নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতি বছরের মতো এবারো পবিত্র ঈদুল আজহায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কোরবানি হবে লাখ লাখ পশুর।
পরীক্ষার জন্য সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগ ও সিটি করপোরেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনা অপর্যাপ্ত। ফলে রোগাক্রান্ত ও ‘স্টোরয়েড’ জাতীয় হরমোনে বাড়ন্ত পশুর মাংস খেয়ে রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে পবিত্র ঈদুল আজহা অন্যতম। এ ঈদেই পশু জবাই করে ধর্মপ্রাণ মোসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় স্বাভাবিক কারণেই পশুর চাহিদা বেড়ে যায়। ধর্মপ্রাণ মোসলমানদের পছন্দের শীর্ষে থাকে মোটাতাজা সুন্দর পশু।
আর এটাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা অধিকা মুনাফা লাভের আশায় স্টেরয়েড, কোর্টিসল, ডেক্রামিথাসন, হাইড্রোকর্টিসন, বিটামিথাসন ও প্রেডনিসলনের মতো মারাত্মক হরমোন ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করে থাকেন।
পশু চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনে গরুর মাংস খেলে কিডনি, লিভারসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কেনার আগে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। এজন্য কোরবানির আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে।
ঈদুল আজহায় রাজধানীবাসীর সেবাদানের সঙ্গে জড়িত দুই সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এমনটাই দাবি করেছেন খোদ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কোরবানির আগের তিনদিন রাজধানী ঢাকার প্রায় ২০টি পশু হাটে ডাক্তারদের দু’টি টিম কাজ করবে। এ টিমে থাকবেন তিনজন ইন্সপেক্টর ও একজন ভেটেনারি সর্জন। তারা সর্বক্ষণিক হাটে আসা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। কিন্তু লাখ লাখ গুরু-ছাগলের পরীক্ষার জন্য এ দু’টি টিম যথেষ্ট নয়। আর পশুর হাটে লাখো মানুষ ও পশুর ভীড়ের সঙ্গে এ টিমগুলোকে খুঁজে পাওয়াও মুসকিল হয়ে পড়বে। এই অবস্থায় পরীক্ষা বা ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়াই পশু কেনা বা জবাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আলি নূর মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, সিটি করপোরেশনের বাইরে রাজধানীর ১১টি পয়েন্টে পরীক্ষা করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে গরু উৎপাদন হয় ২ কোটি ২৯ লাখ ৭৬ হাজার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ৩০ লাখ ৫১ হাজার।
জানা গেছে, পালিত গরুর সিংহভাগই কোরবানির সময় জবাই হয়। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই জবাই হবে অন্তত ২ লাখ গরু। কিন্তু তাদের পরীক্ষার জন্য সিটি করপোরেশনের ৮ জনের দু’টি টিম ও মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কোরবানি পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমরা ২টি টিম গঠন করে দিয়েছি। তারা ঈদের তিনদিন আগ থেকে রাজধানীর কোরবানি হাটগুলোতে কাজ করবে।’
তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, এই টিম দিয়ে কোনোভাবেই সব পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। কোনো পশু রোগাক্রান্ত মনে হলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নেয়ার জন্য ক্রেতা সাধারণকে অনুরোধ জানিয়েছেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।