনপির বিদ্রোহীর প্রর্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রর্থীর মূল লড়াই হবে।
উল্লেখ্য, তৃতীয় দফায় শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সীমানা সংক্রান্ত আইনি জটিলতায় তা পিছিয়ে ৩১ আগস্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা কমিশন।
ঘোষিত তারিখ সামনে রেখে নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া হলেও নতুন ভোটারদের তালিকায় নাম তোলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ২০ আগস্ট উচ্চ আদালতে অপর একটি রায়ে আবারও নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
এরপর গত ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি ২০ আগস্ট নির্বাচন স্থগিতের আদেশটি খারিজ করে দিয়ে নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই বলে আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায়ের পর ১৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন ২৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করে।
২৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও দূর্গা পুজার জন্য নির্বাচন চার দিন এগিয়ে এনে ২৫ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণের জন্য চিঠি দেয় কমিশন।
একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে শেরপুর সদর উপজেলা গঠিত। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৬ হাজার ৭৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৯৬২ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৫৯ হাজার ৭৯৩ জন। ১৪০টি কেন্দ্রের ৯৫২টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে।