নিউজ ডেস্ক : পারস্পরিক মতপার্থক্য দূর করে জনগণের জন্য কাজ করতে সার্ক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সার্ক অঞ্চলের মানুষের জীবনে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে এবং সার্ককে গতিশীল করে জোটকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার সকালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হওয়া দু’দিনের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি। খবর বাসস ও অন্যান্য এজেন্সির।
বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে ভাষণ দেয়া শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশগুলোতে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সবার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করার ওপর মনোযোগ দেয়া উচিত।’
দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব পদক্ষেপের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।’
আট দেশের এই জোটকে আরো গতিশীল করতে আরো বাস্তবসম্মত, কার্যকর ও পারস্পরিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সামষ্টিক লক্ষ্য নির্ধারণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষের কল্যাণের জন্য অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে তিন দশক আগে সার্কের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু পেছনে ফিরে তাকালে মনে হতে পারে, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার তুলনায় এ জোটের প্রাপ্তি অনেকটাই ম্লান। তারপরও আমি আশাবাদী, আমাদের সামষ্টিক রাজনৈতিক ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সার্ক সক্ষম হবে।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য সব মতপার্থক্য দূরে ঠেলে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে এবং এ অঞ্চলের মানুষের সত্যিকারের অগ্রগতির জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’
সার্ক অঞ্চলের সব জনগণের জন্য খাদ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সার্ক ফুড ব্যাংক ও সিড ব্যাংক নির্মাণে গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দারিদ্র্য নির্মূলে প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদন, অভ্যন্তরীণ মৎস ও প্রাণিজ সম্পদ উৎপাদন, কৃষিতে পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের কথা উল্লেখ করে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উদ্ভাবনীমূলক শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পর্যায়ে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সার্বিক শান্তি, উন্নতি ও স্থিতিশীলতার জন্য পরস্পরের মধ্যে ভৌত ‘কানেকটিভিটি’ গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক মোটরযান পরিবহন চুক্তি ও রেল পরিবহন চুক্তি স্বাক্ষর দ্রুতগতিতে হলে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে।’
টেকসই উন্নয়নের জন্য সার্ক অঞ্চলের ব্লু ইকোনমি তথা সমুদ্র অর্থনীতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সমন্বিত সহযোগিতায় বিশ্বাস করে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নন-ট্যারিফ ও প্যারা ট্যারিফ বাধা দূরীকরণের আহ্বান জানান।
‘শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’- এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়েছে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের মূল পর্ব।
ভ্রীকুটি মণ্ডপে রাষ্ট্রীয় সভাগৃহে শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ও সার্কের বিদায়ী চেয়ারপারসন আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম। তার সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা প্রদীপ প্রজ্বলন করেন।
জোটের বিদায়ী চেয়ারম্যান মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ুম কাঠমান্ডু সম্মেলনের উদ্বোধনী ঘোষণা করে রীতি অনুযায়ী এবারের স্বাগতিক দেশ নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
এরপর জোটভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানরা একে একে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।