মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৫০ একর জমিতে বিআর-১৬ (শাহী বালাম) ধান চাষে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। আউশ-আমন রোপণের সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও মাঠে দোল খাচ্ছে আধপাকা বিআর-১৬ ধান। শেষ পর্যন্ত ধান বাড়িতে আনা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কৃষকরা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, আউশ মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ধান বিআর-২১, ২২, ২৮, ২৬, ৪৮, ৫০ ও ৫২ চাষে অভ্যস্ত হলেও এ মৌসুমে বিএডিসির তত্ত্বাবধানে কৃষি বীজ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ এবং স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বিআর-১৬ ধান চাষে অনুপ্রাণিত করেন। কোনো কোনো উপজেলায় আউশ মৌসুমে শুধু বিআর-১৬ ধান ছাড়া অন্য কোনো জাতের বীজ সরকারি গুদামে ছিল না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা বিআর-১৬ জাতের ধান চাষ করেন।
উপজেলা কৃষি বীজ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ থেকে ১০ কেজির প্রতি ব্যাগ বীজ ৩৪০ টাকা দরে সংগ্রহ করেন কৃষকরা। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের উৎসাহে অধিক ফলনের আশায় উচ্চ ফলনশীল ধান বিআর-১৬ চাষ করেন তারা। কৃষি কর্মকর্তাদের কথামতো বীজ বপণের দিন থেকে ১০৫ দিনের মধ্যে ধান ঘরে তোলার কথা। কিন্তু ১৮০ দিন পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ জমিতে এখনও ধান আধাপাকা রয়েছে।
চাষিরা জানান, এ বছর কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে কয়েকশ’ একর জমিতে এ ধানের চাষ হলেও আকষ্মিক বন্যার কারণে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। বন্যা ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শ্রীমঙ্গল, বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়ার কয়েকটি ইউনিয়নের চাষিরা। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার, বরমচাল, ভাটেরা, রাউৎগাঁও, টিলাগাঁও, কাদিপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চাষিরা।
সরজমিনে কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, কোনাগাঁও, পশ্চিম জালালাবাদ, হরিনগর, দক্ষিণপাড়া, দাউদপুর, শেরপুর, লামাপাড়া, শ্রীপুরসহ কয়েকটি গ্রামে গেলে কৃষকরা তাদের ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আছকির মিয়া, ইমাদ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী চয়ন, শমসাদ মিয়া, আদনান মিয়া, মুফিজ মিয়া, সিরাজ মিয়া, গৌতম দাস ও শফিক মিয়া জানান, তারা প্রায় ৫০ একরের বেশি জমিতে বিআর-১৬ জাতের ধান চাষ করেছেন। কিন্তু যে আশায় তারা এ জাতের ধান চাষ করেছিলেন তা তো পাবেন না, উল্টো লোকসান গুনতে হবে। অনেকেই আউশের আশায় আমনের মৌসুম হাতছাড়া না করতে বিআর-১৬ জাতের ধান কেটে গরু, মহিষকে খাওয়াচ্ছেন।
তারা জানান, এক একর জমি চাষ করতে খরচ পড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা। ভালো উৎপাদন হলে এক একরে ধান পাওয়া যায় ১২ থেকে ১৫ মণ। কিন্তু বিআর-১৬ চাষে আরও বেশি উৎপাদন পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে তার অর্ধেক ধান গোলায় তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
কৃষকরা অভিযোগ করেন, উপকূলীয় অঞ্চলের এই হাইব্রিড ধান চাষ করিয়ে সংশ্লিষ্টরা আউশ-আমন মৌসুমকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। কিভাবে তারা এ দুই মৌসুমের ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন তার দিশা পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম চৌধুরী জানান, এ ধানটি মূলত এক মৌসুমী চাষিদের জন্য ভালো। যেহেতু এ অঞ্চলে আউশ ধান চাষ শুরু হয় একটু দেরিতে, তাই এই দুই মৌসুমি চাষিদের এটা চাষ না করাই ভালো।
তবে তিনি বিষয়টি দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, ‘উপজেলার বীজ বিতরণ বিভাগ ও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা এ ধান সম্পের্কে চাষিদের ধারণা দিলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।’
আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ‘যারা এ ধান চাষ করেছেন, এখনই না কেটে কিছু দিন অপেক্ষা করতে পারেন। ধান কাটা শেষ হলে তারা মৌসুমি সবজি চাষ করতে পারেন। তবে আমন ধান চাষ করতে চাইলে বিনা-১৪, বিনা-৭ ও বি আর-২২ এবং ২৩ চাষ করলে সময় মতো গোলায় তুলতে পারবেন।’