ঢাকাসোমবার , ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কারাগারে বৈঠক, বিদ্বেষীদের ‘কতলে’ একজোট জঙ্গিরা!

দৈনিক পাঞ্জেরী
সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৪ ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

JMB1নিজস্ব প্রতিবেদক

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে জেএমবির কারাবন্দী নেতা সাইদুর রহমান ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর মধ্যে গোপন সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা এক সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে। এ বার্তা দুই শতাধিক কর্মীর কাছে পৌঁছেও দেয়া হয়েছে। সংগঠনকে দ্রুত কার্যকর করে কথিত খিলাফত বাস্তবায়নের জন্য আর্ন্তজাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন নেতারা।
এ নির্দেশনা অনুযায়ীই একটি অংশের নেতা আবদুল্লাহ আল তাসনীম ওরফে নাহিদ সহযোগীদের নিয়ে তৎপরতা শুরু করে। পরে তারা জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে যোগাযোগ করে। সংগঠনকে কার্যকর করতে তারা শিক্ষা ব্যবসাও শুরু করতে চাইছিল।
গত বৃহস্পতিবার তুরাগ থেকে গ্রেপ্তারকৃত সাত জঙ্গিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলে থাকা নেতাদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন সমন্বিত কাজ করার পরিকল্পনা করেছে। এভাবে তারা কথিত খেলাফত বা শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা এখন আয়বর্ধন কর্মকাণ্ড, নতুন সদস্য নিয়োগ এবং আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্লোবালি কাজ করতে চাইছে। গ্রেপ্তারকৃত তাসনীমসহ গ্রুপটি উত্তরার জসিমউদ্দিনে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির চেষ্টা করছিল।’
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘উগ্রবাদ ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে জেএমবির জঙ্গিরা গ্লোবালি আল-কায়েদাকে নয়, আইএসকে পছন্দ করছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতাদের আর্দশ আল কায়েদা হলেও আইএসের তৎপরতায় তারা মুগ্ধ। এ কারণে জেএমবির নেটওয়ার্কে তারাও আইএসের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে।’
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত এপ্রিলেও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নকি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে ছিলেন। তবে আদর্শের মিল এবং “ভেতর”র নির্দেশনার কারণে তিনি এখন জেএমবির সঙ্গে সক্রিয় হয়েছেন।’
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রিমান্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে তাসনীম ও নকিকেই বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। তারা জানিয়েছে, কারাগারে চারটি জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের সমঝোতার বিষয়ে বাইরের কর্মীদের জানানোর নির্দেশ ছিল তাদের ওপর। জেএমবি প্রধান সাইদুর রহমান ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানী গত ঈদুল ফিতরের সময় কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বৈঠকে একসঙ্গে কাজ করার সমঝোতায় পৌঁছায়। পরে দুই সংগঠনের কারাগারের থাকা দুই শতাধিক নেতাকর্মীদের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়। আগে থেকেই জামিনে বের হওয়া নেতাকর্মীদের সংগঠিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেএমবি প্রধান।
তবে ভেতরের কর্মীদের এসব বার্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বাইরের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, গ্রেপ্তারের পর কথিত নীতি-আদর্শ থেকে সরে গিয়ে সরকারের গুপ্তচরে পরিণত হয় জেএমবির কর্মীরা। এ কারণে জামিনে বের হওয়া সদস্যদের বিশ্বাস করে সংগঠনের নেতৃত্বে আনছে না জেএমবির বাইরের গ্রুপ। একই কারণে সোহেল মাহফুজ, ফারুক হোসেন ও তাসনীম তিনটি অংশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে দাবি করছে জেএমবির সদস্যরা।
সাত জঙ্গি গ্রেপ্তারের মামলার তদন্ত তদারকী কর্মকর্তা ডিবির এডিসি ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘কারাগারে একাধিক বৈঠকে শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়নের জন্য নতুনভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জেএমবির জঙ্গিরা। জিজ্ঞাসাবাদে ত্রিশালের জঙ্গি ছিনতাইয়ের মতোই আবারো বড় হামলার পরিকল্পনার ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। ভেতরের পরিকল্পরাই বাস্তবায়ন করছে এক একটি গ্রুপ।’
