ঢাকামঙ্গলবার , ১৮ নভেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রবাসী বিনিয়োগকারীর টাকা মেরে দিয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটিজ

দৈনিক পাঞ্জেরী
নভেম্বর ১৮, ২০১৪ ১:৩৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

DSE1নিজস্ব প্রতিবেদক : এক প্রবাসী বিনিয়োগকারীর অর্থ আত্মসাৎ করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) তালিকাভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেড। বৈধ অ্যাকাউন্ট থাকা সত্ত্বেও তারা এখন সেই বিনিয়োগকারীকে শেয়ার বিক্রি করতে দিচ্ছেন না। এছাড়া তার অনুপস্থিতিতে বিনা অনুমতিতে শেয়ার লেনদেনের কোনো হিসাবও দিচ্ছে না ব্রোকারেজ হাউজ কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে সেই প্রবাসী সিকিউরিটিজ হাউজটির বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিসহ সিএসইতে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এরপর দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও কোনো সুবিচার পাননি তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার কাজীর দেউরীর নূর হোসেন চৌধুরীর ছেলে মোশারফ হোসেন চৌধুরী সৌদি আরবে দীর্ঘ দিন ধরে চাকরি করছেন। সেখানে থেকেই দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ থেকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের শেখ মুজিব রোডে অবস্থিত ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ হাউজে যোগাযোগ করেন। তখন ফার্স্ট সিকিরিটিজ তাকে একটি কোড নম্বর (৮৩৩) খুলে দেয়। ওই কোড নম্বরের অধীনে তিনি বিনিয়োগ শুরু করেন। পাশাপাশি তার বাবা নূর হোসেন চৌধুরীকেও একটি কোড নম্বর (৯৯২) দেয় সিকিউরিটিজ হাউজ কর্তৃপক্ষ। তিনিও এই কোডে শেয়ার ব্যবসা শুরু করেন ।
অথচ সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) নিয়ম অনুযায়ী বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্ট (বিও) ছাড়া শেয়ার লেনদেন করা যায় না। এই অ্যাকাউন্ট ছাড়াই দুই বিনিয়োগকারীর অজ্ঞতার সুযোগে অবৈধভাবে প্রায় দুই বছর ওই দুই কোড নম্বরে লেনদেন করে ফার্স্ট সিকিউরিটিজ।
এভাবেই চলছিল। কিন্তু ২০০৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাউজ কোডের বিপরীতে বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্ট (বিও) খোলার জন্য মোশারফ হোসেনকে বলা হয়। বিদেশ থেকে তারই অনুরোধে সিকিউরিটিজ হাউজ থেকে বিও অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া হয়। যার নম্বর ১৩০১০৩০০০০২৮৯৮২৮৯ ।
তবে তিনি বিদেশে থাকার কারণে তার নামে ওই অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতে সমস্যা হয়। এ কারণে তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটিজের কর্মকর্তা নূর হোসেনকে অ্যাকাউন্ট পরিচালনার জন্য ব্রোকারেজ হাউজ বরাবর অথরাইজ লেটার দেন। পরে হাউজ কোডের অনুকূলে মোশারফ হোসেন ও তার বাবার নামে যথাক্রমে ১৩০১০৩০০০০০৪৯৩৮৩ ও ১৩০১০৩০০০৫৫২১৬৯৫ নম্বরের দুটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে তাদের পক্ষে শেয়ার লেনদেন করেন ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ হাউজের কর্মকর্তা নূর হোসেন।
পরে ২০১১ সালের শেষ নাগাদ মোশারফ হোসেন চৌধুরী দেশে ফিরে নূর হোসেনের কাছে তার শেয়ারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাকে বরখাস্ত করেছে। সেই সঙ্গে জিএম কাউসার আল মামুনের নির্দেশে ব্রোকারেজ হাউজের অ্যাকাউন্টেন্ট মো. মামুনুর রহমান বিনা অনুমতিতে সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়। ২০১১ সালের ২১ এবং ২২ জুলাই আমাদের অ্যাকাউন্টে থাকা শেয়ার বিক্রি করে সব টাকা আত্মসাত করে।’
এরপর মোশারফ হোসেন ব্রোকারেজ হাউজ কর্তৃপক্ষের কাছে তার কোডের অনুকূলে শেয়ার লেনদেনের হিসাব জানতে চান এবং ফিনান্সিয়াল স্ট্যাটমেন্ট চাইলে শাখা ব্যবস্থাপক মামুনুর রহমান তাকে জানান, জিএমের নির্দেশ আছে, স্ট্যাটমেন্ট দেয়া যাবে না।
পরে সিএসইতে অভিযোগ করেন মোশারফ হোসেন। অভিযোগে বলা হয়, ২০১২ সালের ১২ এবং ২৭ ফ্রেব্রুয়ারিতে তিনি হিসাবরক্ষক মো. মামুনুর রহমানকে উকিল নোটিশ পাঠান। পরে বিদেশে চলে যাওয়ার কারণে এ ব্যাপরে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি বিএসইসি এবং সিএসই বরাবর আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরত চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু এখনো কোনো সুবিচার পাননি।
