নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
রোববার খালেদা জিয়ার পক্ষে করা এক সময় আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক বাসুদেব রায় এ তারিখ নির্ধারণ করেন।
এদিন হাজিরা দিতে আদালতে উপস্থিত হন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তিনি বকশিবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে পৌঁছান।
এর আগে গতকাল শনিবার দিনে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানিয়েছিলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে রোববারও আদালতে যাবেন না খালেদা জিয়া। কিন্তু পরে রাতে তিনি জানান, চেয়ারপার্সসন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন।
গত ২৬ অক্টোবর আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বেগম জিয়া আদালতে যাননি। ওইদিন জামায়াতের হরতাল থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে হাজিরা দেননি বলে জানানো হয়।
এর আগে গত ১৩ অক্টোবর নির্ধারিত দিন অর্থাৎ গত ২৬ অক্টোবর অবশ্যই খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার ব্যবস্থা নিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। কিন্তু হরতালে নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে হাজির হতে পারছেন না মর্মে একটি দরখাস্ত দাখিল করেন খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়া। পরবর্তীতে ৯ নভেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।
গত ১৩ অক্টোবরও দুই মামলার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। মামলাটির প্রথম সাক্ষী বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদের অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল ওইদিন। গত ২২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেয়া শুরু করেন তিনি। হারুন অর রশিদ অপর মামলা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলারও বাদী এবং সাক্ষী।
ওইদিন সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবিসহ মামলা দু’টিতে মোট পাঁচটি আবেদন করেন আসামিপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন খালেদার পক্ষে শুনানি করেন।
নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় খালেদা জিয়ার দু’টি আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। তবে মামলা দু’টির বিষয়ে আপিল বিভাগে আপিল বিচারাধীন উল্লেখ করে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবির আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া বিচারিক আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আপিলের আবেদনটি মঞ্জুর করে সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করেন বিচারক। তিনি ওইদিন অবশ্যই খালেদা জিয়াকে হাজির করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন আসামিপক্ষের আইনজীবীদের।
খালেদা ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অপর পাঁচ আসামি হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে রয়েছেন।
মামলার অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আদালতে হাজিরা দিয়ে আসছেন।
খালেদা ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অন্য ৩ আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সাবেক একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এর মধ্যে জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।