নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কাউন্সিলের (ওআইসি) মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বিগত বিএনপি জামায়াত সরকার যাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিল সে একজন যুদ্ধাপরাধী। প্রথম পর্যায়ে সে পেয়েছিল মাত্র এক ভোট এবং পরের পর্যায়ে সে নিজের ভোট ছাড়া অন্য কোনো ভোট পায়নি।
দশম জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মো. রুস্তম আলী ফরাজীর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিপিএ ও আইপিইউয়ের মতো দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে বাংলাদেশ জয়লাভ করেছে। এটা শুধু বর্তমান সরকারের বিজয় না, এটা পুরো বাঙালি জাতির বিজয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আস্থা আছে বলেই তারা এই দুটি পদে বাংলাদেশকে বিজয়ী করেছে। এ ধরনের নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকা প্রয়োজন। আমরা যোগ্য দুজন ব্যক্তিকে মনোনয় দিয়েছিলাম বলেই তারা বিজয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছে।’
এর আগে মো. রুস্তম আলী ফরাজীর এক তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার (আইপিইউ এবং সিপিএ) প্রধান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এটাই নিশ্চিত হয়েছে যে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের পুরোপুরো আস্থা রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো কোনো মহলের নেতিবাচক প্রচারণা সত্ত্বেও বাংলাদেশের দুজন জনপ্রতিনিধিদের আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্বাচিত হওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সৌহাদ্যপূর্ণ ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ভিত্তি ক্রমশই আরো জোরদার হচ্ছে।’
অধ্যাপক আলী আশরাফের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব সময় বেধে দিচ্ছেন আন্দোলনের মাধ্যমে নাকি আমাদের উৎখাত করবে। কিন্তু তাদের এমন আন্দোলন জনগণের সমর্থন পাচ্ছে না। এতে বোঝা যায় আল্লাহর অশেষ রহমতে বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে।’
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ভিত সুদৃঢ় হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে অঙ্গীকার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাজা কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি বোধ করছেন বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ কে এম রহমতুল্লার এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অঙ্গীকার করেছিলাম যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার করা হবে। চিহ্নিত মানবতাবিরোধীদের বিচারের মাধ্যমে উচিৎ সাজা নিশ্চিত করলে শহীদের আত্মা শান্তি পাবে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তৃপ্ত হবেন। ১৯৯১ সালেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আমি দাবি তুলেছিলাম এবং শহীদদের মা’দের নিয়ে দাবি বাস্তবায়নে সংগ্রাম করেছিলাম। আজ সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে সাজা কার্যকর শুরু হয়েছে এজন্য আমি স্বস্তি বোধ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবতাবিরোধীদের বিচারের জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বিচার কক্ষে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেয়ায় বিচার কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানের করা হয়েছে। এজন্য ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে বাংলাদেশের চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একমাত্র বাংলাদেশেই যুদ্ধাপরাধ আইনে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বাইরে দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি ও বাদী পক্ষের আপিল করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। মানবতাবিরোধীরা তাদের পক্ষ অবলম্বনকারী গোষ্ঠিসমূহের ব্যাপক আন্তর্জাতিক প্রপাগান্ডা এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন লবিস্ট গ্রুপের পেছনে ব্যয় করা সত্ত্বেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসমূহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ইতিবাচক মতামত প্রদান করেছে।’