এ ব্যাপারে জানতে বিনিয়োগকারী মোশারফ হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘নূর হোসেনকে অথরাইজড করে দেই। কিন্তু তিনি বরখাস্ত হওয়ার পর ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তারা আমার শেয়ার বিক্রি করে দেয় বলে জেনেছি। পরবর্তীতে আমি নিজে হাউজের সাথে যোগাযোগ করলে আমাকে কোনো স্টেস্টমেন্ট দেয়া হয়নি। সম্প্রতি আমি দেশে ফিরে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জে আবারো আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য আবেদন করি। এর আগেও আবেদন করেছি। কিন্তু তাতে কোনো সুবিচার না পেয়ে হতাশায় ভূগছি।’
এ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে ব্রোকারেজ হাউজের তৎকালীন কর্মকর্তা নূর হোসেন বলেন, ‘২৮ জুন আমাকে অন্যায়ভাবে সাসপেন্ড করেন জিএম কাউছার আল মামুন। এই জিএম ছিয়ানব্বই সালে বড় ধরনের অর্থ কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত ছিলেন। বিষয়টি প্রমাণ হওয়ায় ১৯৯৭ সালে তিনি ১১ লাখ টাকার আন্ডারটেকিং দিয়ে চাকরিচ্যুত হন। ২০০৯ সালে আবার তিনি জয়েন করেন। এরপরও বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজের জন্য আমাদের অনুপ্রেরণা দিতেন। আমারা তার কথা মতো কাজ না করায় মাহফুজা সুলতানাসহ আমাকে সাসপেন্ড করেন। আমাকে সাসপেন্ড করার কিছুদিন আগেই জিএম এবং হিসাবরক্ষক মামুনুর রহমান মিলে সিএসইর ডিপি থেকে মোশারফ হোসেনের শেয়ার বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।’
এই অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজ নিতে সিকিউরিটিজ হাউজের চট্টগ্রাম শাখায় ফোন করে হিসাবরক্ষক মামুনুর রহমানকে চাইলে ট্রেডার ডনেল বাড়ুই ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘স্যার খুব ব্যস্ত, তিনি ট্রেনিংয়ে আছেন। পরে ফোন করেন।’
তার কথা মতো পরে ফোন করলে আশিক নামের একজন রিসিভ করেন। তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্রোকারেজ হাউজের কাস্টমার রিলেশন অফিসার। বলুন কী সমস্যা?’ আপনাদের হিসাবরক্ষক মামুনুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে চাই জানালে তিনি বলেন, ‘একটু আগে ডনেল বাড়ুই ফোন রিসিভ করেছিল। তিনি এখন বাইরে আছেন। তার অনুমতি ছাড়া আমি হিসাবরক্ষক স্যারের সাথে কথা বলতে দিতে পারবো না।’
পরে মামুনুর রহমানের মোবাইলে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে পারবো না। কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেন।’ এই বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
এর আগে হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজোয়ান বিন ফারুকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘সমস্যাটি আমাকে ইমেইল করুন।’ পরে তাকে ফোন করলে তিনি আর রিসিভ করেনি।
এরপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এনেক্স ভবনে ৪র্থ তলায় অফিসে সশরীরে গেলে জিএম কাউসার আল মামুন বলেন, ‘যত সমস্যা আমার নিকট বলুন।’ চট্টগ্রামের বিনিয়োগকারী মোশারফ হোসেন চৌধুরী বিষয়ে কথা বলতে চাই জানালে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমার এক ভাগ্নে জাতীয় প্রেসক্লাবের মেম্বার, একটি শীর্ষ ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক আমাদের এমডি সাহেবের আত্মীয়। অতএব সাংবাদিক সমাজ আমাদের হাতের মুঠোয়। এ বিষয়ে কোনো রিপোর্ট করার কথা চিন্তা করলে বিপদে পড়ে যাবেন। এ বিষয় নিয়ে আমরা দুদকে কাজ করছি।’ এই পর্যন্ত বলে তিনি থামলেন।
তখন জানতে চাওয়া হয়, দুদকের কোন কর্মকর্তা এ বিষয়টি দেখছেন। তিনি বলেন, ‘দুদকে পারসো করতে হয়। এখনো ফাইল পড়ে আছে, পারসো করলে তদন্ত শুরু হবে।’
মোশারফ হোসেন চৌধুরীর তো আপনাদের হাউজে ট্রেড করতেন? তিনি বলেন, ‘মোশারফ হোসেন চৌধুরী একটি কোডের বিপরীতে ট্রেড করতেন। কিন্তু তার কোনো বিও অ্যাকাউন্ট ছিল না। তাই তিনি আমাদের লিগ্যাল কোনো বিনিয়োগকারী না।’
বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। কাউসার আল মামুন বলেন, ‘মোশারফ হোসেনের ট্রেড কোড থাকলেও বিও অ্যাকাউন্ট ছিল আমাদের কর্মকর্তা নূর হোসেনের স্ত্রীর নামে। ওই বিও অ্যাকাউন্টে তার শেয়ার লেনদেন করা হতো। এক পর্যায়ে সিএসইর ডিপিতে নূর হোসেন চৌধুরী মোশারফ হোসেন চৌধুরীর শেয়ার অন্য ব্রোকারেজ হাউজে বিক্রি করে দেয়। এরপর মোশারফ হোসেনের শেয়ার আমরা ফিরিয়ে এনে তা আমাদের নিজস্ব কোডে রেখে দিয়েছি। মোশারফ হোসেনের শেয়ার আমরা বিক্রি করিনি। তার শেয়ার আমাদের কোডে রয়েছে।’
তাহলে মোশারফ হোসেনকে শেয়ার লেনদেন করতে দিচ্ছেন না কেন? তখন তিনি বলেন, ‘আসলে তিনি তো লিগ্যাল বিনিয়োগকারী না। তাই তাকে শেয়ার বিক্রি করতে দিচ্ছি না। এ বিষয়ে সিএসই এবং বিএসইসি সব জানে।’
মোশারফ হোসেনের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক বলেন, ‘এ অভিযোগটি সিএসইর নজরে আসেনি। অভিযোগ সত্য হলে ব্রোকারেজ হাউজটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গোলাম ফারুক খুব সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন।