ঢাকাশনিবার , ৮ নভেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রাণভিক্ষা: ইজ্জত রক্ষায় কৌশলী জামায়াত

দৈনিক পাঞ্জেরী
নভেম্বর ৮, ২০১৪ ১২:০৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

Kamaনিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার (৬৫) ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। কিন্তু জামায়াতের চাপে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি তিনি। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ও কার্যকর হবে খুব শিগগিরি। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন তিনিও করবেন না বলে জামায়াত সূত্র জানিয়েছে। আর প্রাণভিক্ষা চেয়ে ক্ষমার আবেদন না করার নেপথ্যে জামায়াত। শুধু তাদের নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে কোনো জামায়াত নেতাই যেন প্রাণভিক্ষা না চায় দলীয়ভাবে সে সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে আসামিকে অবশ্যই তার অপরাধ স্বীকার করতে হবে এবং আদালতের রায় মেনে নিতে হবে। আর এতে প্রমাণিত হবে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন। ফলে জামায়াত নেতারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে নিজেকে নিজেই চিহ্নিত করবেন এবং দলও এতে অভিযুক্ত হবে। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারও সবার কাছে হেয় হবে। আর এ কারণেই জামায়াতের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নেতারা প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করবেন না বলে জামায়াতের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যে কোনো আসামি রায় শোনার পর এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। এরপর ক্ষমা করে দণ্ড মওফুক বা খালাসের বিষয় নির্ভর করে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের ওপর।
কারাবিধি অনুসারে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি বা সারসংক্ষেপ আপিল বিভাগ থেকে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে যাবে। এরপর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। পরোয়ানার কপি কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যাবে। এরপর ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাব্য তারিখ ও সময় উল্লেখ করে কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে একটি আবেদন পাঠাবে। আবেদনটি হবে রাষ্ট্রপতি ও সরকার বরাবর। এর এক সপ্তাহের মধ্যে আবেদনের কোনো জবাব না পেলে কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এরপর সরকার ইচ্ছাধীন সময়ে রায় কার্যকরের সময় ঘোষণা করবে। তবে সরকার কতদিনের মধ্যে রায় কার্যকর করবে এ বিষয়ে আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।
তবে আইনে যাই বলা থাকুক না কেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতারা যেন কোনো অবস্থাতেই প্রাণভিক্ষা না চান সে বিষয়ে তৎপর দলটি। এ বিষয়ে জামায়াতের সিদ্ধান্ত কঠিন। কারাগারে আটক বা দণ্ডপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আইনজীবীরা দেখা করতে গেলে দলের হয়ে তাদের মানসিকভাবে সাহস দেন। এমনকি পরিবারের পক্ষে থেকে প্রাণভিক্ষার জন্য জামায়াতের কোনো নেতাকে যেন চাপ না দেয়া হয় সে বিষয়েও তৎপর দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। জামায়াতের একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের এক সদস্য বলেন, ‘কোনো নেতার বিরুদ্ধেই সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ প্রমাণ মেলেনি। এরপরও যদি জামায়াতের কোনো নেতা প্রাণ ভিক্ষা চান সেটা হবে স্ববিরোধী। এছাড়া সরকার এটাকে ইস্যু করে দলের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগবে। দলের বিরুদ্ধে ঝড়যন্ত্র হবে লাগামহীন।’
এদিকে ১৯৭২ সালে প্রথম দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় হয়েছিল কুষ্টিয়ার রাজাকার চিকন আলীর। আইনি প্রক্রিয়া শেষে রায় কার্যকরের আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বিজয়ী হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব পেশ করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইবুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রথম ফাঁসির রায় ঘোষিত হয় আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে। যদিও বাচ্চু দেশ থেকে পালিয়ে যান।
দ্বিতীয় রায় ঘোষিত হয় ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে।  ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার বিরুদ্ধে গণহত্যার সব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ এবং কাদের মোল্লা উভয়পক্ষ আপিল করে। প্রায় ছয় মাস শুনানির পর আপিল বিভাগ কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ লিখিত বিবরণ প্রকাশ হয় ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বরর। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করার কথা কারা কর্তৃপক্ষ জানালেও কাদের মোল্লা রাজি হননি। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম ফাঁসি হয় কাদের মোল্লার ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর।
এছাড়া ২০১০ সালের ১৩ জুলাই রাজধানীর পল্লবী থানায় একটি মামলায় কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরে ২ অক্টোবর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ৪ জুন ট্রাইব্যুনাল-২ তার বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ গঠন করেন। ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনালের এ ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৬ জুন আপিল করেন কামারুজ্জামান। এ বছরের জুনে বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে এ আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় গত ১৭ সেপ্টেম্বর। প্রায় দেড় মাস পর ৪ নভেম্বর আপিলের রায় ঘোষণা করা হয়। আপিল বিভাগের রায়ে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
ইতোমধ্যে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সব প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় কারাগার। কারাগারের দক্ষিণ দিকে সীমানা প্রাচীর ও ভবনের মাঝখানে স্থায়ী ফাঁসির মঞ্চেই কামারুজ্জামানের ফাঁসি দেয়া হবে। যেখানে কাদের মোল্লারও ফাঁসি হয়েছিল। ফাঁসি কার্যকরে কেন্দ্রীয় কারাগারে তিন জল্লাদকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে কামারুজ্জামানের কবর দেয়া হবে শেরপুরের বাজিতখিলায় গ্রামের বাড়িতে। সেখানে মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে বলে জানান মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বড় ভাই মোহাম্মদ আলমাস উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশের মসজিদের সামনে পারিবারিকভাবে জানাজা হবে। তবে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে কামারুজ্জামানের শেষ ইচ্ছার ওপর।’
কামারুজ্জমান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না এমন তথ্য জানিয়েছেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনিরও।
এ প্রসঙ্গে কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী বলেন, ‘রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশের আগেই রায় বাস্তায়ন করতে তৎপরতা দেখাচ্ছে সরকার। এমনকি রায়ের রিভিউ আবেদনের সুযোগও দিচ্ছে না। আর সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবার সুযোগ কই? তবে বাবা রাষ্ট্রপতির কাছে কোনোভাবেই প্রাণভিক্ষা চাইবেন না, তা তিনি আগেও বলেছেন। বাবা তো অপরাধ করেননি, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে কেন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের দায় মেনে নেবেন?’
হাসান ইকবাল আরো বলেন, ‘মানুষের মৃত্যু হবেই। ইসলামের জন্য কাজ করে যদি সাজানো বিচারে মৃত্যু হয় তা হবে মর্যাদার, গৌরবের। বাবা আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে আদর্শের ওপর অবিচল রয়েছেন। আমাদের শান্ত থেকে দোয়া করতে বলেছেন।’

বিশেষ প্রতিবেদন সর্বশেষ