আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উত্তর কোরিয়ার সাবেক শাসকের নাম কিম জং ইল। তারই পুত্র কিম জং উন এখন দেশটির শাসন ক্ষমতায়। ইলের মৃত্যুর পর তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে একই ধরণের জীবনযাপন ও দেশ শাসন করছেন পুত্র উন। দুজনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু জায়গায় রয়েছে অসম্ভব মিল। তারমধ্যে একটি হলো তাদের দেহরক্ষী ব্যবস্থা ও অন্যটি হলো নিজের সঙ্গে সরাক্ষন লিপিকার রাখা। যদিও পশ্চিমের গণমাধ্যমগুলো এই দুটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কিম জং উনের সমালোচনা করে আসছে। সম্প্রতি সাবেক শাসক কিম জং ইলের এক সাবেক দেহরক্ষী একটি পশ্চিমা গণমাধ্যমকে উত্তর কোরিয়ার আভ্যন্তরীন এবং ইল সম্পর্কিত কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন।
১৯৮০ সালের এক ঘটনায় এই দেহরক্ষী নিজের প্রাণ বাজি রেখে কিম জং ইলের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। তার মতে, ইলের চেয়ে তার সন্তান উন অনেক বেশি ভয়ংকর। প্রয়াত শাসক কিম ইল সাং ১৯৭৯ সালে লী ইয়ং গুক’কে দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। নিয়োগ পরবর্তীতে তাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রশক্ষিন দিয়ে এলিট দেহরক্ষী দলে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছিল।
লী ইয়ংয়ের ভাষায়, কিম ছিলেন শতভাগ বিশ্বস্ততা প্রত্যাশী শাসক এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিন্দুমাত্র সংবাদও তিনি গুরুতর ভাবে নিতেন। কিম প্রশাসন লী ইংয়ের ব্রেনওয়াশ করে দিয়েছিল বলেও সিএনএন বরাবর জানান তিনি।
কথা প্রসঙ্গে লী সিএনএন’কে বলেন, ‘কিম জং ইল যখন গাড়ি করে আসতেন তখন তার পরামর্শরা তার পেছনে পেছনে দৌড়াতেন। অনেক সময়ই তারা মাটিতে পরে যেতেন এবং তাদের পোশাক অপরিস্কার হয়ে যেতো। তারা সবাই ইলকে ভয় পেতো, কারণ কখন তার মেজাজ ভালো থাকে আর কখন খারাপ থাকে তা বোঝা যেত না। মেজাজ খারাপ থাকলে হয়তো কারও হাতও কেটে নিতে দ্বিধা করতেন না তিনি। এমনি একজন পরামর্শক কিমের ব্যাক্তিগত লিফট এবং অ্যাশট্রে ব্যবহার করার কারণে তাকে আজীবন কারাগারে থাকতে হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।’
তবে কিং জং উন সম্পর্কে বলতে গিয়ে লী বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার মানুষদের কিম জং ইলের চেয়ে উনকে ভয় করার যথেষ্ট কারণ আছে। নিজের চাচাকে হত্যার ভেতর দিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছেন। উন তার ভাবমুর্তি দ্বারা একটি মেকি এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে।
দেহরক্ষী হিসেবে লী দীর্ঘদিন কিম পরিবারের সঙ্গে থাকলেও তাকেও সরিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি তারা। চীনের সীমান্তের কাছাকাছি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় লীকে গ্রেপ্তার করে উত্তর কোরিয়ার পুলিশ। এরপর বিচারে তাকে শ্রমশিবিরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া যান এবং সেখানে একজন সাধারণ চাষী হিসেবে জীবনযাপন শুরু করেন। সেখান থেকেই তিনি কিম জং ইলের দেহরক্ষী থাকাকালীন সময়কার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লেখেন।
উল্লেখ্য, পশ্চিমা বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র করে আসছে। বিভিন্ন সময়ে উত্তর কোরিয়ার অনিষ্টকারী অনেক ভাড়াটে সৈনিককে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির প্রমাসন। গ্রেপ্তার পরবর্তী সময়ে তাদের কাছে যেমন পশ্চিমা অস্ত্র এবং অর্থ পাওয়া গেছে তেমনি পাওয়া গেছে মার্কিন যোগাযোগের কারণ। সেদিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, সিএনএন এই দেহরক্ষীর সাক্ষাতকার নিলেও কোনো প্রকার তারিখ বা ছবি ছাপাতে পারেনি।