নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থ আত্মাসাৎ ও প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমবাসীরা।
শনিবার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তারা মানববন্ধন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানায়। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনাও করা হয়েছে।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া নিঝুমদ্বীপবাসীর অভিযোগ, ডাকাত দলের নিয়ন্ত্রক ও হাতিয়ার দাদা খ্যাত সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী হাতিয়া উপজেলার ১১নং নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দাপ্তরিক কাজে বাধা দিয়েছেন। স্বপরিবারে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া ছাড়াও কথিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিনের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে ইউনিয়নের যাবতীয় বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
সাবেক ওই এমপির প্রাণনাশের হুমকিতে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী একাই ২০১৩-১৪ সালে সরকারি বরাদ্দের সবই আত্মসাৎ করেছেন-এমন অভিযোগ তুলে ১১নং নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, মোহাম্মদ আলীর ভাইয়ের পক্ষে উপজেলা নির্বাচনে কাজ না করায় তিনি আমাকে ইউনিয়ন পরিষদের কোনো কাজ করতে দেন না। সব মেম্বারকে দেয়া বরাদ্দ তিনি নিজেই তুলে দেন। যা কোনোভাবেই বিধি সম্মত নয়। এর প্রতিবাদ করলে এক পর্যায়ে তিনি আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আমাকে ও পরিবারকে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেন।
চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন আরো বলেন, আমি ও আমার মেম্বারদের কেউই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি না। কথিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিন সব কাজ পরিচালনা করে আসছেন। মোহাম্মদ আলী প্রশাসনকেও কোনো তোয়াক্কা করেন না। তার ভয়ে থানা পুলিশও তটস্থ।
তবে মেহেরাজ উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজনের নিরাপত্তার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে থানা থেকে তা গ্রহণ করা হয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
অসহায় চেয়ারম্যান ইউপি সদস্যরা মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তারসহ যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- নিঝুমদ্বীপের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম, ২নং ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন ও ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য শাহেদ উদ্দিন প্রমুখ।
এর আগে গত ১৯ নভেম্বর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একই অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান মো. মেহেরাজ উদ্দিনসহ ইউপি সদস্যরা।
সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী এক বছর ধরে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধা দিচ্ছেন অভিযোগ তুলে তারা জানান, তার হুমকির কারণে নিরাপত্তাহীন বোধ করায় চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা উপজেলাতেও যেতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে তারা প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস বর্তমানে বর্তমানে নোয়াখালী-৬ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি। তার ভাই লিটন উপজেলা চেয়ারম্যান, মামা রাজু আহমেদ ভাইস চেয়ারম্যান।
এসব কারণে মোহাম্মদ আলী ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন ও তার ভয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা উপজেলায় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়।