
রাজশাহী প্রতিনিধি :
অল্প কিছু দিন আগের ঘটনা। রাজশাহী পবা উপজেলার বড়গাছি পশ্চিম পাড়ার বাবুর সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে হ্যাপি। অল্প বয়সেই হ্যাপির বিয়ে ঠিক করেন তার বাবা বাবু। বাল্যবিয়ে নারীর জন্য অভিশাপ। বিষয়টি বোঝাতে বাবুর বাড়িতে ছুটে যান জাগো নারী যুব উন্নয়নের সদস্যরা। অবশেষে বন্ধ হয় হ্যাপির বিয়ে।
একইভাবে ওই এলাকার সুলতানের অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রী সালমার বিয়ে বন্ধ করে সংগঠনের সদস্যরা।
রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বড়গাছি গ্রামের যুবক জয়নাল আবেদীন। তারা ৮ জন মিলে এক বছর ধরে আসহায় নারীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। গ্রামের অবহেলিত নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তাদের কল্যাণেই এ পর্যন্ত পবা এলাকায় বন্ধ হয়েছে ৬টি বাল্যবিয়ে। শুধু তাই না আশেপাশে যেখানেই নারী নির্যাতনের করো ঘটনা কানে আসে তখনই প্রতিবাদ করতে ছুটে যায় তারা।
সংগঠনের সদস্য জয়নাল আবেদীন জানান, শহরের তুলনায় গ্রামে নারী নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেশি ঘটে। প্রায় ঘরেই কোনো না কোনোভাবে নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কেউ বাল্যবিয়ের শিকার, আবার কেউ যৌতুকের কারণে স্বামীর নির্যাতনের শিকার। ছোটে থেকেই বিষয়টি ভালোভাবেই নাড়া দিয়েছিল তাকে।
সেই থেকে তার ইচ্ছে গ্রামের অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়ানোর। সেই ইচ্ছে থেকেই বন্ধুদের নিয়ে জাগো নারী যুব উন্নয়ন নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন জয়নাল আবেদীন। সঙ্গে মাত্র তিন জনকে নিয়ে জাগো নারী যুব উন্নয়ন সংগঠনের যাত্রা শুরু। জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে যোগ দেন আজিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আনজু আরা।
এই এক বছরে জাগো নারী যুব উন্নয়ন সংগঠনের আরো ৪ জন সদস্য যোগ দিয়েছেন। আর এরা হলেন- পবা উপজেলার বায়া বিশুর মোড় এলাকার রোকসানা বিবি (২৮), নাসির উদ্দীন (২৫), সুমি বিবি (২৫), বড়গাছী পশ্চিমপাড়া এলাকার শরিফ (২০) ও আপন (২০)।
সংগঠনের যার যেখানে বাড়ি যেখানে সেখানেই তারা নারীদের উন্নয়ন ও সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করছে। তবে কাজ করতে গিয়ে তাদের অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়।
এ সংগঠনের নারী সদস্য বায়ার বিশুর মোড় এলাকার রোকসানা জানান, বাল্যবিয়ে আমাদের সমাজের একটি বড় ব্যাধি। অনেক মা-বাবাই নিজেদের অজান্তেই তাদের সন্তানদের এ হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আশেপাশের এলাকায় যখন বাল্যবিয়ের কথা জানতে পারা যায় তখন সংগঠনের সদস্যরা মিলে ওই বাড়িতে ছুটে যায়। কিন্তু বোঝাতে অনেক কষ্ট হয়। যখন তারা ব্যর্থ হয় তখন আশেপাশের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সহযোগিতা নেয়া হয়।
এ ধরনের সমস্যা সমাধান করতে গেলে অনেকেই নিজেদের শত্রু মনে করেন। আসলে বাল্যবিয়ের যে কতো ক্ষতি তা তারা জানেন না।
বায়া বিষুর মোড় এলাকার নাসির উদ্দীন জানান, আশেপাশের এলাকায় এ পর্যন্ত তারা সংগঠনের পক্ষ থেকে তিন জনের বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন।
নাসির উদ্দীন জানান, প্রতি সপ্তায় অন্তত আধা ঘণ্টা হলেও জাগো নারী যুব উন্নয়ন সংগঠনের সদস্যরা এক জায়গায় আলোচনায় বসেন। তখন যে যার এলাকার নারীদের সমস্যগুলো তুলে ধরে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হয় কোনো সমস্যা নিয়ে কাজ করা হবে।
সদস্য আজিজুল ইসলাম জানান, তাদের বন্ধুদের সহযোগিতায় বিভিন্ন গ্রামের নারীদের নিয়ে শিক্ষামূলক আলোচনার আসর বসানো হয়। এসব আসরে নারীদের বাল্যবিয়ের কুফল, যৌতুক প্রথা থেকে শুরু করে নারী নির্যাতনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় নারীদের শিক্ষিত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।
এসব ক্লাস নেয়ার জন্য তারা নিজেরাই নারীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে অভিজ্ঞ লোকদের অতিথি করে নিয়ে এসে তারা অসহায় নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দিয়ে থাকেন।
ওরা আট জন সত্যি একদিন এ ঘুনেধরা অশিক্ষিত অসচেতন সমাজের অনুকরণীয় ও অনুস্মরণীয় হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।