ঢাকাসোমবার , ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আ.লীগের ৬ মাস: সরকারে স্বস্তি, দলে অস্বস্তি

দৈনিক পাঞ্জেরী
সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৪ ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বিতীয় মেয়াদের শাসনামলের ৬ মাস পূর্ণ করলো আওয়ামী লীগ সরকার। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে দলটি। সরকারের বৈধতা ও ক্ষমতায় টিকে থাকাই ছিল তাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গিয়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থার দিকে নজর দিতে পারেননি নেতারা।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের অব্যাহত টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি আর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে সরকারের উন্নয়নমূলক ভাবমূর্তি ম্লান হচ্ছে। এর সঙ্গে নতুন করে এখন যুক্ত হয়েছে নিজ দলের হাতে দলীয় নেতাকর্মী খুন হওয়ার ঘটনা।
বিরোধীদল বিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সরকারের বৈধতা নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু একে একে বিভিন্ন রাষ্ট্র সমর্থন দিতে শুরু করলে কিছুটা স্বস্তি পায় সরকার। এর মধ্যে জাপান ও চীন সরকারের আমন্ত্রণে সফলভাবে সফর শেষ করছেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে জাতীসংঘের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন তিনি।
সরকার প্রধান শেখ হাসিনার জাপান ও চীন সফরে একাধিক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এছাড়া জাপান ও চীন সরকার বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় ভয় ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনিও শেখ হাসিনাকে ভারতে আমন্ত্রণ ও তার সরকারের সঙ্গে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন। জাতিসংঘে অধিবেশনের ফাঁকে তাদের বৈঠকও হয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে সরকারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে সংগঠনের অভ্যন্তরের যে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা থাকা দরকার তা হারিয়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগ।
ছাত্রলীগ-যুবলীগের অব্যাহত টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি আর আধিপত্য বিস্তারের সর্বগ্রাসী তৎপরতায় নেতারাও বিব্রত। ৫ জানুয়ারির পর এ পর্যন্ত নিজেদের কোন্দলে নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। এর মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কেন্দ্র করে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হেভেন চৌধুরীর ওপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষ। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় এ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি মারা যান।
chhattra-league01গত ১লা এপ্রিল ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সংগঠনের নেতা সাদ ইবনে মমতাজ নিহত হন। ২৯ মে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা শহরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহসান হাবিব সুমু (৩৬) নামে এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। গত ৮ মার্চ শনিবার উপজেলা নির্বাচনেকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের শ্রীপুর ছাত্রলীঘের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন। পরে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি মারা যায়।
এছাড়া রয়েছে নারায়ণগঞ্জের ৭ সাত খুনের ঘটনা। ফেনীর ফুলগাজীর চেয়ারম্যান একরাম হত্যার ঘটনা। ঢাকার আগারগাঁও যুবলীগ নেতা খুনের ঘটনা।
যুবলীগ, ছাত্রলীগ মিলে টেন্ডারবাজি করেছে কমপক্ষে ২০টি, অস্ত্রবাজি এবং অস্ত্র রাখার দায়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে কমপক্ষে ৪০ ক্যাডার। এছাড়া গ্রুপিং কোন্দলের কারণে নিজেদের মধ্যে মারামারি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর মিরপুর বাঙলা কলেজ ছাত্রাবাসে অস্ত্র মজুদ করার অভিযোগে পুলিশ হল শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জনকে অস্ত্রসহ আটক করে।
গত ৬ মার্চ সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তিনজনকে মারধর করে দুটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু এবং এসএম হলের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক দিদার মো. নিজামুল ইসলামের মদদে হলের সামনে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। জিয়া হলে জুতা নেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আটজন আহত হয়। একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে হল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মারামারি করে। এ ঘটনায় সংগঠন থেকে সাতজনকে বহিষ্কার করা হয়।
৯ মার্চ নড়াইলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। ১২ লাখ টাকার টেন্ডার জমা দিতে গেলে ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেন ও বাবুলকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যুবলীগ কর্মী মহিদ, নাছিম বিল্লাহ, বাদশা, হাসানসহ ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ তাদের মারধর করে টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ আলীসহ স্থানীয় নেতারা পরিস্থিতি সামাল দেন।
এছাড়া ৯ মার্চ সাভারে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ডিইপিজেডের বিদেশি মালিকানাধীন একটি কারখানার ঝুট ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে অস্ত্র ও দুই সহযোগীসহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সোহেল পারভেজ নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে আটক হন। পরে তাকে পুলিশে দেয়া হয়।
২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসি মোড়ে গোলপাহাড় ও মেডিকেল কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় একটি মার্কেটে চাঁদাবাজির জের ধরে ঘটনাটি ঘটে।
২৫ জানুয়ারি সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক দিনের মাথায় সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় পুরনো গাড়ি নিলামের জের ধরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা থানার ওসির রুম ভাঙচুর করেন। মন্ত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-এমপিদের সামনেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সশস্ত্র হামলার ঘটনা সারা দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া ফেলে দেয়। ওই ঘটনায় সাংবাদিকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় কমপক্ষে ৪০ জন।
রাজধানীর শাহবাগের একটি মদের বারে বিল পরিশোধ করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও বার কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জনশ্রুতি আছে , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের জন্য লাইসেন্সেপ্রাাপ্ত ছিনতাই ও চাঁদাবাজির জায়গা।
এছাড়া খুলনার আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়াও শিক্ষক পেটানো, হলে মেয়ে নিয়ে রাত কাটানো, চাঁদাবাজি, মারামারির ঘটনাও ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ।
যদিও সংগঠনের মধ্যেকার এ দ্বন্দ্ব নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতাদেরর সম্বনয়নে ১০টি টিম গঠন করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। যারা অক্টোবর মাস থেকে জেলা সম্মেলনে নামবেন।
গত সাড়ে পাঁচ বছর হিসাব করলে এ ফিরিস্তি আরো লম্বা হবে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যতোই উন্নয়নের কথা বলুক এবং অনেক ক্ষেত্রে সফলতার প্রমাণ দিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে এই অনিয়ম, দুর্নীতি, সহিংসতা, খুনোখুনি সেসবকে ম্লান করে দেবে।