নিজস্ব প্রতিবেদক :
আত্মস্বীকৃতি দুর্নীতিবাজ চট্টগ্রাম সার্কেলের বন সংরক্ষক দেওয়ান জাফরুল হাসানের বিরুদ্ধে উৎকোচ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিগত সময়ে দুর্নীতি আর অনিয়মের সাথে আঁতাত করে এই বন কর্মকর্তা বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন। চলনে-বলনে এই বন কর্মকর্তার ভদ্রতার ছাপ থাকলেও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটে রয়েছে তার সিদ্ধহস্ত। দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ কামিয়ে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। সম্প্রতি মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষকের পদটি বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, এই দুর্নীতিবাজ বন কর্মকর্তা ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে তার লোভনীয় পোস্টিংয়ের জন্য। বর্তমান পরিবেশ ও বনমন্ত্রী বদলি বাণিজের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও তার আশপাশের একজন রাজনৈতিক নেতা ঐ ৩০ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন বলে দেওয়ান জাফরুল হাসান তার ঘনিষ্ঠজনদের বলে বেড়ান। তার এ ধরনের কর্মকা-ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। লোভনীয় পোস্টিংপ্রাপ্ত এই বন কর্মকর্তার বাড়ি নওগাঁ জেলায়। বন বিভাগের স্বর্ণযুগে চট্টগ্রামেও ডিএফও হিসাবে দাপটের সাথে তিনি চাকরি করেছেন। দু’হাতে কামিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে শেষ পর্যন্ত ওয়ান ইলেভেনের সময় ট্রুথ কমিশনের কাছে নিজকে একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকার করতে বাধ্য হন। ট্রুথ কমিশনে নিজেই স্বীকার করেন ‘তিনি চোর, দুর্নীতিবাজ’। ঐ সময়কার দুর্নীতিবাজদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়ান তিনি। সুচতুর এই দুর্নীতিবাজ বন কর্মকর্তা বনখেকো ওসমান গণির অন্যতম দোসর ছিলেন। ওয়ান ইলেভেন সরকারের পর আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে পুনরায় চাকরিতে যোগদান করেন। শুধু তাই নয়, তিনি পদোন্নতিও বাগিয়ে নেন। এরপর দীর্ঘদিন বরিশালের কোস্টাল সার্কেলের সিএফ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অধঃস্থন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পোস্টিং দিয়ে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, দেওয়ান জাফরুল হাসানের এলপিআরে যাওয়ার সময় অতি সন্নিকটে। বাকী মাত্র ৮ মাস। এ কারণে বদলি বাণিজ্যের জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি। ঐ সিন্ডিকেটের একজন সক্রিয় সদস্য ডেপুটি ফরেস্ট রেঞ্জার এমদাদ হোসেন। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ধুমঘাট চেক স্টেশনে কর্মরত রয়েছেন। এটি একটি লোভনীয় চেক স্টেশন। প্রতি রাতে পার্বত্য এলাকা থেকে ছেড়ে আসা কাঠবোঝাই ট্রাক থেকে নির্ধারিত হারে ঘুষ লেনদেন হয় এখানে। আর সে কারণে এই চেক স্টেশনের পোস্টিং নিয়ে চলে মোটা অর্থের লেনদেন।
সূত্র আরো জানায়, ডেপুটি ফরেস্ট রেঞ্জার এমদাদ হোসেন দেওয়ান জাফরুল হাসানের ঘনিষ্ঠ সহচর। এদিকে, বন সংরক্ষক জাফরুল হাসান সম্প্রতি একজন ফরেস্ট রেঞ্জারকে বান্দরবান ডিভিশন থেকে বান্দরবান পাল্পউড ডিভিশনের একটি লোভনীয় রেঞ্জে পোস্টিংয়ের জন্য ৫ লাখ টাকার উৎকোচ গ্রহণ করেন। কিন্তু বিষয়টি বন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার নজরে আসায় ঐ লোভনীয় পোস্টিং আর কার্যকর করতে পারেননি দেওয়ান জাফরুল হাসান। এরপর বদলিকৃত উক্ত ফরেস্ট রেঞ্জার দ্বিতীয় পছন্দের রেঞ্জ রোয়াংছড়িতে যাওয়ার জন্য বন সংরক্ষককে বললেও তিনি তা কার্যকরী করতে পারেননি। সর্বশেষ অপেক্ষাকৃত কম লোভনীয় স্থানে পেস্টিং দেওয়া হয়েছে তাকে। ‘ম’ আদ্যাক্ষরযুক্ত ঐ ফরেস্ট রেঞ্জার তার ভিটেমাটি বিক্রি করে দেওয়ান জাফরুল হাসানকে ঘুষের টাকা প্রদান করেছেন বলে সূত্র জানায়। বিষয়টি জানাজানি হলে ঢাকায় বন ভবনে কর্মরত একজন উপ-প্রধান বন সংরক্ষককে দৈনিক পাঞ্জেরী’র পক্ষ থেকে সমস্যাটি সমাধানের অনুরোধ করা হলেও দেওয়ান জাফরুল হাসান কোন কর্ণপাত করেননি। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ঘুষের টাকার কোন প্রমাণ নেই। তাহলে ঐ ফরেস্ট রেঞ্জারকে কোন কারণ ছাড়াই অনির্ধারিত বদলি করা হলো কেন? ফলশ্রুতিতে প্রধান বন সংরক্ষক এ ধরনের বদলি না করার জন্য চট্টগ্রামের বন সংরক্ষককে সতর্ক করেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ফরেস্ট রেঞ্জার সহিদুল ইসলাম পান্নাকেও অনির্ধারিত বদলি করেন বন সংরক্ষক দেওয়ান জাফরুল হাসান। উক্ত বদলির আদেশ প্রধান বন সংরক্ষক বাতিল করেন।
সূত্র জানায়, তার স্ত্রী সেহেলী হাসান একজন গৃহিণী হলেও ভবিষ্যতে সুখের আশায় স্বামীর এসব অনৈতিক কর্মকা-ে ইন্ধন দিয়ে আসছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, দেওয়ান জাফরুল হাসান চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন চেক স্টেশন এবং রেঞ্জ অফিস থেকে মাসোহারা দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের উপর গোপনে চাপ সৃষ্টি করেছেন। এ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। তারা দ্রুতগতিতে এসব বিষয়ে তদন্তপূর্বক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সব মিলে চাকরিজীবনের শেষ পর্যায়ে এসে অবৈধ উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিতে ব্যস্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক দেওয়ান জাফরুল হাসান। এ ব্যাপারে বন সংরক্ষক দেওয়ান জাফরুল হাসানের বক্তব্য জানতে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।