তিনি আরো জানান, সাত জঙ্গির কাছ থেকে উদ্ধার করা ১০ কেজি জেল মিশ্রিত রাসায়নিক পদার্থ ও চারটি পিতলের মূর্তি পরীক্ষার কাজ শুরু করেছে ডিবি। এগুলোকে ছদ্মাবরণের বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল জেএমবির জঙ্গিদের।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান- জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হুজি ও আল ইসলামী বাংলাদেশের পলাতক জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রোববার সাত আসামির দুই দিনের রিমান্ড শেষ হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির করে আবারো রিমান্ড আবেদন করা হবে। তাদের পরিকল্পনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মাওলানা ফারুকী হত্যাকাণ্ড এবং গোপীবাগের কথিত পীরসহ ছয় খুনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে রোববার পর্যন্ত তারা খুনির নাম প্রকাশ করেনি।
এ ব্যাপারে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মাওলানা ফারুকীর খুনের ব্যাপারে তারা (সাত জঙ্গি) দাবি করছেন- জেএমবির একটি গ্রুপ এ খুন করেছে বলে তারা শুনেছেন। তবে কারা করেছে তা বলতে পারছেন না। এ ব্যাপারে তাদের এবং আরো কিছু জেএমবি জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
সূত্র জানায়, ত্রিশালে তিন জঙ্গি ছিনতাইয়ের মামলায় গ্রেপ্তার আজমীর, গোলাম সরোয়ার রাহাত, জিয়াউল ইসলাম জিতু ও আল আমীনকে মুখোমুখি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা করছে গোয়েন্দারা।
গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জেলহাজতে থাকা এ জেএমবি জঙ্গিদের ছয় খুনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। একই সঙ্গে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদেরও আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে ২১ সেপ্টেম্বর (রোববার) রিমান্ড আবেদনের দিন ধার্য করেন।
ছয় খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিবির পরিদর্শক আবু আল খায়ের মাতব্বর বলেন, ‘রোববার হরতালের কারণে শুনানি হয়নি। রিমান্ড পাওয়া গেলে এ চারজনকে সিক্স মার্ডারের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তুরাগ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সাতজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের বক্তব্যের মধ্যে সামঞ্জস্যও খঁজে দেখা হবে।’
গোয়েন্দা সূত্র মতে, আহলে হাদিস মতাদর্শী জেএমবির জঙ্গিরা ধর্মীয় ইস্যুতে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম, বেদাত, শিরক বন্ধে তারা শ্লোগান প্রচার করে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার সময় তারা এ জাতীয় লিফলেট ছড়িয়ে দেয়। এরপর ২০১০ সালে নিজ সংগঠনের কর্মী রাশিদুলকে ‘দলত্যাগ’ করার কারণে হত্যা করে এ সংগঠনের কিছু কর্মী। এতে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়ে জেএমবিসহ জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামের বিষয়ে ভিন্নমত নির্মূলে আক্রমণাত্মক।
গোপীবাগে নিহত কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুক ধর্মীয় বিষয়ে নিজস্ব এক ধনের মতবাদ প্রচার করতেন। তিনি নিজেকে ঈমাম মাহাদীর প্রধান সেনাপতি বলে পরিচয় দিতেন। এ কারণে কয়েকটি পক্ষের হুমকির মধ্যে ছিলেন ‘পীর’ ফারুক। এমনই একটি হুমকিদাতা ছিল জেএমবির কিছু সদস্য।
অন্যদিকে গোয়েন্দারের ধারণা, জঙ্গিদের মূল উদ্দেশ্য- ‘টার্গেট ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা’।
তদন্তকারীরা বলছেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কারাবন্দী নেতা মুফতি জমিসউদ্দিন রাহমানীর সঙ্গে জেএমবি প্রধান সাইদুর রহমান ও অন্য আরো অনেকের কারাগারে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা সব জঙ্গি সংগঠগুলো একাট্টা করার সিদ্ধান্ত নেন। জেএমবি, হুজির পাশাপাশি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমও নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেষী বা ইসলাম বিরোধী প্রচারকারীদের শনাক্ত করে কতল (জবাই) করতে আগ্রহী।
গত বছর ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ইয়েমেন ফেরত জঙ্গি রানা এখন ভারতে পালিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। আনসারুল্লাহ অন্যতম নেতা বহিষ্কৃত মেজর জিয়া আত্মগোপনে থেকে সংগঠনটিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সূত্র জানায়, ত্রিশাল থেকে ছিনতাই হওয়া ভয়ঙ্কর জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমারু মিজান ভারতের বশিরহাট এলাকায় অবস্থান করছেন। ভারতেই আছেন জেএমবির দু’টি অংশের নেতা সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ এবং ফারুক হোসেন। তাদের সঙ্গে জিয়া ও রানার যোগাযোগ হয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা।

বিশেষ প্রতিবেদন সর্বশেষ