সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি : দেশের ভয়াবহ তাজরীন পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনো আহত শ্রমিকদের ভাগ্যে মেলেনি ক্ষতিপূরণ। ক্ষতিপূরণের আশায় শ্রমিক সংগঠন, বিজিএমইসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে আজ তারা ক্লান্ত। ভালো নেই সেদিনের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আহত শ্রমিকরা।
শারীরিক যন্ত্রণা আর অর্থাভাবে ধুকে ধুকে মরছে তারা। তবুও মিলছে না ক্ষতিপূরণ। বিজিএমইএ তাদের ছকে নামমাত্র ক্ষতিপূরণ দিলেও তা থেকে বাদ রয়েছে অনেকে আহত শ্রমিক।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশন নামে একটি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হতাহত হয় কয়েকশ শ্রমিক। সরকারি হিসেবে ১১৪ জন শ্রমিকের জীবনের আলো নিভে যায় আর আহত হয় তিন শতাধিক। যদিও সরকারের এ হিসেবের উপর আস্থা রাখেনি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলো। ঘটনার পরপর সরকার ও বিজিএমইএ এর শীর্ষ কর্তারা আহত ও নিহত শ্রমিকদের শ্রমআইন অনুসারে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করেনি। শ্রম আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা, অনেকেই আজও সামান্যতম ক্ষতিপূরণও পায়নি।
ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে কথা হয় তাজরিন পোশাক কারখানার শ্রমিক মাহিনুরের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০১০ সালের মে মাসে স্বামী আল-আমিনকে সঙ্গে নিয়ে যোগদান করে তাজরিন ফ্যাশনে। স্বামী-স্ত্রীর উপার্জনে ভালোই চলছিল তাদের ছোট্ট সংসার। দুইজনের চোখেই বুনছিল রঙ্গিন স্বপ্ন। হঠাৎ একটি আগুনই নিভিয়ে দিল স্বপ্ন। ওইদিন কারখানাটির চার তলায় কাজ করছিলেন তারা। আগুনের লেলিহান শিখা দেখেই লাফিয়ে রক্ষা পান। তবে শরীরিকভাবে মারাত্মক আহত হন। সেই জখম আজও বয়ে বেয়াচ্ছে তারা। একাধিকবার কয়েকজন নাম-ঠিকানা লিখে নিলেও ক্ষতিপূরণ কিছুই মেলেনি তাদের। শুধু কারখানার তিন মাসের বেতন ছাড়া আর কিছুই পায়নি মাহিনুর ও আল-আমিন।
ওই কারখানায় কাজ করতেন রংপুর মিঠাপুরের জালালপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী আঁখি। জীবনের চাকা ঘুরাতে এসে কাজ নিয়ে ছিল তাজরিন ফ্যাশনে। নিষ্ঠুর আগুনের থাবায় আজ তিনি পঙ্গুত্ব বরণ করে নিয়েছেন। বিজিএমইএ এর কাছ থেকে এক লাখ টাকা পেয়ে তা চিকিৎসায় ব্যয় করে ফেলেছেন। অর্থের অভাবে মেয়ে শামীমা পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। খেয়ে না খেয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
কুমিল্লার মুরাদনগরের মেয়ে লিপি। সুইং অপরেটর হিসেবে কাজ করতেন তাজরিন ফ্যাশনে। সেদিন অনেকের সঙ্গে তিনিও আহত হন। এরপর থেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। নামমাত্র কিছু টাকা পেলেও তা খরচ হয়ে যায় হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে। অভাবকে সঙ্গী করেই চলছে তার জীবন। শুধু মাহিনুর, আঁখি আর লিপি নয়, এমন অনেক পরিবারেই নেমে এসেছে অভাব। জীবনের চাকা যেন উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে তাদের।
ক্ষতিপূরণ নিয়ে ক্ষোভ জানান বাংলাদেশ সেন্ট্রাল ফর ওয়ার্কার সলিডারেটির আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহীম। তিনি জানান, আহত শ্রমিকদের যে টাকা দেয়া হয়েছে তা খুবই কম। তাও আবার অনেকের ভাগ্যে মেলেনি। আর যারাও পেয়েছে তারা ঘর ভাড়া, চিকিৎসা খরচ দিয়েই শেষ হয়ে গেছে। অনেক শ্রমিক পরিবারেই না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তাই সরকারের উচিত এসব অসহায় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর।