
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় প্রত্যাখান করে দেশব্যাপী জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দিনের হরতালে মাঠে নেই জামায়াত-শিবির। তবে পিকেটার বিহীন নিরুত্তাপ এ হরতালে নাশকতা মোকাবেলায় ভোর থেকে তুমুল বৃষ্টিকে সঙ্গী করে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্গলা রক্ষাকারী বাহিনী। চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাঁচ হাজার পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে ১৬ প্লাটুন বিজিবি।
৪৮ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিনের রোববার ভোর ছয়টা থেকে হরতাল শুরুর পর দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলা ও নগরীর কোথাও কোনো ঝটিকা মিছিল কিংবা নাশকতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভোররাত থেকে টানা বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে নগরীতে যানবাহন চলাচলের পরিমাণ একটু কম ছিল।
তবে বেলা বাড়ার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি আর হরতালকে উপেক্ষা করে কর্মজীবী মানুষ তাদের প্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানিতে সাময়িক জলজট হওয়ায় যান চলাচলে সামান্য বিঘ্ন হলেও গণপরিবহন চলাচলের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
এদিকে মহাসড়কে যাত্রীবাহী দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করছে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) মাসুদ-উল-হাসান বলেন, ‘হরতালের নামে যে কোনো ধরনোর নাশকতা মোকাবেলায় নগরীর ৬০টি স্পটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নগরজুড়ে র্যাব-পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরে নিয়মিত ও অতিরিক্ত পুলিশসহ প্রায় তিন হাজার পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি প্রায় দুহাজার পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া নগরীতে প্রাথমিকভাবে ছয় প্লাটুন বিজিবি ও জেলায় ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান যে কোনো ধরনের নাশকতার খবর পাওয়া মাত্রই তারা মুভ করবে বলে জানা গেছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গোয়েন্দা) ও মুখপাত্র প্রকৌশলী হাছান চৌধুরী বলেন, ‘হরতালের নাশকতা মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরীতে কোনো ধরনের নাশকতার খবর পাওয়া যায়নি।’
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘জেলার ১৪ উপজেলার কোথাও হরতালের নাশকতার খবর পাওয়া যায়নি। সব উপজেলায় পুলিশ সর্তক অবস্থায় রয়েছে। জেলার সড়কগুলোয় যানবাহন চলাচল কম হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলছে। র্যাব-পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি জানান, স্পর্শকাতর পাঁচ উপজেলা বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ডে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসব উপজেলায় দুই প্লাটুন করে বিজিবি সদস্য মোতায়েন আছে।
হরতাল ডেকে মাঠে না থাকলেও আতঙ্কে যান চলাচলের পরিমাণ খুবই নগণ্য হওয়ায় কর্মজীবী মানুষজনকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বিমান ও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরীণ ও পণ্য ডেলিভারির কাজ স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে হরতালের পিকেটিংয়ের সময় কোনো জামায়াত-শিবিরকর্মীকে আটক করা না গেলেও শনিবার গভীর রাতে নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগে পাহাড়তলী থানার সাগরিকা এলাকা থেকে দুই জামায়াতকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
পাহাড়তলী থানার ওসি আজিজুর রহমান জানান, নগরীতে বিভিন্ন সময়ে নাশকতার ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযুক্ত হাফেজ ওয়ালীওল্লাহ আলী (৩৮) ও আবু বকর ওরফে ইব্রাহিমকে (৩৫) আটক করা হয়েছে। তারা রোববার জামায়াতের হরতালে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার একাধিক মামলায় ছিল। এসব মামলায় তারা জামিনে রয়েছেন।
বাকলিয়ায় ইরফান মাহমুদ (২২) নামে এক শিবির নেতাকে আটক করা হয়েছে। রোববার সকালে তাকে আটক করা হয়।
বাকলিয়া থানার ওসি মহসিন জানান, ইরফান বাকলিয়া কলেজ শাখা শিবিরের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে।