ডেস্ক রিপোর্ট :
ভারতের বর্ধমানে খাগড়াগড় বিস্ফোরণে আটক সাজিদ ওরফে মাসুদ রানার ভাই মনোয়ার হোসেন ওরফে মনাকে গ্রেপ্তার করেছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।
মঙ্গলবার আনন্দবাজারের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়।
তবে বাংলাদেশের পুলিশ বিষয়টি স্বীকার করছে না। এ বিষয়ে ডিএমপির এডিসি (মিডিয়া) সাইদুর রহমান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নেই।’
উল্লেখ্য, বর্ধমান বিস্ফোরণে বাংলাদেশি জঙ্গিরা জড়িত বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের। তাই বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) বাংলাদেশে আসতে ঢাকার অনুমতি চেয়েছে। অনুমতি পেলে ৯ অথবা ১০ নভেম্বর ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা ছিল। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অনুমতি দিয়েছে বলেও জানা গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক বর্মমানের খবর অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার এনআইএ দল ঢাকায় আসার কথা। তারা আসার আগেই আটক করা হলো মনাকে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাজিদের জঙ্গি তৎপরতায় মনার প্রচ্ছন্ন সহায়তা ছিল বলে দাবি করেন তার গ্রাম ফরাজীকান্দার বাসিন্দারা। তবে মনা গতকাল সোমবার আনন্দবাজারের ঢাকা প্রতিনিধিকে জানিয়েছিলেন, তাদের পরিবারের কারো সঙ্গে মাসুদ রানা ওরফে সাজিদের যোযোগ নেই। গতকাল এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ও প্রকাশ করে আনন্দবাজার। আজ প্রকাশ করা হলো মনাকে আটক করার খবর। তবে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে বলে প্রদিবেদনে বলা হয়।
এতে আরো বলা হয়, ফরাজীকান্দায় গিয়ে জানা যায়, খাগড়াগড় কাণ্ডে আটক সাজিদই ওই গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা ওরফে মাসুম। তার ভাই মনা জানান, বাবার মৃত্যুর পরে ৪ ভাই, ৪ বোনের সংসারে সব চেয়ে ছোট মাসুমকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। কিন্তু জঙ্গি সংগঠনের পাল্লায় পড়ে সে বিপথে চলে যায়।
আননন্দবাজারের দাবি, মঙ্গলবার বাংলাদেশের গোয়েন্দারা পঁয়তাল্লিশ বছরের মনাকে হেফাজতে নেয়ায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশকে অন্ধকারে রেখেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মনা সম্পর্কে কিছু অভিযোগ পাওয়ায় তাকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ফরাজীকান্দায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনার পরে মাসুমের পরিবারের অন্য সদস্যরা আত্মগোপন করেছেন। ফরাজীকান্দায় তাদের পৈতৃক বাড়িতে এখন কেবল রয়েছেন শেফালি ও রোকেয়া নামে দুই মহিলা। শেফালি হচ্ছেন মনার স্ত্রী। ভারতে বুরহান শেখের নামে পরিচয়পত্র তৈরি করিয়েছিলেন মাসুম। গতকালই মনা জানিয়েছিলেন, বুরহান তাদের আর এক ভাইয়ের নাম। তিনি মালয়েশিয়ায় চাকরি করেন। আজ জানা যায়, বুরহান মালয়েশিয়া থেকে ফিরেছেন। মনা আটক হওয়ার পরে পরিবারের বাকিদের নিয়ে তিনি গা-ঢাকা দেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ফরাজীকান্দার বাসিন্দাদের দাবি, মাসুম যে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তা তারা জানতেন। তবে সে যে এত বড় জঙ্গি নেতা তা তাদের জানা ছিল না। তাদের দাবি, মাসুমের কাজকর্মে মনাও মদত দিতেন। ১৯৯৭-এ চট্টগ্রামে প্রচুর বিস্ফোরক, ডেটোনেটর, জেহাদি বইসহ আটক হন মাসুম। তখন মনাই তাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনেন। পরে অবৈধ অস্ত্রসহ আটক হন মাসুম। তখন পৈতৃক জমি বিক্রি করে ফের তার জামিনের ব্যবস্থা করেন মনা। শেষ পর্যন্ত মাসুম দুবাই যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়েন। তার পরে আর তার খোঁজ মেলেনি।
প্রতিবেদনে জানা যায়, মাসুমের আর এক ভাই মামুন স্কুলশিক্ষক। তিনি জানান, এক সময়ে ফরাজীকান্দার বাড়িতে মাসুমের কাছে বিভিন্ন অপরিচিত লোক যাতায়াত করত। এক সময়ে মাসুমের সন্দেহজনক চলাফেরায় বাধা দেন স্থানীয়রা। পাশের গ্রাম মাধবপাশায় গিয়ে ওই অপরিচিতদের সঙ্গে বৈঠক করতেন মাসুম। তাদের জন্য মাসুমের বাড়ি থেকে খাবার পাঠানো হতো।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জামাআতুল মুজাহিদিনের শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিন, হুজির বাংলাদেশ অপারেশনসের কমান্ডার খয়রুল বাশার ও মাসুম প্রত্যেকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বাসিন্দা। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে হুজির জঙ্গি মওলানা রফিক আহমেদ ও ওমর ওরফে ফয়জুল ওরফে রবিকে। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বক্তাবলী এলাকায়। গোয়েন্দাদের দাবি, বক্তাবলীর এক ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিলেন মওলানা। রবি ছিলেন ওই এলাকায় জঙ্গিদের বোমা তৈরির কেন্দ্রের প্রধান। স্থানীয়দের আশঙ্কা, নারায়ণগঞ্জ মৌলবাদী জঙ্গিদের ঘাঁটি হয়ে উঠছে।