নিজস্ব প্রতিবেদক
কারো ছেলে, কারো ভাই। আবার কারো বাবা। কারো খোঁজ নেই দুই বছর। অনেকে নিখোঁজ হয়েছে বছর হতে চলছে। অথচ এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন স্বজনরা। তাই হারানো মানিককে খুঁজে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইলেন গত কয়েক বছরে রাজধানী থেকে গুম হওয়া মানুষের স্বজনরা।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের আয়োজনে মানববন্ধনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গুম হওয়া মানুষের স্বজনরা সহযোগিতা চান। বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
২০ দলের ঢাকা মহানগরের আয়োজনে মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর। এতে বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন। এসময় গুম হওয়া মানুষের ১১জন স্বজনও বক্তব্য দেন।
ঢাকা মহানগরের ৭৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা খালিদ হোসেন সোহেলের স্ত্রী শারমিন সুলতানা বলেন, “আমরা স্বামী রাজনীতি করতেন। তিনি সন্ত্রাসী ছিলেন না। আমরা অনেক সন্ত্রাসীকে প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখি, অথচ আমার স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যায় না।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি তার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন সোহেল।
পরিবারের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরে গুম হওয়া ছাত্রদলের আরেক নেতা সম্রাটের বোন কানিজ ফাতিমা বলেন, “আমার পরিবারে ভাই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। বাবা অসুস্থ হয়ে এখন শয্যাশয়ী। অনেক কষ্টে আমরা দিনযাপন করছি।” তিনি প্রশ্ন রাখেন, অন্যায় করলে বিচারের ব্যবস্থা আছে। তাহলে গুম করা কেন?
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর ছেলে অর্নব কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “২৮ মাস হতে চললেও এখতো বাবাকে খুঁজে পাইনি। একদিন-দুইদিন বলে বলে সরকার আশা জাগালেও এখনো বাবাকে পাইনি।” তিনি স্বাধীন দেশে গুমের রাজনীতি না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী থেকে গাড়ি চালকসসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী।
বহু অপেক্ষার পর এখনো নিখোঁজ ছেলেকে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা শামসুদ্দিন। তিনি বলেন, “আমার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। বিএনপি করাই তার অপরাধ ছিল।” নিখোঁজের তিনদিন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট থানা জিডি নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মুন্নার বাবা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন, “ছেলের সন্ধান দিতে না পারলেও যেন কবরটা দেখার সুযোগ দেয়া হয়। যাতে জিয়ারত করতে পারি।” এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বংশাল থানা ছাত্রদল নেতা জহিরুল ইসলামের মা হোসনে আরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “১০ মাস ধরে আমার ছেলে নিখোঁজ। আমরা আর কিছু চাই না, সন্তান ফেরত চাই।”
৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম ভাইয়ের সন্ধান পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “হয় ভাইকে ফেরত দিন, না হয় উদ্ধার করেন দিন।”
এছাড়া বংশাল থানা ছাত্রদলের আরেক নেতা সোহেলের বাবা শামসুর রহমান, পল্লবী থানার তরিকুল ইসলামের নূরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।