শেরপুর প্রতিনিধি : দীর্ঘ দিন পর আগামী জানুয়ারিতে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে শুধুমাত্র সদর উপজেলা ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা কমিটি ভেঙে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, আহ্বায়ক ও অ্যাডহক কমিটি গঠন করায় পদবঞ্চিতদের মধ্যে বিদ্রোহের দানা বাঁধছে।
ইতোমধ্যে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় গঠিত আহ্বায়ক কমিটি এবং বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি মিছিল-সমাবেশ এবং ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে শ্রীবরদী উপজেলা শাখার কমিটি বিলুপ্ত করে ১০ অক্টোবর বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক ও আব্দুল মতিনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া ৯ অক্টোবর ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওয়ারেছ নাঈমকে আহ্বায়ক ও আমিরুজ্জামান লেবুকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে ২৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর গত সপ্তাহে নকলা উপজেলার দীর্ঘ দেড় যুগ আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে চেয়ারম্যান ও ডা. রফিকুল ইসলামকে কো-চেয়ারম্যান করে ৫৬ সদস্য বিশিষ্ট নকলা উপজেলা এবং মো. জিয়াউল হক মাস্টারকে চেয়ারম্যান ও আব্দুস সবুরকে কো-চেয়ারম্যান করে ৪৪ সদস্য বিশিষ্ট নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।
তবে সদর উপজেলা নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি গঠন না করা না হলেও চলতি নভেম্বর অথবা ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরাতন কমিটি ভেঙে নতুন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হবে বলে দলীয় নেতারা জানান। আগামী বছরের প্রথম দিকে অর্থাৎ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলা কমিটির সম্মেলন শেষ করে জেলা কমিটির সম্মেলন করার চিন্তা ভাবনাও করছেন তারা।
সম্মেলন কেন্দ্র করে নকলা উপজেলায় কোনো কোন্দল বা বিদ্রোহ দানা না বাঁধলেও শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলাতে ইতিমধ্যে বিদ্রোহী বা পদবঞ্চিতদের পাল্টাপাল্টি সভা ও মিছিল-সমাবেশ অনু্ষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শ্রীবরদী উপজেলায় যারা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারে অংশ নেয় তাদের মধ্যে সদ্য গঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে দুই জন যুগ্ম-আহ্বায়কসহ ১৭ জন নেতাকর্মী স্থান পান।
এনিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁন এবং সদ্য গঠিত আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন খোকার মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। এরই অংশ হিসেবে গত ৩ নভেম্বর জাতীয় জেল হত্যা দিবসে আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এমপি গ্রুপের কোনো সদস্য অংশগ্রহণ না করে আলাদাভাবে ৪ নভেম্বর আলোচনা সভা করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ নভেম্বর বিকেলে শ্রীবরদী পৌর শহরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হন।
এ অবস্থায় এমপি গ্রুপের দাবি ওই কমিটি বাতিল করে নতুন করে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হোক। অন্যদিকে আহ্বায়ক কমিটির দাবি জেলা কমিটি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তার বাইরে তারা যাবে না। দুই গ্রুপের মুখোমুখী অবস্থানে শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের আকাশে কালো মেঘের ছায়া কাটেনি।
অন্যদিকে, ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিসহ তিন নেতাকে বহিস্কার করে গত ৯ আগস্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। তবে কমিটিতে বিগত উপজেলা নির্বাচনে সুবিধাবাদী নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে ত্যাগী নেতাদের বাদ দেয়া হয়েছে বলে বহিস্কৃত সভাপতি শরিফ উদ্দিন সরকার দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান লেবু জানান, যারা বিদ্রোহ করছে তারা দল থেকে বহিস্কৃত। তাদের আহ্বায়ক কমিটিতে থাকার কোনো অধিকার নেই।
একই অবস্থা নালিতাবাড়ী উপজেলাতেও। এখানে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি গঠিত হওয়ার পর থেকেই বিদ্রোহের সুর বেজে উঠেছে।
এ ব্যাপারে নির্বাচন প্রস্তুত কমিটির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মাস্টার জানান, নতুন কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে কে থাকলো আর কে বাদ পড়লো সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এবং এ ব্যাপারে তার বা কমিটির কিছুই করার নেই। তাদের কাজ সময় মতো সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা।
দলের সার্বিক পরিস্থিতি, কোন্দল ও গ্রুপিংয়ের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড্যাভোকেট চন্দন কুমার পাল জানান, সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে শেরপুর সদর ছাড়া সব উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নতুন কমিটি গঠন শেষ করলেই জেলা কমিটির সম্মেলন নতুন বছরের জানুয়ারিতে করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। তবে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উপজেলাতে যে বিদ্রোহের খবর পাওয়া যাচ্ছে তা সাময়িক। পুর্ণাঙ্গ কমিটি হলেই বিরোধ মিটে যাবে।
এছড়া শেপুর সদর উপজেলা কমিটিও আগামী ১৫ দিনের মধ্যে গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।